মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০২:২০

গয়না তৈরির গ্রাম

গয়না তৈরির গ্রাম

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : সাম্প্রতিক সময়ে অ্যান্টিক ও সিটিগোল্ডের গয়নার কদর বেড়ে গেছে বহু গুণ। এই গহনার বাজার গড়ে উঠেছে বগুড়ার শহরতলির একটি গ্রামে। কেউ কেউ গহনা গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আর এসব গহনার কারিগর বেশির ভাগ নারী। গহনাকে কেন্দ্র করে বগুড়ার সেই ধরমপুরে মোকাম গড়ে উঠেছে। সেখানে ২৩৮টি গহনার দোকান রয়েছে। বগুড়ার তৈরি এসব গহনা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কদর রয়েছে। এসব গহনা তৈরি করতে বগুড়ার ধরমপুর ও এর আশপাশে অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

কারিগরদের কাছে জানা গেছে, বিয়েশাদিসহ যে কোনো অনুষ্ঠানে সোনার মতোই দেখতে এই অ্যান্টিক ও সিটিগোল্ড গহনার ব্যাপক চাহিদা। নারীদের পছন্দের সীতাহার, শাড়িমালা, কান্দা, লহর, হাশলি, জড়ো, টাইরা, টিকলি, চুড়, বালা, মানতাসা, নূপুর, বিছাসহ আরো বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন গহনা তৈরির কাজ করেন তারা। ধরমপুরে প্রায় ১০০ ধরনের গহনা পাওয়া যায় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের থেকে কাজের অর্ডার নিয়ে নারীরা ঘরে বসেই বানান গহনা। এর মধ্যে কেউ কেউ ঘরেই গড়ে তুলেছেন ছোট কারখানা। শুরুটা ধরমপুরে হলেও এ শিল্পের বিস্তার ঘটেছে সদরের নিশিন্দারা, ঝোপগাড়ি, ফুলবাড়ী ও বারোপুরসহ আরো অনেক এলাকায়। এসব এলাকায় নারী-পুরুষ কারিগরদের কর্মসংস্থানের উত্স তৈরি হয়েছে। অ্যান্টিকের গহনা তৈরির আয় থেকে এ এলাকার নারীরা নিজেদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করেছে।

গহনার কারিগর খুশি বেগম বলেন, সকালবেলা সংসারের কাজ শেষ করে শুরু করেন গহনা তৈরি। দৈনিক গড়ে ৪০০ টাকা রোজগার হয়। খুশি বেগমের জা ফেন্সি বেগম অ্যান্টিক গহনার কাজ করছেন ছয় বছর ধরে। তার কাজ সীতাহারের তামার প্যান দিয়ে ঝালাই করা। তার স্বামীও একই কাজ করেন। প্রতিদিন দুই জনে এ কাজ করে প্রায় ১ হাজার টাকা আয় করেন।

শহরতলি ধরমপুর, নিশিন্দারা, ঝোপগাড়ি, আটাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, শুধু গৃহবধূরাই নয়, অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখার পাশাপাশি এই হাতের কাজ করছেন। সরকারি মুজিবর রহমান মহিলা কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আদুরী আক্তার জানান, তিনিও অ্যান্টিকের গহনা তৈরি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগান।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় ১৫০ বছর আগে থেকে এখানে গহনার কাজ শুরু হয়। সে সময় পিতলের গহনা তৈরি হতো। পরে এক পর্যায়ে সোনার গহনার চাহিদা বাড়তে থাকে। কিন্তু ৮০ দশকের শেষে আবার সোনার গহনার চাহিদা পড়তে থাকে। তখন থেকে একটু একটু করে অ্যান্টিক শিল্পের দিকে ঝুঁকতে থাকে কারিগররা। এরপর ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালের দিকে পুরোদমে শুরু হয় অ্যান্টিকের গহনা তৈরি। এই বাজারের শফিক গোল্ড অ্যান্ড অ্যান্টিক জুয়েলার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে আপাতত ব্যবসা কমে গেছে। তার পরও যশোর, বরিশাল ও রংপুরে তিনি প্রতি মাসে প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পণ্য বিক্রি করেন।
উত্তরণ বার্তা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK