শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৯:৩৬

একটু হাসুন : ওয় মইত্যা

একটু হাসুন : ওয় মইত্যা

উত্তরণবার্তা ডেস্ক : বাতের রোগী নন বাতেন উদ্দিন, বড়জোর তাকে কথার রোগী বলা যায়। জায়গায়-বেজায়গায় বেফাঁস মন্তব্য করে ইতোমধ্যে চার পায়ের একটি প্রাণীর উপাধি হস্তগত করেছেন। পরিচিত লোকজন তাকে এক প্রকার মেনে নিলেও সমস্যায় পড়েন অন্যরা। মাঝে-মধ্যে দু’পক্ষই তালগোল পাকালে ক্যাচাল বাড়ে। সেদিন মহল্লার চা দোকানে বসে গালগল্প করছিলেন। অচেনা আগন্তুক এসে কফির অর্ডার দিল। বাতেন উদ্দিন তাকে বললেন, ‘ভাইজানকে একটা প্রশ্ন করি?’

‘কেন নয়!’ সোৎসাহে বললেন আগন্তুক।

‘কফির অর্ডার দিলেন! আপনার চৌদ্দ-গোষ্ঠীর কেউ কখনো চা খেয়েছে?’

‘এটা কেমন কথা?’ অপমানে চুপসে গেলেন কফির অর্ডারদাতা।

‘আমরা চা খাই। আমাদের টপকে কফির অর্ডার দিয়ে কী বোঝালেন! নিজে খান্দানি আর আমরা এলেবেলে লোক?’

‘আপনি গুরুত্বপূর্ণ লোক, বুঝেছি। এবার আমিও একটা প্রশ্ন করি। আপনি বেঞ্চিতে বসেছেন, আপনার তের তম পুরুষ ধুলা-বালি ছাড়া কোথায় বসত?’

বাতেন উদ্দিন তের তম পুরুষের শান-শওকত মনে করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মনের পর্দায় ছবি ঝিরঝির করে। তাই বলে ঠাঁটবাট কমাতে পারেন না। বললেন, ‘সবাই সোফায় বসত। সেই সোফাগুলোর কারিগর ছিল আপনার বাবা-পক্ষের আত্মীয়স্বজন।’

ভদ্রলোক তর্কে না জড়িয়ে কফির অর্ডার ক্যান্সেল করলেন। হাঁটা দিলেন হনহন করে। দোকানদার ক্ষেপল এবার, ‘এইখানে বইছেন কি কাস্টমার নষ্টকরণের লেইগা?’

‘কাস্টমার গেলে কাস্টমার আসবে। কফি তো তোর দোকানেই থাকল!’

বাতেন উদ্দিনের সান্ত্বনামূলক মন্তব্যের পরও গজগজানি থামল না দোকানির। প্রসঙ্গ পালটে অন্যভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা করল। বলল, ‘ওইদিন ভাইয়ার বিয়ার অনুষ্ঠানে আপনেরে দাওয়াত দিলাম। সেইখানেও করলেনডা কী!’

অন্যায় কিছু করেননি বাতেন। বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে মাংসে কেবল কামড় বসিয়েছেন, মনে হল-লবণের পরিমাণ সঠিক মাত্রায় হয়নি। পরিবেশনকারীকে বললেন, ‘কী ব্যাপার, তোমরা তরকারিতে লবণ খাও না! দাম বেড়েছে?’

কনের বাবার কানে খবরটা পৌঁছাতে সময় লাগল না। নিজেই হাজির করলেন পাঁচ কেজি লবণ। বললেন, ‘লবণ খাওয়ার অভ্যাস আগে জানালে স্তূপ দিয়ে রাখতাম!’

কথা না বাড়িয়ে খাওয়া সারলেন বাতেন উদ্দিন। পান চিবুতে চিবুতে বসলেন অতিথির জন্য পেতে রাখা আসনে। সামনে বসেছিল এক তরুণ। প্রশ্ন করলেন, ‘বাবুর নামটা জানতে পারি?’

‘মতিন পাটোয়ারী। মুরব্বিরা ডাকেন মইত্যা।’

‘ও, পাটোয়ারী বংশের লোক! সবাই আগে পাটের ব্যবসা করত বুঝি? তাই তো বলি, নাম থেকে পাটের গন্ধ আসে কেন! আমাদের বংশ চৌধুরী। কিন্তু নিরহংকারী মানুষ বলে ব্যবহার করি উদ্দিন। এটা কি খারাপ পদবি!’

দুই মিনিট পর তিনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন বাঁশবাগানের মাঝখানে। পাটের দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়েছে হাত। মতিন পাটোয়ারী বললেন, ‘তোর কোন চৌধুরী বাপ আছে, তারে ডাইকা তোরে মুক্ত করতে ক।’

বরপক্ষের দাম বরাবরই বেশি। তাই বড় কোনো হুজ্জতের আগেই ছাড়া পেলেন বাতেন। ওই মইত্যা-ব্যাটা এসে ‘স্যরি’ও বলে গেছে। গরম মাথায় ঠিক কাজ করেনি। বাতেন মতিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আমি কিছু মনে করিনি রে, মইত্যা। তোমার মতো বয়সে আমিও রাগী ছিলাম। প্রথম বর্ষে পড়ি তখন। কলেজে যাওয়ার সময় দাদার কাছে টাকা চাইলাম, দিলেন না। পরে তাকে ধরে বেঁধে নিয়ে গেলাম দোকানে। দোকানদারকে বললাম, ‘তোমার দোকানে যা আছে, আমাকে বস্তা বেঁধে দাও। টাকা দেবেন এই ভদ্রলোক!’ এরপর বাবা প্রতিদিন নিয়ম করে টাকা দিতেন।’

অনুষ্ঠানের দুঃসহ স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়ায় বাতেন উদ্দিন রাগ করলেন। বললেন, ‘নগদ টাকায় চা খাই বলে ভেবো না, আমি অনামী লোক। জলবায়ু ও বাতাসবিষয়ক মন্ত্রী পরামর্শের জন্য আমাকে প্রতিদিন তিনবার কল দেন। মন চাইলে রিসিভ করি, বেশিরভাগ কেটেই দিই।’

‘রিসিভ করলে কী কন?’

‘বলি, নির্বাচনের তিন মাস পরে আমার বাড়িতে আসতে। সরাসরি পরামর্শ দেব।’

দিনের পর দিন একে তাকে ওকে উলটাপালটা কথা বলে ক্ষেপিয়ে দেওয়া বাতেন উদ্দিনের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাতাস অনুকূলে থাকছে না বুঝতে পারলেও নিজেকে সামলানো যায় না। আজ দোকানদারের সঙ্গে বাতচিতের পর স্থানীয় এক পাতি নেতা এলেন হঠাৎ। তাকে দেখে বাতেন উদ্দিন ব্যঙ্গ করে বললেন, ‘পাতি নেতার বেল নাই আমার কাছে। আমি চলি মন্ত্রী-মিনিস্টার নিয়া!’

উক্তিটির এক ঘণ্টা পর নিজেকে পাশের নারিকেল বাগানে আবিষ্কার করলেন বাতেন। নারিকেল গাছে মাথা ঠুকে কান্নাকাটির স্বর বাড়ল তার। পাতি নেতা সামনে এসে বললেন, ‘আজকের মতো ছাইড়া দিলাম। আরেক দফা ধোলাই বাকি রইল!’ পাতি নেতার চ্যালারা দাঁত কেলিয়ে হাসতে থাকে।

নড়বড়ে হাড়-হাড্ডি নিয়ে টলতে টলতে হাঁটা শুরু করে বাতেন উদ্দিন অনুধাবন করলেন, বেফাঁস মন্তব্য স্বাস্থ্যহানিকর! ঘ
উত্তরণবার্তা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK