মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০০:৩১

দাবদাহ কমতে পারে আজ থেকে

দাবদাহ কমতে পারে আজ থেকে

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : ‘রুদ্র বৈশাখের’ রুক্ষ রুষ্ট বিগ্রহ দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় গত ১১ দিন ধরে দাপট দেখাচ্ছে। প্রচন্ড গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। হাসঁফাঁস করছে প্রানিকূল। আকাশের দিকে চাতকের মত স্বস্তির বৃষ্টির অধীর প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে গ্রাম-গঞ্জ-শহর বন্দরের মানুষ। কংক্রিটের এই রাজধানীতে রেকর্ড করেছে তাপমাত্রা। গত ৭ এপ্রিল থেকে দেশ বৃষ্টিহীন। তবে গতকাল সিলেটসহ কয়েকটি জেলায় ছিটে ফোটা বারিপাত হলেও স্বস্তি আসেনি। তাতিয়ে আছে প্রকৃতি। কেবল উদায়স্ত নয়,রাতেও তাপদগ্ধ পরিস্থিতির নিষ্কৃতি নেই। এর মধ্যে গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ বুধবার থেকে দেশের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। তবে ২৩ এপ্রিল থেকে সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিসহ হাওড় অঞ্চলে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, আজ থেকে ঢাকার তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। ১৯-২০ এপ্রিল দেশের সিলেট,সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। তবে ২৩ এপ্রিল থেকে সিলেট সুনামগঞ্জসহ হাওড় এলাকায় ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ২৩ এপ্রিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা,চাঁদপুর অঞ্চলের কোন কোন এলাকার ওপর দিয়ে বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সে হিসাবে ঈদের আগে গরম থেকে মুক্তি মিলছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বিরাজ করছে। তাই দীর্ঘ দাবদাহের পর আবার ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঢাকা শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত যানবাহন, ঘরে ঘরে এয়ারকন্ডিশনিং-এর তাপ এবং নির্মাণকাজের ফলে সৃষ্ট তাপ অন্যতম প্রধান কারণ বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, একারণে হয়তো ঢাকার পাশের মানিকগঞ্জে জেলাতেই তাপমাত্রা ঢাকার চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি কম। কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের হাওর অঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোর সব ধান ২৫ এপ্রিলের মধ্যে কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন,২৩ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় ১০ দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলগুলো। ফলে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের হাওর এলাকায় পাহাড়ি ঢল নামার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখ থেকে মে মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ২ টি শক্তিশালি পশ্চিমা লঘু চাপ বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে যার কারণে শক্তিশালি কালবৈশাখী ঝড়, তীব্র বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির হতে পারে।

এদিকে গতকাল আবহাওয়ার বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে দেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া আগামীকালের মধ্যে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আবহাওয়াবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিন ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার বাতাসে আর্দ্রতা বাড়বে। ফলে গরমের কষ্ট বাড়তে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার এবং পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন। আবহাওয়াবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টির জন্য যে মেঘমালার দরকার, সেই মেঘ সৃষ্টি হতে পারছে না। শীতের হাওয়া এবং এ সময়ের তপ্ত হাওয়া-দুই-ই ভারতের উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বিহার হয়ে বাংলাদেশের দিকে আসে। এটি বাংলাদেশের চূয়াডাঙ্গা, যশোর অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই প্রবাহের সঙ্গে তৈরি হওয়া মেঘও আসতে চাইছে। কিন্তু তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বিহার হয়ে আসা মেঘ হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ভূখন্ডে ঊর্ধ্ব ও নিম্ন আকাশে উষ্ণমন্ডলীয় উচ্চ চাপ বলয়ের আধিক্য আছে। বঙ্গোপসাগর থেকে তৈরি আর্দ্রতা এই চাপের কারণে উত্তর দিকে বা উত্তর-পূর্ব দিকে আর এগোতে পারছে না। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশ, ভারতের বিহার ও মধ্যপ্রদেশের আকাশ পরিষ্কার, মেঘহীন। আবহাওয়াবিদদের মতে, বৃষ্টির দরকার বজ্রমেঘ। আর তার জন্য চাই বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে যে প্রচন্ড গরম পড়েছে, এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো সেখানে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল খুব কম। ফলে ঘাম কম হয়েছে বটে, কিন্তু আবহাওয়া ছিল মাত্রাতিরিক্ত শুষ্ক। তবে বৃষ্টির জন্য দরকারি দখিনা বাতাস শুরু হয়েছে। সোমবার থেকে একটু করে বাতাস বইছে। তবে এটুকু যথেষ্ট নয়। এক-দুই দিনের হাওয়ায় বজ্রমেঘ সৃষ্টি হবে না। টানা কয়েক দিন থাকলে বাতাস জলীয় বাষ্পে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এখন প্রবহমান পশ্চিমা বাতাস বাধা পেয়ে সেখানে মেঘের সৃষ্টি হবে। তাতেই আসবে বৃষ্টি।

সিলেটে বৃষ্টি, রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি

কয়েক দিনের টানা প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ পরিবেশের মধ্যে কিছু এলাকার আকাশ মেঘলা হলেও সিলেটের কয়েকটি এলাকায় হালকা বৃষ্টি ছাড়া আর কোথাও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। এখনও দেশের অনেক অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইছে দাবদাহ। গত দুই দিনের তুলনায় তাপমাত্রা বেশ খানিকটা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস,সোমবার যা ছিল পাবনায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে যেসব এলাকায় দাবদাহ বইছে, আজ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এছাড়া বরিশাল,চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গতকাল তা কমে ৩৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানিয়েছেন,শুক্র অথবা শনিবার থেকে থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তবে গতকালের মতো আজও সিলেটে অল্প বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৩৬ বছরে ঢাকায় গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে ২ ডিগ্রি

১৯৮৭ সালে ঢাকায় ডিসেম্বর মাসের গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ২০২৩ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ৩৬ বছরের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকায় গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রেকর্ড হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তাপমাত্রা বিষয়ক ডেটা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK