শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২১:৫৪

হাওরে কমছে দেশি মাছ

হাওরে কমছে দেশি মাছ

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : মৎস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল। জেলার ৬৪ হাজার ৩০৬ হেক্টর আয়তনের ১২২টি ছোটবড় হাওর থেকে প্রতি বছর মেলে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২২ হাজার মেট্রিক টন মাছ। এছাড়া প্রচুর শামুকঝিনুক উত্পন্ন হয় এ হাওরাঞ্চলে। তবে প্রতি বছরই হাওরের মাছ কমছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্থায়ী অভয়াশ্রম না থাকা, হাওরে ক্ষতিকর চায়না জালের ব্যবহার, পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন, ইজারা প্রথা, সেচ দিয়ে মাছ শিকার, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার এবং হাওরে শুষ্কমাসে পানিশূন্য হয়ে পড়ায় ক্রমেই এ মৎস্যভান্ডারে মাছের উত্পাদন কমছে। এদিকে হাওরে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বাপদাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন স্থানীয় জেলেরা।

জেলা মত্স্য অফিস সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জের হাওরে ৮০-১২০ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। হাওরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এ বছর জেলায় ৪৫টি বিলে নার্সারি করা হচ্ছে। যেখানে এক থেকে দেড় মাস বয়সি মাছের পোনা লালনপালন করে পুরো বিলে ছাড়া হবে। তাছাড়া জেলেদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। হাওরে ক্ষতিকর চায়না জালের ব্যবহার, পোনা ও ডিমওয়ালা মাছনিধন, সেচ দিয়ে মাছ শিকার ও জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বিভিন্ন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তারা। এগুলো ঠেকাতে নিয়মিত হাওরে অভিযান চালানো হচ্ছে।

নিকলীর ঘোড়াদীঘা হাওরের এক জেলে বলেন, ৩০ বছর যাবৎ আমি হাওরে মাছ ধরে জীবিকানির্বাহ করি। দিনদিন হাওরে মাছ কমে যাচ্ছে। এর মূল কারণ চায়না জাল। এই জালের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। হাওরে মাছের উৎপাদন বাড়াতে মৎস্য অভয়াশ্রমের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে।

জেলে আলীমুদ্দিন বলেন, প্রকৃত জেলেদের মধ্যে জলমহাল ইজারা দিতে হবে। হাওরের জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তাহলে হাওর আবার মাছে ভরে উঠবে। আরেক জেলে অখিল বর্মন বলেন, বৈশাখ থেকে আষাঢ় এই তিন মাস প্রতিবছর মাছ ধরা বন্ধ রাখতে পারলে অনেকাংশে মাছের বংশবিস্তার বৃদ্ধি পাবে। কারণ এ সময় মাছ ডিম ছাড়ে।

নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ বলেন, হাওরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে প্রতি বছরই সরকারিভাবে মাছ ছাড়া হয়। এই ছোট মাছগুলোই আমাদের কিছু জেলে চায়না জাল দিয়ে ধরে ফেলে। অবৈধ এসব জালের ব্যবহার বন্ধ করতে পারলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণেও হাওরে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

নিকলী উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কারণে হাওরে মাছের উত্পাদন কম হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া, কারেন্ট জালের ব্যবহার ও সম্প্রতি চায়না দোয়ারি জালের ব্যবহারের কারণে হাওরের মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কারেন্ট জাল ও চায়না জালের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। তাছাড়া যারা বিল ইজারা নেন, তারা যেন বিল সেচে মাছ না ধরে, সেই প্রচারণাও চালাচ্ছি। প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মত্স্য আইন বাস্তবায়নে কাজ করছি। জলমহাল প্রকৃত জেলেরা অর্থাৎ নিবন্ধিত জেলেরা পাচ্ছেন কি না, তা আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK