বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০১:২৮

চিংড়ি যখন ক্যানসারের কারণ

চিংড়ি যখন ক্যানসারের কারণ

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : চিংড়ি নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সব চিংড়ি নয়। জেলি, রাসায়নিক পুশ করা চিংড়ি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, এসব চিংড়ি খেলে হতে পারে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগ। সম্প্রতি ফেনীর পৌর মৎস্য আড়তে দেড়শ কেজি সিলিকা জেলযুক্ত চিংড়ি মাছ জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানা গুনতে হয় চারটি কমিশন এজেন্টকে। তবে তাদের দাবি, এতে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
 
সরবরাহকারীদের একজন নিশ্চিত করেন, মূলত খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা থেকে ফেনীতে চিংড়ি আমদানি করেন আড়তদারা। দেখতে এসব চিংড়ি মনকাড়া হলেও প্রায় সব মাছেই থাকে ভেজাল। ভেজালবিরোধী এসব অভিযান মাঝে মধ্যেই পরিচালিত হয়। জরিমানা করা হয়, ভেজাল চিংড়ি বাজেয়াপ্তও হয়, কিন্তু বন্ধ হয় না। ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি নিজেও ভেজাল দ্রব্য মিশ্রিত চিংড়ি খেয়েছেন। কিন্তু বুঝেছেন খাওয়ার পর স্বাদের পার্থক্যে।
 
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও জানান, আগারের সঙ্গে নিম্নমানের কিছু রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে সিরিঞ্জ দিয়ে তরল দ্রব্য প্রবেশ করানো হয় চিংড়ির ভেতর। যা বরফে রাখার পর শক্ত হয়ে ওজন বাড়ায় এবং সুদৃশ্য হয়। এমন অসাধুতার ফলে চিংড়ি এখন রপ্তানিতেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজোয়ানুল হক বলেন, পরিমাণ মতো আগার দেহের জন্য ক্ষতিকারক নয়। তবে অন্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য এর সঙ্গে মিশে মানবদেহের ক্ষতি করতে পারে। হতে পারে ক্যানসারের মতো মরণব্যাধি।  
 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও মৎস্য গবেষক মো. রিয়াদ হোসেন জানান, কার্বোক্সিমিথাইল নামে জেলিসদৃশ তরল চিংড়ির লেজ এবং গলায় সিরিঞ্জ দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। ধীরে ধীরে তা বস্তুর আকার ধারণ করে ওজন বাড়ায়। ২০০৫ সালে প্রথম চীন ও ভিয়েতনামে এর ব্যবহার শুরু হয়। চীনের প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র কঠোরতা অবলম্বন করলে চীনও মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর হয়।  
 
পিসিনা বায়োটেক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির পরিচালক ও মৎস্য বিশেষজ্ঞ এএইচএম মনিরুজ্জামান বলেন, চিংড়িতে সিলিকা জেল ও সাগুদানাও ব্যবহার হচ্ছে। তবে সিলিকা মূলত আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি মূলত কলকারখানায় ব্যবহার করা হয়। যা মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। মোস্তফা ফিশিংয়ের মালিক হাসান জানান, মাছের আকার ও ওজনের ওপর ভিত্তি করে চিংড়ির দাম নির্ধারিত হয়। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে মাছের ওজন বাড়ে, সুদৃশ্য হয়।  
 
আদর্শ মাছের আড়তের নুরুল ইসলাম জেলিযোগের সুবিধা প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়ে বলেন, ১২টির স্থলে ১০টি চিংড়িতে এক কেজি হয়ে যায়। এতে কেজি প্রতি বাড়তি দাম এবং ওজন বাড়ার ফলে বাড়তি আয় হয়। লাভের পরিমাণ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কমিশন এজেন্ট বলেন, ডিম ছেড়ে দেয়ার পর চিংড়ির মাংস কমে যায় এবং ক্ষীণ হয়ে যায়। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করলে এগুলো হৃষ্টপুষ্ট দেখায় এবং মাছে কালচে ভাব আসে না, ওজন বেড়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেনী মৎস্য আড়ত সমিতির এক নেতা জানান, ঘেরের আশপাশেই চিংড়িতে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর কাজ হয়। শ্রমিকরা ঘণ্টায় ৪০ টাকা দরে এ কাজ করে। ফেনীতে চিংড়ি সরবরাহকারী স্বপন বলেন, খুলনা থেকে সরবরাহ করা মাছে সবচেয়ে বেশি ভেজাল দ্রব্য মিশ্রিত থাকে। এখানে ঘের এবং ঘের থেকে বের হলেই একটি চক্র চিংড়িতে ভেজাল দ্রব্য মেশায়। 
 
মৎস্য গবেষক মো. রিয়াদ হোসেন বলেন, কার্বোক্সিমিথাইল সেলুলোজ (সিএমসি) ভোজ্য হলেও এটি মূলত ফার্নিচার ও মুদ্রণশিল্পে ব্যবহৃত হয়। তবে এতে ভারী ধাতু যুক্ত থাকায় মানবদেহের যকৃৎ, বৃক্কের ক্ষতি এবং রক্তদূষিত করে। এর কারণে ক্যানসার হতে পারে। ড. মোহাম্মদ রেজোয়ানুল হক জানান, সিএমসি প্রাণীর হজম হলেও মানুষের দেহে এটি হজম করার মতো অ্যানজাইম নেই। ফেনী সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ মোস্তফা জামান, সিলিকা জেলিতে মানবদেহের রেচনতন্ত্রের ক্ষতি করে মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে।
উত্তরণ বার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK