শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৬:০৬

ঐতিহ্য সংকটে মিরকাদিমের ধবল গরু

ঐতিহ্য সংকটে মিরকাদিমের ধবল গরু

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ধবল গরু’র খামারের সংখ্যা দিন দিনই কমছে। এ অবস্থায় কিছু প্রান্তিক খামারি ছোট পরিসরে আগলে রেখেছেন পূর্ব পুরুষদের সৌখিন এই ধবল গরু’র লালন পালন।অথচ ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা হিসেবে মিরকাদিমের ধবল গরু পুরান ঢাকার হাটে কোরবানির ঈদে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। শুধু মিরকাদিমের ধবল গরু বিক্রির জন্য পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জের গণি মিয়ার হাটের প্রচলন শুরু হয়েছিলো।

জানা গেছে, এক সময় মিরকাদিমের দুই শতাধিক খামারি কয়েক হাজার ধবল গরু লালন-পালন করে কোরবানির ঈদের আগে সেই হাটে নিয়ে যেতেন বিক্রির জন্য। এসব কিনতে দূর দুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ক্রেতারা। গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণের অসাধু প্রতিযোগিতাসহ নানা প্রতিকূলতায় এখন হারিয়ে যাচ্ছে মিরকাদিমের ঐতিহ্যবাহী ধবল গরু।

এখানকার ধবল গরুর খামারিরা জানান, বর্তমানে খামারির সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ১০/১২ জনে।এখন আর খামারিরা ধবল গরু নিয়ে দল বেঁধে রহমতগঞ্জের হাটে যান না খরচ বেশি হয় বলে। কিন্ত পুরান ঢাকার সৌখিন মানুষেরা মিরকাদিমের খামারে এসেই পছন্দ করে ধবল গরু কিনে নিয়ে যান।

এদিকে ঢাকা থেকে ধবল গরু কিনতে আসা আসাদ উল্লাহ বলেন, প্রতি কোরবানির ঈদে ধবল গরু কিনে থাকি।কারণ বাচ্চারা সাদা রঙের গরুগুলোকে বেশি পছন্দ করে থাকে।বর্তমানে যে অবস্থা মিরকাদিমে এসে বুঝতে পারলাম আগের মতো খামারিদের সংখ্যা নেই।পুরাতন খামারে গিয়ে দেখি সেখানে আর ধবল গরুর খামারটি নেই। তাই ক্ষানিকটা বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে আমাদের।এই ধবল গরু কিনতে এসে নানা জায়গায় ঘুরতে হচ্ছে।

অন্যদিকে ভিন্ন কথা বলেছেন কেরাণীগঞ্জের আব্দুছ সালাম। তিনি বলেন, আগে থেকে চুক্তি করে রাখায় ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। বরং ধবল গরু তরতাজা, কোনো রকম ভেজাল নেই। মিরকাদিমের ধবল গরুর খামারি করিম উদ্দিন জানান, খামারিদের নিজস্ব মিলে ভাঙানো খৈল, ভুসি, কুড়া, চালের গুড়া খাইয়ে পরম মমতায় নিজ সন্তানের মতো লালন পালন করা হয় এই ধবল গরু গুলোকে।

খামারের ভেতরের পরিবেশ রাখা হয় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। মিরকাদিমের এই ধবল গরুর চোখের পাপঁড়ি থেকে সারা শরীর সাদা হওয়ায় এই গরু-ধবল গরু নামে পরিচিত। বর্তমানে বাজারে ধবল গরুগুলো সাধারণত ২ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়ে থাকে। মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমুদ রঞ্জন মিত্র বলেন, মিরকাদিমের ধবল গরুর বিশেষত্ব এটাই যে, গরু লালন-পালনে কোনো ধরণের ইনজেকশন বা গরু মোটাতাজাকরণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়না। মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্য ধবল গরু বিলুপ্তির পথে। ধবল গরু’র সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
উত্তরণবার্তা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK