শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৯:৩৫

২১৬ প্রজাতির বিলুপ্ত ধান মাঠে ফেরাতে গবেষণা

২১৬ প্রজাতির বিলুপ্ত ধান মাঠে ফেরাতে গবেষণা

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : বৃহত্তর ফরিদপুর ও বাগরহাট অঞ্চলের বিলুপ্ত ২১৬ প্রজাতির স্থানীয় জাতের ধান মাঠে ফেরাতে সংরক্ষণ ও গবেষণা করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)।ধানগবেষণা ইনস্টিটিউট ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাট  জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সরাসরি কৃষকের মাঠ হতে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২১৬ প্রজাতির ধান সংগ্রহ করে ধানগবেষণা ইনস্টিটিউট গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে এনেছে। এ কার্যালয়ে জাতগুলোর বীজ বর্ধণ ও বৈশিষ্ট্যায়নের কাজ চলছে। এখান থেকে এগুলো পিওর লাইন সিলেকশনের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় বিশুদ্ধ জাত শনাক্ত করণ করা হচ্ছে। গবেষণার মাধ্যমে জাতগুলোকে উচ্চ ফলনশীল জাতে রূপান্তরিত করে ভবিষ্যতে  অবমুক্ত করা হবে। এছাড়া কৃষকের মাঠে বিলুপ্ত প্রজাতির স্থানীয় ধানের জাতের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে। কৃষক এখান থেকে তার পছন্দের স্থানীয় জাত বেছে নিয়ে চাষাবদ করে অধিক ধান উৎপাদন করবেন। এভাইে স্থানীয় বিলুপ্ত জাতের ধানের চাষাবাদ ফিরে আসবে। ধীরে ধীরে এগুলোকে কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তোলা হবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, জনবহুল বাংলাদেশের আবহওয়া ও জলবায়ূ ধান চাষের উপযোগী। কিন্তু এ দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বাড়িঘর, কল-কারখানা, হাট-বাজার ও সড়ক নির্মাণ এবং হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীল  জাতের ধান চাষের ফলে স্থ’ানীয় জাতের ধান বিলুপ্ত হতে চলেছে। স্থানীয় জাতের বান্দরজটা, লেতপাশা, উড়িচেঙড়া, ধলাকান্দি, কলারমোচা, গৌরকাজল, করচামুড়ি, খড়াদীঘা, কাপুড়াদীঘা খৈয়ামুরগী, মারচাল, রাজামোড়ল, বাঘরাজ, কালাহোরা এ অঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। তাই ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় বিলুপ্ত ২১৬ প্রজাতির স্থানীয় বিলুপ্ত জাতের ধান সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে থেকে লক্ষ্মীদীঘা, হিজলদীঘা, খৈয়ামটর, শিশুমতি, দুধকলম, দেবমণি, বাঁশিরাজ, মানিকদীঘা, রায়েন্দা, জাবরা, লালদীঘানহ বিভিন্ন প্রজাতির ধান ব্রি,গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা মাঠে চলতি আমন মৌসুমে আবাদ করে জাত উন্নয়নে গবেষণা করছে।

ব্রি,গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রধান ও সিনিয়র সাইন্টিফিক ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে আগে সাড়ে ১২ হাজার প্রজাতির স্থানীয় ও দেশীয় ধান আবাদ হতো। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট  স্থানীয় ও দেশীয়  ৮ হাজার ধানের জাত সংগ্রহ করে জিন ব্যাংক গড়ে তুলেছে। কৃষকের মাঠে বিদ্যমান একটি জাতকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি বড় কাজ।এ লক্ষ্যে আমরা স্থানীয় ও দেশী  ধানের জাত সংগ্রহ করে মূল্যায়ন ও বৈশিষ্ট্যায়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এটি ধান গবেষণার জিনব্যাংক সমৃদ্ধ করণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এছাড়া স্থানীয় ও দেশী জাতের ধানের উন্নয়ন ঘটিয়ে নতুন করে বিলুপ্ত জাত  কৃষকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এতে কৃষক স্থানীয় ও দেশী উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ করে আমন সৌসুমে অধিক ধান ঘরে তুলবেন। এতে কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।ব্রি,গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সায়িন্টিফিক অফিসার সৃজন চন্দ্র দাস  বলেন, স্থানীয় বিলুপ্ত জাতের ধান নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে এসব ধান পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। ওইসব বিলুপ্ত প্রজাতির ধানের চালের ভাত খেয়ে মানুষ পুষ্টি,ভিটামিনসহ শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পুরণ করতেন। এ পুষ্টিগুণের বৈশিষ্টগুলো উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে স্থানীয় জাতকে উচ্চ ফলনশীল জাতে পরিণত করা হবে। এতে বিলুপ্ত জাতের বৈশিষ্ট ফিরে আসবে। ভাতের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা পুরণ করা সম্ভব হবে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের কৃষক শফিক চৌধূরী বলেন, আউশ ধান কাটার পর আমরা জমিতে দীঘাধান ছিটিয়ে দেই। কোন পরিচর্যা ছাড়াই বিঘাপ্রতি এ ধান  ৮/১০ মন ফলন পাই। ব্রি, গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় আমাদের কাছ থেকে দীঘা ধানের অন্তত ১৫টি জাত সংগ্রহ করে গবেষণা করছে। এসব ধানের উচ্চ ফলনশীল জাত পেলে আমাদের ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে এ ধান আবাদ করে আমরা পুষ্টির পাশাপাশি লাভবান হতে পারব।
উত্তরণবার্তা/এআর
 

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK