বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৭:৪৮
ব্রেকিং নিউজ

অতিমাত্রায় ট্যাব মোবাইল ব্যবহার শিশুর বিকাশ বিলম্বিত করে

অতিমাত্রায় ট্যাব মোবাইল ব্যবহার শিশুর বিকাশ বিলম্বিত করে

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
আপনার শিশুর বিকাশ রোধ করতে পারে অতিমাত্রায় ট্যাব, মোবাইল ইত্যাদি ব্যবহার, বলছে একটি চাঞ্চল্যকর গবেষণা। 
 
শিশুর বিকাশ রোধের উপর করা একটি নতুন গবেষণায় উদ্বেগজনক কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে।  
 
জামা পিডিয়াট্রিক্স (JAMA Pediatrics) জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা বলছে যেসব শিশু মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার ইত্যাদির স্ক্রীনের দিকে বেশী সময় তাকিয়ে থাকে সেসব শিশুর বিকাশ বিলম্বিত হয়। গবেষণায় ২ এবং ৩ বছরের শিশুদের স্ক্রিন ব্যবহার ও ৩ এবং ৫ বছর শিশুর বিকাশের একটি সরাসরি যোগসূত্র দেখা যায়।
 
যেসব বিকাশের কথা এখানে বলা হয় সেগুলো হ’ল যোগাযোগ (communication), হাঁটা চলা (motor skills), সমস্যা সমাধান (problem-solving) এবং সামাজিক মেলামেশা।   
 
এমেরিকান একাডেমি অফ পিডিয়াট্রিক্স -এর  পরামর্শ অনুযায়ী ২ থেকে ৫ বছরের শিশুদের প্রতিদিন ১ ঘন্টার বেশী স্ক্রিন ব্যবহার করা উচিৎ নয়। এটা হতে পারে টিভি দেখে, কম্পিউটারে ভিডিও গেম খেলে বা মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহার ক’রে। 
 
“আমাদের গবেষণায় শিশুরা গড়ে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ ঘন্টা স্ক্রিন দেখছিল। তার মানে আমাদের গবেষণায় অংশগ্রহনকারী শিশুরা পিডিয়াট্রিক গাইডলাইনের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক ঘন্টা বা তার বেশী সময় ব্যয় করছিল,” বলেন শেরি ম্যাডিগান, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগারির এসোসিয়েট প্রফেসর।
 
“দুই ও তিন বছর বয়সে বেশী সময় স্ক্রিন ব্যবহার এবং ৩ ও ৫ বছর বয়সে বিলম্বিত বিকাশের একটি যোগসূত্র আছে,” ম্যাডিগান বলেন। “এই গবেষণা আমাদের বলছে যে স্ক্রিন ব্যবহার যদি অতিমাত্রায় করা হয় সেটা শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুর হাতে মোবাইল, ট্যাব ইত্যাদি তুলে দেয়ার আগে মা-বাবার উচিৎ এটাকে শিশুদের জাঙ্ক ফুড দেয়ার সাথে তুলনা করা, অল্প পরিমাণে দিলে ঠিক আছে কিন্তু অতিমাত্রায় ক্ষতির কারণ হবে।“
 
বয়স্ক শিশুদের ক্ষেত্রে মা-বাবাদের বলা হয়েছে তারা যেন তাদের শিশুদের জন্য একটি ব্যক্তিগত  কম্পিউটার ,ট্যাব ইত্যাদি ব্যবহারের পরিকল্পনা তৈরী করেন, কিন্তু আমেরিকান একাডেমি অফ পিডিয়াট্রিক্স বলে সব শিশু এবং টীন এজারের উচিৎ কম্পিউটার গেম খেলার পাশাপাশি প্রতিদিন ৮ ঘন্টা ঘুম এবং এক ঘন্টা শারিরীক কার্যক্রমের জন্য সময় রাখা। 
 
ইউ এস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশীরভাগ শিশুই প্রতিদিন ৫ থকে ৭ ঘন্টা সময় স্ক্রিনের সামনে কাটায় টিভি দেখে, কম্পিউটারে কাজ ক’রে বা ভিডিও গেম খেলে। 
 
নতুন এই গবেষণায় কানাডায় বসবাসরত ২,৪৪১ মা ও শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মা’দের অন্তর্ভুক্ত করা গর্ভাবস্থায় ২০০৮ থেকে ২০১০ সালে গবেষণা চলাকালিন সময়ে। এর তথ্য সংগ্রহ করা হয় ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে।
 
প্রতিটি শিশুর জন্য মাকে তার শিশুটি ২৪, ৩৬ ও ৬০ মাস বয়সে কিভাবে বিকশিত হচ্ছে সে বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নাবলি পূরণ করতে হয়। মায়েদেরকে তাদের শিশু কতখানি সময় প্রতিদিন স্ক্রিনের সামনে ব্যয় করে সে ব্যপারেও প্রশ্ন করা হয়।
 
গবেষকরা দেখতে পান যেসব শিশু ২৪ মাস বয়সে বেশী সময় স্ক্রিনের সামনে কাটিয়েছে তারা ৩৬ মাস বয়সে গবেষণায় প্রদত্ত পরীক্ষায় খারাপ ফল করে এবং যারা ৩৬ মাস বয়সে অতিমাত্রায় স্ক্রিন ব্যবহার করেছে তারা ৬০ মাস বা ৫ বছর বয়সে পরীক্কায় ফল খারাপ করে। 
 
গবেষকরা দেখতে পান যে গবেষণার শিশুরা গড়ে ২৪ মাস বয়সে ২.৪ ঘন্টা, ৩৬ মাস বয়সে ৩.৬ ঘন্টা ও ৬০ মাস বয়সে ১.৬ ঘন্টা প্রতিদিন ব্যয় করে। “আমাদের জানা মতে এটাই প্রথম গবেষণা যেখানে বেশী সময় স্ক্রিন ব্যবহার ও শিশুর বিকাশ বিলম্বের একটি সরাসরি যোগসূত্র পাওয়া গেছে,” গবেষকরা বলেন।
 
গবেষণায় কিছু দর্বলতাও আছে যেমন, কিছু কিছু তথ্য মায়েরা নিজেরাই জানান এবং ব্যবহারকৃত কিছু যন্ত্র সময়ের সাথে বদলানোর ফলে সেটা স্ক্রিনের সময় কাটানোর উপর প্রভাগ ফেলতে পারে।
 
তবে মনে রাখতে হবে যে যদিও গবেষণায় স্ক্রিন ব্যবহার ও শিশুর বিকাশের উপর যোগসূত্র পাওয়া গেছে, তার মানে এই নয় যে অতি মাত্রায় স্ক্রিন ব্যবহার সব সময় শিশুর বিকাশের উপর প্রভাব ফেলবে। 
 
“আমাদের গবেষণা শুধু দু’টি জিনিষের মধ্যে যোগসূত্র পেয়েছে, তার মানে এই নয় যে একটার কারণে অন্যটা ঘটেছে,” বলেন ম্যাডিগান। এই নতুন গবেষণাটি আমাদের কিছু ধারণা দেয় কিভাবে অনেক সময় ধরে প্রযুক্তির ব্যবহার শিশুদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
 
কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণনীয়ক এখানে অতিমাত্রায় স্ক্রিন ব্যবহার ও শিশুর বিকাশ বিলম্বের যোগসূত্রের কারণ ব্যখ্যা করতে পারে, বলেন ডগলাস জেন্টিল, অইওয় স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের প্রফেসর। তবে উনি এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন না।
 
“আমরা জানি অত মাত্রায় স্ক্রিন ব্যবহার শিশুদের খুব কম বয়সেই ঘুম কমিয়ে দেয় এবং একই সাথে কমে যায় মা-বাবার শিশুদের বই পড়ে শোনানোর সময় যেটা শিশুর ক্রমবিকাশ বিশেষ করে ভাল আই কিউর জন্য খুবই দরকার,” জেন্টিল বলেন। উনি বলেন গবেষণাটি খুব ভালভাবে পরিচালিত হয়েছে। 
 
আমেরিকান একাডেমি অফ পিডিয়াট্রিক্স-এর কিছু গাইডলাইন আছে শিশুদের স্ক্রিন ব্যবহার কমানোর জন্য। সেখানে বলা হয়েছে ১৮ থেকে ২৪ মাসের কম বয়সের শিশুদের সব ধরেনের ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিৎ। 
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK