সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২০:৪১
ব্রেকিং নিউজ

সুদানের লড়াইয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে এক লাখ মানুষ: জাতিসংঘ

সুদানের লড়াইয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে এক লাখ মানুষ: জাতিসংঘ

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : সুদানে চলমান লড়াইয়ের কারণে ১ লাখ মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। লড়াই তৃতীয় সপ্তাহে গড়িয়ে যাওয়ায় মানবিক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার জাতিসংঘের এই সতর্কবার্তার মধ্যেও সুদানের রাজধানী খার্তুমজুড়ে আরেকদফা যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গোলা হামলা এবং বিস্ফোরণ ঘটে চলেছে।
 
দরিদ্র প্রতিবেশী দেশগুলো শরণার্থী সংকট সামলাতে হিমশিম অবস্থায় থাকায় সুদানের এই সংঘাত সীমান্ত সংকট তৈরির ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। লড়াইয়ের কারণে সাহায্য সরবরাহের পথগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এমনিতেই বাইরের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এর পূর্ব আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক মিখায়েল ডানফোর্ড বলেছেন, “ঝুঁকিটা হচ্ছে সংকটটা কেবল সুদানের হবে না। এটি হবে আঞ্চলিক সংকট।”
 
জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলেছেন, জাতিসংঘ ত্রাণ কর্মকর্তা মার্টিন গ্রিফিথ সুদান সফরের পরিকল্পনা করেছেন। মঙ্গলবারই সম্ভবত এ সফরে যাচ্ছেন তিনি। যদিও কখন যাবেন সেটি এখনও নির্ধারিত হয়নি। ডব্লিউএফপি সোমবার বলেছে, তারা সুদানের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অঞ্চলগুলোতে কাজ শুরু করছে। এর আগে লড়াইয়ে ডব্লিউএফপি’র কয়েকজন স্টাফ নিহত হওয়ার পর এই কাজ শুরু করছে তারা।
 
গত ১৫ এপ্রিলে সুদানে সশস্ত্র বাহিনী এসএএফ ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ এর মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে ৫ শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে হাজারো মানুষ। কিন্তু এখনও কোনও পক্ষই নতি স্বীকার করার লক্ষণ দেখাচ্ছে না। আবার কোনও পক্ষেরই দ্রুত জয়লাভের সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। এ লড়াইয়ে রাজধানী খার্তুম ও আশপাশের আবাসিক এলাকাগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতাল ও অন্যান্য পরিষেবা।
 
এমন পরিস্থিতিতে মানবিক ত্রাণ কাজ সহজ করতে দুপক্ষ প্রাথমিকভাবে ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়েছিল। সুদানের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তার আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই সুদানের সেনাবাহিনী এর মেয়াদ বাড়িয়ে আরেক দফায় ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর প্রতিপক্ষ আরএসএফও যুদ্ধবিরতি নবায়নে রাজি হয়।
 
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘসহ সুদানের প্রতিবেশী দেশগুলোর কূটনৈতিক চেষ্টার ফলে দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়েছিল। কিন্তু এর মেয়াদ শেষের আগে শনিবার সন্ধ্যাতেই খার্তুমে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হলে এ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায়।যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের জন্য এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করেছে। সর্বশেষ এই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ছিল রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত। তারপর আবার তা বাড়ানোর মধ্যেই ফের বিমান হামলা শুরু হয়েছে।
 
ঈদের সময়টিতে হাজার হাজার মানুষ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় পোর্ট সুদানে ভিড় করেছিল। ওই অঞ্চলে সাহায্যের জন্য বহু দেশে ঢুকতে এটিই প্রধান প্রবেশপথ। আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে দক্ষিণ সুদানের সীমান্তের কাছে কেনিয়া তাদের বিমানবন্দর এবং বিমানপোত ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলফ্রেড মুতুয়া।
 
বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা থেকে পোর্ট সুদানে পৌঁছানো ত্রাণ সরবরাহ সোমবার থেকে নিরাপদ পথে খার্তুমে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রায় ৮শ’ কিলোমিটার যাত্রাপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছতে পারবে এই ত্রাণ। যদিও মেডিসিনস সান্স ফ্রন্টিয়ারস বলেছে, তারা কিছু ত্রাণ সুদানে সরবরাহ করেছে। সুদানের ভেতরেও প্রায় ৩৩০,০০০ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ অভিবাসী সংস্থা। আরও হাজার হাজার সুদানি দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছে। বেশির ভাগই মিশর, চাদ এবং দক্ষিণ সুদানের সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে।
 
জাতিসংঘ সোমবার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, সুদানে সাময়িকভাবে বাস করা শরণার্থীরাসহ ৮ লাখ মানুষ দেশটি ছেড়ে যেতে পারে। গত ২ সপ্তাহে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ সুদানের সঙ্গেকার মিশর সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে।
উত্তরণবার্তা/এসএ
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK