সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৪:৫৯
ব্রেকিং নিউজ

মুন্নার নেতৃত্বে চলে অনলাইন জুয়া : র‌্যাব

মুন্নার নেতৃত্বে চলে অনলাইন জুয়া  : র‌্যাব

উত্তরণবার্তা ডেস্ক : ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বিদেশি বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম বাংলাদেশ থেকে পরিচালনা করছে একটি চক্র। এভাবে তারা প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রের মূল হোতা নিশাত মুন্নাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

 র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে র‌্যাবের সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর ও রাজধানীর মালিবাগ থেকে নিশাত মুন্না, কামরুল ইসলাম শুভ, সুমন ও নাজমুল হোসেন বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয় ১৬টি মোবাইল ফোন, ১৮টি সিম কার্ড।

তিনি জানান, দেড় বছর ধরে এ চক্রটি বাংলাদেশে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইট পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে বিভিন্ন বিদেশি জুয়ার সাইট পরিচালনার অন্যতম হোতা নিশাত মুন্না। তার নেতৃত্বে চক্রের ৭-৮ জন সদস্য বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের প্রচার, অ্যাকাউন্ট খোলা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন, হুন্ডির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে অর্থ পাঠানোর সাথে জড়িত ছিল।

খন্দকার আল মঈন জানান, মূলত ফুটবল বিশ্বকাপ, ক্রিকেট বিশ্বকাপ, আইপিএল, বিপিএল, বিভিন্ন ফুটবল লিগ/টুর্নামেন্ট ও অন্যান্য খেলাকে কেন্দ্র করে তরুণদের টার্গেট করে অনলাইন জুয়ার প্রচার করতো চক্রটি। এ চক্রের কেউ বিভিন্ন বিদেশি বেটিং সাইটের বাংলাদেশের প্রচার/মার্কেটিংয়ের কাজ করত; কেউ আগ্রহী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে দিত। আবার কেউ অ্যাকাউন্ট করা ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে হুন্ডির মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম পরিচালনাকারীর কাছে পাঠাত। তারা বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে এর সঙ্গে জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন, সরাসরি মানুষের কাছে বলার মাধ্যমে এই জুয়ার সাইটের প্রচার করত। বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী ব্যক্তিরা চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাকাউন্ট খুলত কিংবা তাদের পাঠানো লিংকের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলত। কোনো নতুন গ্রাহক চক্রের সদস্যদের মাধমে বেটিং সাইটে অ্যাকাউন্ট খুললে তারা কমিশন পেত।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) অনলাইন জুয়া বা বাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট বন্ধ করলে তারা ডোমেইন পরিবর্তন করে পুনরায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে জুয়া চালু করে। তারা নামে-বেনামে একাধিক সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে অনলাইন জুয়ার অর্থ সংগ্রহ করত এবং প্রাপ্ত অর্থ থেকে নিজেদের লভ্যাংশ রেখে অবশিষ্ট টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে জুয়ার প্ল্যাটফর্ম পরিচালনাকারীর কাছে পাঠাত। তারা নিজেদের প্রাপ্ত লভ্যাংশের টাকা দিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলত এবং লভ্যাংশের টাকা জুয়া খেলে নষ্ট করত।

নিশাত মুন্না ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়লয়ে তড়িৎ প্রকৌশলে অধ্যয়নরত। সে একটি ইউটিউব চ্যানেল এবং একটি ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন রোস্টিং/বিতর্কিত ভিডিও তৈরি করে প্রচার করত। দেড় বছর আগে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রুপের বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে অনলাইন জুয়ার প্রতি আসক্ত হয়। মুন্নার অনলাইনের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বেটিং সাইটের প্রসারের জন্য ভিডিও বানাতে তাকে দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সে অধিক অর্থ লাভের আশায় বিভিন্ন বেটিং সাইটের প্রচার ও অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হয়।

সে তার ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুকে ভিডিওতে বিভিন্ন অনলাইন জুয়া সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচার করত। সে তার প্রতিটি ভিডিওতে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেতো। পরবর্তীতে সে নিজেও অনলাইন জুয়ার কার্যক্রম শুরু করে। ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী ব্যক্তি তার সাথে যোগাযোগ করলে সে তাদেরকে অনলাইনে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার জন্য কামরুলের কাছে পাঠায়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি দেশে অবৈধ অনলাইন জুয়ায় উঠতি বয়সীদের আসক্তির বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে। র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে অবৈধ অনলাইন জুয়ায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থপাচারের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে প্রতিনিয়ত সাইবার নজরদারি করে।  
উত্তরণবার্তা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK