রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৬:৩৯
ব্রেকিং নিউজ

দিনাজপুর ঘোড়াঘাটে অধিক ফলনশীল বিনা-১৭ ধানের নমুনা শস্য কর্তন

দিনাজপুর ঘোড়াঘাটে অধিক ফলনশীল বিনা-১৭ ধানের নমুনা শস্য কর্তন

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে দেশের কৃষি বিভাগের উদ্ভোবন করা নতুন ভ্যারাইটি চিকন আমন ধান বিনা-১৭ ধান নমুনা হিসেবে চাষ করা হয়। সেই ধান পেকে যাওয়ায় এখন কাটা হচ্ছে। দেখা গেছে হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ৫ দশমিক ৫ টন।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, দিনাজপুর ঘোড়াঘাট উপজেলার পৌরসভা ব্লকে ঘোড়াঘাট কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে নুরজাহানপুর গ্রামের কৃষক মো, ইসমাইল রবিউল্লাহর জমিতে বিনা-১৭ ধানের নমুনা শস্য কর্তন করা হয়। এ ধান কাটার সময় গতকাল মাঠে উপস্থিত ছিলেন, দিনাজপুর কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তর এর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোছা. খাদিজাতুল কুবরা, কৃষি সম্প্রারণ কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোছা. রেবেকা সুলতানাসহ প্রমুখ।
সুত্রটি জানায়, দেশের কৃষি গবেষণা বিভাগের নতুন উদ্ভোবন করা বিনা-১৭ ধান চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে কৃষক। ধানের রোগ-বালাই না থাকায় এবং আগাম ধান পাকায় কৃষকরা সহজে এ ধান ঘরে তুলতে পারছে। আগাম ধান কাটার ফলে ওই জমিতে রবি শস্য চাষের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ফলে একই জমিতে বছরে তিন ফসল চাষ করা সম্ভব হবে।
জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান জানান, গত ২০১৭ সাল থেকে এই  উপজেলা কৃষি বিভাগ দেশীয়ভাবে উদ্ভাবিত বিনা-১৭ ধান চাষে কৃষকদের বিভিন্নভাবে প্রণোদনা ও উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। এ ধান অনেকটা জিরাশাইল ধানের মত সরু। ভাত খেতে খুবই সুস্বাাদু। উচ্চ ফলনশীল ও খরা সহিঞ্চু এ জাতের ধান বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য বিশেষ উপযোগী। বিশেষ করে এ ধান চাষ করতে ২০-৩০ ভাগ সার এবং ৩০ ভাগ পানি খরচ কম হয়। এছাড়া ধানগাছ খাটো হয় এবং খুব শক্ত হওয়ার কারণে ঝড়ে ধানগাছ হেলে পড়ে না। অন্যান্য ধানের তুলনায় এ জাতের ধান গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। সবচেয়ে বড় গুন এ জাতের ধান আগাম পাকতে থাকে। মাত্র ১১০-১১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা যায়। আশ্বিন মাসের শেষে ও কার্তিক মাসে মধ্যে এ ধান পাকতে থাকে। এ সময় পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক পাওয়া যায়। ফলে কৃষক অল্প খরচে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারে। ধান গাছের খড় গো-খাদ্য হিসেবে মাঠ থেকে বিক্রি হয়। ধান কাটার পর কৃষক ওই জমিতে হালচাষ করে রবি শস্য বিশেষ করে আলু, সরিষা ও গম চাষের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়। এক কথায় একই জমিতে বছরে তিন ফসল পেতে কৃষকগণ বর্তমানে বিনা-১৭ ধান চাষে ঝুঁকে পড়ছে।
ঘোড়াঘাট উপজেলার নুরজাহানপুর গ্রামের কৃষক মো. ইসমাইল রবিউল্লাহ বলেন, ৫ একর জমিতে তিনি বিনা-১৭ জাতের ধান চাষ করেছেন। বর্তমানে ধান কাটার উপযোগি হয়েছে। গতকাল তার জমির ধান নমুনা শস্য কর্তন করা হয়েছে। এতে দেখা যায় একর প্রতি ৬৫ থেকে ৭০ মণ হারে ফলন হয়েছে। আশাকরি ১ সপ্তাহের মধ্যে জমির সব ধান কাটতে পারবো। ধান কেটে ওই জমিতে রবি শস্য হিসেবে সরিষা অথবা আলু চাষ করবো। ফলে বছরে তিনি একই জমিতে ৩ ফসল চাষ করতে পারবেন। এ ধানের নমুনা কর্তন করে দেখা গেছে হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ৫ দশমিক ৫ টন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, ঘোড়াঘাট উপজেলার ১১ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে। এ এলাকার কৃষকগণ অধিকাংশ জমিতে ভারতের রঞ্জিত এবং গুটি স্বর্ণা ধান চাষ করে। কিন্তু অধিক ফলন ও কম খরচের জন্য বিনা-১৭ ধানের ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে কৃষকদের মধ্যে। বিনা-১৭ জাতের ধানের রোগ বালাই নেই বললেই চলে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। তাছাড়া মাত্র ১১০ দিন থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা সম্ভব। সার ও সেচে প্রায় ২০-২৫ ভাগ কম খরচ হয়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উঠোন বৈঠক, হাট-বাজার সভা এবং গ্রুপ ভিত্তিক কৃষক সমাবেশ, গ্রাম কৃষক বন্ধু প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা, লিফলেট বিতরণ, কৃষি প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের এ ধান চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে এলাকার কৃষকগণ এ ধানে চাষে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে।
ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি সম্প্রারণ কর্মকর্তা জানান, এ বছর ঘোড়াঘাট উপজেলায় মোট ৪৮০ হেক্টর জমিতে বিনা-১৭ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬০ হেক্টর জমিতে এই ধান চাষ হয়েছে। উপজেলার পৌরসভায় ৯০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৯০ হেক্টরই এই ধান চাষ হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান মিয়া জানান, আগামী মৌসুমে এই ধান জেলার ১৩টি উপজেলাতে চাষের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ঘোড়াঘাট উপজেলা যে বিনা-১৭ ধান অর্জিত হয়েছে। এখান থেকে কৃষি বিভাগ বীজ ধান সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই বীজ ধান জেলার ১৩টি উপজেলাতে আগামী আমন মৌসুমে বিনা ১৭ ধান চাষে কাজে লাগানো হবে।
উত্তরণবার্তা/ডেল

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ