শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৬:১০
ব্রেকিং নিউজ

অভিনব কায়দায় পাচারকালে ফেন্সিডিলসহ পাচারচক্রের ৩ জন গ্রেফতার

অভিনব কায়দায় পাচারকালে ফেন্সিডিলসহ পাচারচক্রের ৩ জন গ্রেফতার

উত্তরণবার্তা ডেস্ক : অভিনব কায়দায় কাভার্ডভ্যানে বস্তার মধ্যে ফেন্সিডিল পাচারকালে ১৪৬৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ পাচারচক্রের মুলহোতাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩; মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যান এবং জীপ জব্দ।
 
সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গত রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কাভার্ডভ্যান এবং জীপের ভিতরে বস্তার মধ্যে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় ১৪৬৫ বোতল ফেন্সিডিল, ০১ টি কাভার্ডভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ন-২৩-১২৯১) এবং ০১ টি জীপ (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৬৮৩৪)সহ মাদক পাচার চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ আলী আকবর (৩৫), পিতা-মোঃ আবুল বাশার, সাং-বিষ্ণপুর, থানা-রামগঞ্জ, জেলা-লক্ষীপুর সহ ২। রিপন মিয়া (২৭), পিতা-মোঃ আজিজার রহমান, সাং-দুন্দিবাড়ী, থানা-জলঢাকা, জেলা-নীলফামারী এবং ৩। মোঃ নুর হোসেন (৩৫), পিতা-মৃত জামাল উদ্দিন, সাং-লক্ষ্মীধর পাড়া, থানা-রামগঞ্জ, জেলা-লক্ষীপুরদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের বাজার মূল্য প্রায় ২৯,০০,০০০-(ঊনত্রিশ লক্ষ) টাকা।
 
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, জীপের মালিক ধৃত আলী আকবর উক্ত চক্রের মূলহোতা। কুমিল্লা হতে নারায়ণগঞ্জে ফেন্সিডিল এর চালানটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য ধৃত আলী আকবরের সাথে নারায়ণগঞ্জের জনৈক এক ব্যাক্তির সাথে চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক ১৫ অক্টোবর রাত ১০০০ ঘটিকার সময় রাজধানীর তেজগাঁও হতে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে তার ব্যক্তিগত জীপ নিয়ে রওয়ানা করে। পরবর্তীতে কুমিল্লার সোয়াগাজী এলাকায় পৌঁছানোর পর জীপের মালিক আলী আকবর কুমিল্লার একটি হোটেলের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। এরই মধ্যে উক্ত চক্রের মূলহোতা আলী আকবর তার পূর্ব পরিচিত কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার নুর হোসেনকে ফোন করে কুমিল্লার সোয়াগাজী বাজারে অবস্থান করতে নির্দেশ দেয়। কাভার্ডভ্যানটি সোয়াগাজী বাজারে এসে পৌঁছালে কুমিল্লা এলাকার ডিলার বস্তার ভিতরে ফেন্সিডিল ভর্তি করে কাভার্ডভ্যানে ফেন্সিডিল লোড করে দিয়ে কাভার্ডভ্যানটি তালাবদ্ধ করে দেয়। তারপর আলী আকবর জীপের ব্যাক ডালার ভিতরে বিশেষ কায়দায় ফেন্সিডিল লোড করে। এরপর তারা নারায়ণগঞ্জের জনৈক এক ব্যাক্তির নিকট উক্ত মাদক সরবরাহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
 
গ্রেফতারকৃত আলী আকবরের নিজের ০১ টি জীপ রয়েছে। মাদক ব্যবসা হতে অর্জিত অর্থ দিয়ে সে আট লক্ষ টাকায় উক্ত রিকন্ডিশন জীপটি ক্রয় করে। সে ভাড়ায় জীপ চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার আড়ালে মাদক ব্যবসা করে। সে লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার একটি স্কুল হতে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। দরিদ্রতার কারনে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে সে এলাকার বিভিন্ন খাবার হোটেলে কাজ করত। পরবর্তীতে সে ঢাকায় এসে ০৫ বছর যাবৎ ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করে। তখন তার মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। প্রথমে সে মাদক পরিবহনের কাজ করত। উক্ত কাজ হতে সে স্বল্প সময়ে অনেক অর্থের মালিক হয়। তারপর সে প্রাইভেটকারসহ হালকা যানবাহন চালানো শিখে নিজের ক্রয়কৃত জীপ ভাড়ায় চালানো শুরু করে এবং সুযোগ বুঝে উক্ত জীপে নিয়মিত মাদকের চালান বহন করত। অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে আলী আকবর নিজের জীপসহ বিভিন্ন গাড়ী ভাড়া নিয়ে মাদক বহনের কাজ শুরু করে। আলী আকবর যাত্রী বেশে এবং রিপন তার ড্রাইভার হিসেবে মাদকের চালানের বড় অংশ নিয়ে কাভার্ডভ্যানের পিছনে অবস্থান নেয়। যাতে কাভার্ডভ্যানটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হলে তারা কৌশলে চালানের বড় অংশ নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে। তার সহযোগী মাদক পরিবহনকারী যানটি যাতে নির্বিঘেœ গন্তব্যে পৌঁছতে পারে এবং মাদকের চালান ধরা পড়লেও তার নাম যেন প্রকাশ না পায় এজন্য সে মাদক পরিবহনকারী ড্রাইভারকে নির্দেশ দেয়া থাকে। এছাড়াও তার সহযোগী কেউ আইনী ঝামেলায় পড়লে সে তাদের আইনগত সহায়তার সকল খরচ বহন করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে থাকে।
 
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আলী আকবর নিজের জীপ থাকা সত্তে¡ও অধিক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, পিকআপ ভাড়া করে মাদক পরিবহন করে থাকে। ঘটনার দুইদিন পূর্বে ফেন্সিডিল পরিবহনের উদ্দেশ্যে আলী আকবর ও তার ড্রাইভার রিপন মিয়া কুমিল্লা যায়। নুর হোসেন চালিত কাভার্ডভ্যানটি ২৫০০০/-টাকায় ভাড়া করে কুমিল্লার ডিলারের সাথে দর দাম সাব্যস্ত করে আসে।
 
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায় যে, উক্ত চক্রটি ফেন্সিডিল এর চালান কুমিল্লা জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করে রাজধানীসহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী ও সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত। মূলত জীপের মালিক আলী আকবর এর নেতৃত্বে উক্ত চক্রটি পরিবহন ব্যবসার আড়ালে প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে কুমিল্লা হতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেন্সিডিল পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। চক্রটি পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও সহকারীকে মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের গাড়িতে ফেন্সিডিল পরিবহনের জন্য প্রলুব্ধ করে থাকে। গ্রেফতারকৃত জীপের মালিক আলী আকবর কুমিল্লার সোয়াগাজীর সিন্ডিকেট হতে ফেন্সিডিল সংগ্রহ করে। ফেন্সিডিল সংগ্রহের পর কখনও আলী আকবর নিজে আবার কখনও তার নির্দেশনায় গ্রেফতারকৃত নুর হোসেন দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়। বিগত ০৩ বছর যাবত উক্ত চক্র ৫০টির অধিক চালান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতিটি চালানে ৫০০ হতে ১৫০০ পর্যন্ত ফেন্সিডিল ছিল। উক্ত চক্র ফেন্সিডিলের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে গাঁজা ও ইয়াবার একাধিক চালান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয়। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে উক্ত চক্রের সদস্যরা ইতিপূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়নি। উক্ত চক্রের অপরাপর সদস্যদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
 
গ্রেফতারকৃত রিপন মিয়া নীলফামারী জেলার জলঢাকার একটি কলেজ হতে ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করে। এইচএসসি পাস করার পর হতে গ্রামে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ঢাকা এসে বিভিন্ন গাড়ীর হেলপারি করে নিজেই গাড়ী চালানো শিখে এবং ২০১৭ সাল হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উবারে প্রাইভেটকার চালাত। এরপর সে একটি প্রাইভেট কোম্পানীর কাভার্ডভ্যান চালায়। তখন সে আলী আকবরের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। সে তার কোম্পানীর কাভার্ডভ্যান দিয়ে একাধিক মাদকের চালান রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয়। মাদক পরিবহনের কৌশল হিসেবে ধৃত আলী আকবর রিপন মিয়াকে তার জীপের ড্রাইভার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
 
গ্রেফতারকৃত মোঃ নুর হোসেন লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ এলাকা একটি স্কুল হতে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে। দরিদ্রতার কারনে পড়ালেখা বাদ দিয়ে তার বাবার সাথে কৃষিকাজ শুরু করে এবং কৃষিকাজের পাশাপাশি তার এলাকায় ০৩ বছর একটি টেম্পুর হেলপার হিসেবে করে। পরবর্তীতে ঢাকায় এসে ০২ বছর বিভিন্ন খাবার হোটেলে কাজ করার পর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ট্রাকের হেলপারি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এরপর সে নিজেই গাড়ী চালানো শিখে কিছুদিন পিকআপের ড্রাইভার হিসেবে  এবং পরবর্তীতে কাভার্ডভ্যানের চালক হিসেবে কাজ করে। তখন সে আলী আকবরের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক (স্টাফ অফিসার, মিডিয়া) এ তথ্য জানান।
উত্তরণবার্তা/এসএ
 
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK