রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০০:৫১
ব্রেকিং নিউজ

দেবীর বিদায়ের আগে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠলেন নারী ভক্তরা

দেবীর বিদায়ের আগে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠলেন নারী ভক্তরা

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : দেবীর বিদায়ের দিনে পুরান ঢাকার পূজামণ্ডপগুলোতে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছেন নারী ভক্তরা। জীবনকে রঙিন করে রাঙিয়ে তুলতে প্রতিটি পূজামণ্ডপে ছিল নারীদের সিঁদুর খেলার উৎসব। এ সময় ঢাকের বাদ্যে পরিবেশ হয়ে ওঠে আনন্দমুখর। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহাদশমী আজ। পুরান ঢাকায় একযোগ রাতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। পূজামণ্ডপগুলোতে এখন বাজছে দেবীর বিদায়ের ঘণ্টা।
 
ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার বিদায়ের বেলায় ভক্তদের মাঝে সর্বত্র বিষাদের সুর লক্ষ করা গেছে। পাশাপাশি আজকের দিনে দেবী দুর্গা মহিসাসুরকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করায় বিজয়ের আনন্দে মেতেছেন ভক্তরা। একদিকে বিদায়ের বেদনা অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দে বিজয়া দশমী উদযাপন করছেন ভক্তরা। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলেন, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গা আবার মর্ত্যলোক ছেড়ে স্বর্গলোকে যাবেন। পুরোহিতের বিদায়ী প্রণাম মন্ত্রের মাধ্যমে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে দর্পণ বিসর্জন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে মা-দুর্গাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়। বিদায়লগ্নে অনেক ভক্তরা অশ্রুসিক্তে কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা যায়। অন্যদিকে দেবীর বিদায়ের শুভক্ষণে সিঁদুর খেলায় মেতেছেন বিবাহিত নারীরা।

ভক্তরা প্রথমে সারিবদ্ধভাবে দেবী দুর্গাকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। পরে একে অন্যের সিঁথিতে পরিয়ে দেন লাল সিঁদুর। ভক্তরা বলেন, মা দুর্গা অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করতে এই ধরায় এসেছিলেন। পাঁচ দিন থেকে আজ চলে যাচ্ছেন। এটা তাদের জন্য বেদনার একটি দিন। তবে তারা মায়ের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়েছেন। দশমীর দিনে দুর্গা মাকে মিষ্টিমুখ করানো ও পান-সুপারি খাওয়ানো হয়। এরপরে সিঁদুর উৎসবে মেতেছেন নারীরা।

রাজধানীর ওয়ারী পূজামণ্ডপে সিঁদুর খেলায় অংশ নেয়া মণি সরকার বলেন, ‘এই উৎসব মূলত হিন্দু বিবাহিত নারীদের। স্বামীর দীর্ঘ জীবন কামনায় এই সিঁদুর খেলা খেলে থাকেন নারীরা। এবারের আয়োজন সব মিলিয়ে খুব ভালো হয়েছে। দেবীর বিদায়ে আমাদের সিঁদুর খেলায় যেন অন্য রকম এক ভালোবাসা ফুটে ওঠে। এই দিনের জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি। আগামী দিনগুলো রঙিন হয়ে ওঠে যেন আমাদের জীবনে। দেবী মায়ের কাছে সবার জন্য মঙ্গল কামনা করেছি।’

দেবীর পায়ে সিঁদুর মাখিয়ে দিচ্ছিলেন রানী বণিক। তিনি বলেন, ‘দেবী দুর্গার আজ বিদায়ের দিন। প্রতি বছর মা-দুর্গা আসেন অসুররূপী অপশক্তিকে বধ করতে। মায়ের বিদায়ের সুরে যেমন কষ্ট হচ্ছে তেমনি আবার আসবে বলে মনে সান্ত্বনা পাচ্ছি। মাকে মিষ্টিমুখ করিয়ে অন্যদের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়েছি। মার কাছে আগামী এক বছর স্বামী সংসারে যেন ভালো থাকি সেই প্রার্থনা করছি।’

শাঁখারিবাজারের পূজামণ্ডপে আসা শিপ্রা রায় জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বী বিবাহিত নারীদের সিঁদুর গুরুত্বপূর্ণ। দশমীর দিন তারা দেবী দুর্গার পায়ে সিঁদুর লাগিয়ে স্বামীর মঙ্গল কামনা করেন। যেন সারা বছর পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দে থাকতে পারেন। মায়ের কাছে সকলের শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন।

শাঁখারি বাজারের সংঘমিত্র পূজা কমিটির পুরোহিত জানান, দেবী দুর্গা অশুভ শক্তি অসুরকে দশম দিনে পরাজিত করে। সেটি পৌরাণিক কাহিনীতে বিস্তারিত বর্ণনা করা আছে। বিজয়া দশমীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি ভক্তকুলে বিজয়ের আনন্দ বিরাজ করছে। অন্যদিকে মায়ের বিদায়ের কালে প্রতিটি ভক্তের মনে বিষাদের বেদনা বিরাজ করছে।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK