শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৪:৩৪
ব্রেকিং নিউজ

শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে লুমিনারি

শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে লুমিনারি

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : শিক্ষা যেখানে একটি জাতির মেরুদণ্ড, সেখানে অনেক শিশুই এটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর মূল কারণ পারিবারিক অসচ্ছলতা ও সঠিক দিক-নির্দেশনার অভাব। আলোকিত দেশ গঠনে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সমাজের অধিকার বঞ্চিত এইসব শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) একঝাঁক উদ্যমী তরুণ প্রতিষ্ঠা করেন বিনামূল্যে পাঠদান প্ল্যাটফর্ম ‘লুমিনারি’। মননশীল মানসিকতা আর মানবতার টানে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলো দিতে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।

‘প্রতিটি শিশু মানুষ হোক আলোর ঝর্ণাধারায়’ স্লোগানে প্রায় নয় বছর ধরে প্রশংসার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন লুমিনারি। যার মূল উদ্দেশ্য ছিলো সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত শিশুদের শিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি সঠিক দিক-নির্দেশনা দেয়া। দিনে দিনে লুমিনারির কলেবর বেড়েছে কয়েকগুণ। মাত্র সাতজন সুবিধাবঞ্চিত শিশু নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তাদের রয়েছে ১২০ জনের অধিক শিক্ষার্থী । সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার পাঠদান কার্যক্রম চালায় তারা।

লুমিনারিতে গিয়ে প্রথমেই নজরে পড়ে আনন্দে ছুটে বেড়ানো, স্বতঃস্ফূর্ত অধ্যয়নরত এক ঝাঁক শিক্ষার্থী। বিকাল ৩টা থেকে পাঠদান শুরু হয় চলে সন্ধ্যা অবধি। শুধু পাঠ্যদান নয় নিজ অর্থায়নে এসব শিশুদের বই, খাতা, কলম, পেন্সিল এমনকি নাস্তারও ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও শিশুদের মানসিক বিকাশ সাধনে আয়োজন করে থাকেন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবিতা আবৃত্তি, অংকনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা । শুধু সুবিধা বঞ্চিতরাই নয়, অর্থের অভাবে কোচিং বা প্রাইভেট পড়তে না পারা এমন শিশুও এখানে বিনামূল্যে পাঠদান নিচ্ছে।

পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এছাড়া দেশপ্রেম, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি , মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়। অভিভাবকদের আকর্ষণ বৃদ্ধির জন্য প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে যায় লুমিনারি সদস্যরা। অভিভাবকদের পছন্দমতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে ভর্তি করাতে সহায়তাও করেন তারা। এছাড়া ঈদে উপহার সামগ্রী, শীতবস্ত্র ও গাছের চারা বিতরণ করে সংগঠনটি।

লুমিনারির সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া পান্না বলেন, লুমিনারি ২০১৫ সাল থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এখানে শিশুদের নিয়মিত পাঠদান এর পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলো শিখানো হয়। প্রথমে আমাদের সংগঠনটি সাতজন শিশু নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। বর্তামানে আমাদের শিক্ষার্থী শতাধিক।

তিনি বলেন, এখানে একটা সময় ছিলো আশেপাশে এলাকার শিশুদের মধ্যে খুব জড়তা কাজ করতো। ওরা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক কিছুতে অংশগ্রহণ করতে চাইতো না। কিন্তু এখন ওদের মধ্যে জড়তা অনেকটাই কমে গেছে। চিত্রাংক, গান,আবৃত্তি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, খেলাধূলাতে শুধু লুমিনারী না, ওদের বিদ্যালয়েও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করছে। পাশাপাশি শিক্ষাক্রমেও সুনাম অর্জন করছে।

তিনি আরও বলেন, কথায় আছে শিশুরা যেখানে জড়ো হয় সেখানেই আনন্দ বয়। লুমিনারীতে বাচ্চাদের শিখানো হয় কিভাবে আনন্দের মাধ্যমে পড়াশোনায় এগিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট কক্ষের অপ্রতুলতায় বিভিন্নরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সংগঠনটির। আশা করি লুমিনারীর প্রতিটি শিশু বেড়ে উঠুক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে।

লুমিনারির সভাপতি আশিকুল ইসলাম আরিফ বলেন, আমরা নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসের আশেপাশের গ্রামগুলোর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেই। এছাড়াও তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা,পড়াশুনার প্রতি আগ্রহী করে তোলা, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, শিশু শ্রম ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং শিশুদের স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস গড়ে জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা ও শিশুদের পাঠদানের জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় আমাদেরকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে লুমিনারির কার্যক্রম পরিচালিত হলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হবে।
উত্তরণবার্তা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK