শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৮:১৭

একটু হাসুন : ‘চুপ একদম চুপ ’

একটু হাসুন : ‘চুপ  একদম চুপ ’

উত্তরণবার্তা ডেস্ক : যখনই আমি ব্রাজিলের ম্যাচ দেখতে বসি, তখনই ইফতি কানে তুলো গুঁজে বসে থাকে। কারণ আমার চিল্লাচিল্লিতে নাকি তার কান ফেটে যায়। ওদিকে সে যখন আর্জেন্টিনার ম্যাচ দেখে, তখন আমার কানে তুলো গুঁজলেও কাজ হয় না। রুম থেকেই বেরিয়ে যেতে হয়।

বহুবার আমাদের ঝগড়া হয়েছে এই ব্রাজেন্টিনা নিয়ে। সেদিন ব্রাজিলের ম্যাচ দেখার সময় ইফতি বারবার রিমোট নিয়ে চ্যানেল চেঞ্জ করছিল, আর আমি তার কাছ থেকে বারবার রিমোট ছিনিয়ে আনছিলাম।

ইফতি হাসতে হাসতে বলল, ‘এসব দেখে কী লাভ! জিততে তো আর পারবে না। শুধু শুধু আমার কানের বারোটা বাজাবে। তার চেয়ে বরং রিমোটটা দাও আমি শান্তিতে একটু রবীন্দ্রসংগীত শুনি। এমনিতেও ফাইনালে তো আর্জেন্টিনাই জিতবে। তাই আগে থেকেই শান্তিতে একটু রবীন্দ্রসংগীত শুনি।

আমি ইফতিকে সারারাত রুমের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলাম। ব্রাজিলকে নিয়ে এত বড় কথা! এবার বুঝো কেমন মজা লাগে।
আমাদের মেয়ে ‘ইচ্ছে’ রুমের ভেতর থেকে তার বাবাকে আরও ইন্সপায়ার করছিল, ‘বাবা, যা কিছুই হয়ে যাক না কেন, আমাদের হার মানলে চলবে না। প্রিয় দলের জন্য না হয় এক রাত সোফায় ঘুমিয়ে কাটালে। কিন্তু বিরোধী দলের কাছে একদমই হার মানা যাবে না।’

আমি একটা ধমক দিয়ে ইচ্ছেকে বললাম, ‘তুমিও কী বাবার মতো রুমের বাইরে যেতে চাও?’
আমার ওয়ান এন্ড ওনলি পুত্র ‘শখ’ বলল, ‘আম্মু, ইচ্ছেকেও বাবার মতো বাইরে বের করে দাও। ওকেও একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হয়ে তোমার সঙ্গে টক্কর দিতে আসে!’

আমি হেসে বললাম, ‘বাহ, এই না হলে আমার ছেলে! কিন্তু না বাবা, বোনকে এভাবে বলতে নেই। সবসময় একটা কথা মনে রাখবে, পুরো দলকে শিক্ষা দিতে হলে দলের নেতাকে আগে শিক্ষা দিতে হয়। তাহলেই তার সৈন্যরা ভয় পায়।’ ইচ্ছে মুখ বেঁকিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।

আর্জেন্টিনা ফাইনালে ওঠার পর ইফতি বলল, ‘কী যেন একটা গান আছে না! ওই যে, কী যেন বলে...রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগেÑএটার নতুন একটা কভার করব ভাবছি। লিরিক্স হবে এরকম...হারিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে, ব্রাজিলকে হা...!’

‘চুপ, একদম চুপ!’ এই বলে প্রচণ্ড রাগি স্বরে ইফতির দিকে তেড়ে গেলাম আমি। রেগে গলাটা টিপে দিতে ইচ্ছে করছিল। এমন সময় রুমের ভেতর থেকে দুরুম দারুম আওয়াজ ভেসে এলো।

আমি আর ইফতি দুজনই ড্রয়িংরুম থেকে দৌড়ে রুমে গিয়ে দেখি, ইচ্ছে আর শখ চুল-ছেঁড়া, মারামারি করছে।
ইফতি একটা ধমক দিয়ে বলল, ‘আবারও তোমরা মারামারি করছ!’

ইচ্ছে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘বাবা বাবা, শখ আমাকে হেরো হেরো বলে ক্ষেপাচ্ছিল। আর্জেন্টিনা নাকি হেরে যাবে।’
বেচারি কান্নার জন্য আর কিছু বলতেই পারল না। আমি শখের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘বাহ, এই না হলে আমার যোগ্যপুত্র! সাব্বাস মেরে বেটা।’

ইফতি ইচ্ছেকে কোলে নিয়ে কান্না থামাতে থামাতে বলল, ‘মেয়েও হয়েছে মায়ের মতো ছিচ কাঁদুনে। জানো মাম্মাম, তোমার মাও ব্রাজিল হেরে গেলে এভাবেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে।’

আমি প্রচণ্ড রাগি স্বরে বললাম, ‘কীহ! আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করি? তুমি কী করো! তুমি তো আর্জেন্টিনা হারলে দুঃখে খাবার না খেয়ে সাত দিনের শোক পালন করো!’
উত্তরণবার্তা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK