শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৮:৫৪

সারা দিনভর চা খাচ্ছেন? জানুন কি ক্ষতি হতে পারে

সারা দিনভর চা খাচ্ছেন? জানুন কি ক্ষতি হতে পারে

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হচ্ছে চা। সকালের নাশতা আর বিকেলের নাশতার পর চা খাওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের অঙ্গ। কিন্তু কেউ কেউ আছেন যারা কিছুক্ষণ পর পরই চা খাচ্ছেন। বিশেষ করে কাজের চাপে থাকলে চা খাওয়াটা আরও বেড়ে যায়। চা একদিকে যেমন উপকারি তেমনি অতিরিক্ত চা পান স্বাস্থ্যহানি ঘটাতে পারে। তাহলে জানুন বেশী চা খেলে কি ক্ষতি হতে পারে।
 
১। শরীর আয়রন শুষে নিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়
চায়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ট্যানিন (Tannin) নামক কম্পাউন্ড, যা আয়রনের সাথে লেগে থাকতে পারে ফলে আপনার পরিপাকতন্ত্র আয়রন শুষে নিতে বাধা প্রাপ্ত হয়। আয়রন ঘাটতি সারা বিশ্বে একটি সাধারণ সমস্যা এবং বেশী চা খেলে এটা আরো খারাপ হতে পারে। আপনার শরীরে যদি আয়রনের ঘাটতি থাকে এবং আপনি চা খুব ভালবাসেন, তাহলে খাবার মধ্যবর্তী সময়ে চা পান করুন।
 
২। উদ্বেগ, চাপ এবং অস্থিরতা
চায়ের উপাদান ক্যাফিন আপনার উদ্বেগ, মানসিক চাপ এবং অস্থিরতা বাড়াতে পারে। শুধু এক কাপ চায়ে আছে ১১-৬১ মিলিগ্রাম ক্যাফিন। গবেষণায় দেখা গেছে দিনে ২০০ মিলিগ্রামের কম ক্যাফিন গ্রহণ করলে তা খুব বেশী উদ্বেগ সৃষ্টি করব না। তবুও অনেকেই ক্যাফিনের প্রতি সংবেদনশীল। আপনি যদি সব সময় নার্ভাস এবং অস্থিরতা অনুভব করেন, তাহলে চা খাওয়া কমিয়ে দিন।
 
৩। ঘুমের সমস্যা
যেহেতু চায়ে ক্যাফিন আছে তাই অতি মাত্রায় চা পান আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে। মেলাটোনিন নামক হরমোন আমাদের মস্থিষ্ককে ঘুমাতে সিগন্যাল দেয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে ক্যাফিন আমাদের শরীরে মেলাটনিন উৎপাদন ব্যাহত করে, ফলে আমাদের ঘুমে সমস্যা হয়। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাবে ক্যাফিন হজম করে। তাই এটা বলা মুশকিল কিভাবে এটা সবার ঘুমে প্রভাব ফেলে।
 
৪। বমি বমি ভাব
চায়ের কিছু উপাদান নযিয়া বা বমি ভাবের উদ্রেক করতে পারে, বিশেষ করে যদি অতিমাত্রায় চা পান করা হয়। চা পাতার উপাদান ট্যানিন চায়ের তেতো এবং শুকনো স্বাদের জন্য দায়ী। তাই বেশী চা খেলে পাকস্থলীর টিসুতে জ্বালাপোড়া করতে পারে যার ফলে বমি ভাব এবং পেটে ব্যথা হয়।
 
৫। হার্টবার্ন
চায়ের ক্যাফিন বুক জ্বালাপোড়া (হার্টবার্ন) বা এসিড রিফ্লাক্স ঘটাতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে পাকস্থলী থেকে খাদ্যনালীকে আলাদা করার যে স্ফিংটার আছে, ক্যাফিন সেটাকে রিল্যাক্স করে ফলে পাকস্থলীর এসিডিক উপাদান খুব সহজেই খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে ফলে হার্টবার্ন শুরু হয়। যদিও চা পা করলেই হার্টবার্ন হবে না, তবে অতিমাত্রায় চা পানে এটা হতে পারে।
 
৬। মাথা ঘোরানো
অতি মাত্রায় ক্যাফিন গ্রহণ করলে মাথা ঘুরাতে পারে। ৪০০-৫০০ মিলিগ্রামের বেশী অর্থাৎ ৬-১২ কাপ চা পান করলে এই সমস্যা দেখা দিবে। কিন্তু যারা ক্যাফিনের প্রতি সংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে এর চেয়ে কম চা পানেও এই সমস্যা হতে পারে। আপনার যদি চা পানের পর এই সমস্যা প্রায়ই হয় তাহলে কম ক্যাফিনযুক্ত চা পানের অভ্যাস করুন।
 
পরিশেষে
চা শুধু সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়ই নয়, এতে আছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। নিয়মিত চা পান করলে প্রদাহ কমে এবং বিভিন্ন ক্রনিক রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে। পরিমিত চা পানে যেমনি উপকারিতা আছে তেমনি অত্যধিক চা পানে দেখা দিতে পারে উদ্বেগ, অস্থিরতা, মাথা ব্যাথা এবং ঘুমের সমস্যা। বেশীর ভাগ মানুষেরই দিনে ৩-৪ কাপ চা পানে কোন সমস্যা হয় না। তাই অতিরিক্ত চা পান না করাই উচিৎ।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক 
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK