শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৯:১০

প্রতিদিন বিট জুস পানের ৮ উপকারিতা

প্রতিদিন বিট জুস পানের ৮ উপকারিতা

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
আজকাল বিট আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বে এই সব্জিটির বহু গুণাবলীর কারণে একে বলা হয় সুপারফুড। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছেন নিয়মিত বীট জুস পান করার জন্য। এর কারণও আছে; বীটের সব পরিপোষক আসে মাটি থেকে যার ফলে এতে আছে সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারি অনেক শক্তিশালী উপাদান।  
 
কিন্তু আপনি যদি এই বিট জুস প্রতিদিন পান করেন তাহলে কি আপনি একজন অতিমানবে পরিণত হবেন? হতে পারেন আবার নাও হতে পারেন। তবে আপনার শরীরে কিছু ভাল পরিবর্তন আসবে যা আপনার দেহকে আগের তুলনায় অনেক বেশী কার্যকর করবে। এখন দেখা যাক প্রতিদিন বীট জুস পান করলে আপনার শরীরে কি হতে পারে।
 
১। বিট জুস ক্রীড়াশৈলির উন্নয়ন করে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে 
আপনি হয়তো স্পাইডারম্যানের মত বিল্ডিং বেয়ে উঠতে পারবেন না বা ঘুষি মেরে দেয়াল ভাংতে পারবেন না, তবে প্রতদিন বীট জুস পান আপনার ক্রীড়াশৈলির উন্নয়ন করবে। Nutrients — Open Access Journal of Human Nutrition নামক এক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায় বীট জুস খেলোয়াড়দের হৃদপিন্ডের সহনশীলতা বৃদ্ধি করে। 
 
গবেষণায় অংশগ্রহনকারীদের প্রতিদিন বিট জুস সাপ্লিমেন্ট পান করতে দেয়া হয়, এবং দেখা যায় যে এর ফলে ক্রীড়াবিদদের হৃদপিন্ডের কার্যকারিতার উন্নয়ন হয়, রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং VO2max বৃদ্ধি পায়। VO2max হচ্ছে অতিরিক্ত ব্যায়ামের সময় যে পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ করা হয় তার পরিমাপ। এছাড়া গবেষণায় আরো বলা হয় বীট জুস পান করতে হবে ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে ৯০ মিনিটের মধ্যে কারণ জুসের সর্বোচ্চ কার্যকারিতা থাকে পান করার ২-৩ ঘন্টা পরে।
 
২। আপনার শক্তি (এনার্জি) বৃদ্ধি পাবে
বিট জুস পান করলে শুধু যে আপনার ক্রীড়াশৈলিরর উন্নয়ন হবে তাই নয়, এটা আপনার শক্তিও বৃদ্ধি করবে। এখন দেখা যাক বিজ্ঞান কি বলে। দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয় যারা নিয়মিত বীট জুস পান করেন তাদের রক্তে নাইট্রেটের (nitrate) পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। 
অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে এই নাইট্রেট রক্তনালী সুস্থ রাখে এবং ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া বীট জুস মাংসপেশীর কার্যকারিতার উন্নয়ন করে এই ফলাফল দেখা যায় হালকা ও অতিরিক্ত ব্যায়াম উভয় ক্ষেত্রেই।
 
৩। বিট জুস আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবে
একটি সুস্থ দেহের জন্য শক্তি ও ক্রীড়াশৈলির পাশাপাশি দরকার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। বীট জুসে আছে খুবই কম ক্যালরি এবং নেই কোন চর্বি, যার ফলে এটা সকালে পান করলে আপনাকে দিবে সারাদিন কাজ করার শক্তি। এই জুসের আঁশ অনেক সময় ধরে আপনার পেট ভরা রাখবে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
 
৪। বিট জুস ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে
আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন এবং আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে এমনিতেই আপনার ব্লাড প্রেশার থাকবে নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ ছাড়া শুধু বিটের রস পান করলে কি ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকবে? তাহলে দেখা যাক গবেষণা কি বলে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে বীট জুস শুধুই ব্লাড প্রেশার কমায় না, বরং এটা উচ্চ রক্তচাপের জন্য একটি ভাল ঔষধ হিসেবে কাজ করতে পারে।
 
৫। বিট জুস কোলেস্টেরল কমায়
আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি বেশী হয়ে থাকে তাহলে আপনার উচিৎ হবে নিয়মিত বীট জুস পান করা। ২০১১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে বীটের উপাদান টোটাল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমায় এবং এইচ ডি এল কোলেস্টেরল (ভাল কোলেস্টেরল) বৃদ্ধি করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এটা হয় বীটে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডের কারণে।
 
৬। বিটের রস হজম শক্তি বাড়ায় 
অন্যান সব সব্জির মত বিটেও আছে প্রচুর আঁশ। শুধু এক কাপ বিট জুসে আছে ৩.৮ গ্রাম আঁশ যা প্রতিদিনের প্রয়োজনের ১৫% পূরণ করবে। এছাড়া আমরা জানি ফাইবার বা আঁশ হজমের জন্য খুবই উপকারি। 
 
খাদ্য থেকে পাওয়া আঁশ একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকার জন্য খুবই দরকারি। এই আঁশ হজম প্রক্রিয়া পাশ কাটিয়ে সোজা পায়ুতে চলে যায় এবং স্বাস্থ্যকর ব্যাক্টেরিয়ার খাদ্যে পরিণত হয় বা মলের সাথে মিশে যায়। বীট জুস আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য, ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিযিয এবং ডাইভারকুলাইটিস রোধ করবে এবং মলত্যাগ রেগুলার রাখবে। এছাড়া আঁশ বা ফাইবার কোলন ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোধ করতে পারে।
 
৭। বিট জুস আপনাকে দিবে শান্তির ঘুম
একটি সুস্থ শরীরের জন্য ঘুম অতি প্রয়োজনীয়। আপনার ঘুম ভাল না হলে আপনার মেজাজ থাকবে খিটখিটে এবং শরীর থাকবে ক্লান্ত। অতিরিক্ত চিনি, কফি বা চা পান এবং অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ আপনাকে ভাল ঘুম হতে বাধা দেয়। বীট জুস আপনাকে শক্তি দেয় এবং ভাল ব্যায়াম করতে সাহায্য করে যার ফলে আপনার ঘুম হয় ভাল। এছাড়া ভাল হজম হওয়ার ফলে আপনার ঘুমও ভাল হয়।
 
বিটের উপাদান কোলিন (choline) আমাদের শরীরের কোষের আবরণের আকার ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং ঘুমে সহায়তা করে। এছাড়া কোলিন শিক্ষা ও স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন করে, শরীরে চর্বি শোষণ করতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। 
 
৮। বিট জুস স্মৃতিশক্তি ভাল রাখে
বয়স্ক মানুষ বীট জুস পান করলে তা তাদের মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে, যার ফলে বৃদ্ধ বয়সে স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার সম্ভাবনা কমে। বীটে আছে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট যা নাইট্রাইটে রূপান্তরিত হয়। এই নাইট্রাইট রক্তনালি পরিষ্কার রাখে এবং দেহে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং দেহের অন্যান্য অংশে যেখানে অক্সিজেন কম সেখানে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।
 
ট্র্যান্সলেশানাল সায়েন্স সেন্টারের গবেষকরা ৭০ বছর বা তার বেশী বয়স্ক মানুষের উপর ৪ দিন ধরে একটি গবেষণা চালান। অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে একটি দলকে সকালের নাস্তার সাথে ১৬ আউন্স বিট জুস পান করতে দেয়া হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যেসব বয়স্ক ব্যাক্তি নাস্তার সাথে বীট জুস পান করেছিলেন তাঁদের মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাঁদের স্মৃতিভ্রংশের সম্ভাবণা কমেছে। 
 
এখন দেখা যাক বীট জুসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি বীট জুস পান করতে পারেন কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই, কিন্তু অতি মাত্রায় বীট জুস সেবন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াঃ
 
বিটের রস পান করলে প্রস্রাবের রঙ লাল বা গোলাপি হতে পারে, যাকে বলা হয় বীটুরিয়া (beeturia)। তবে এটা কোন সমস্যা নয়। আগেই বলা হয়েছে বীট জুসের নাইট্রেট ব্লাড প্রেশার কমায়, তাই যারা ব্লাড প্রেশারের ঔষধ খাচ্ছেন তাদের উচিৎ বীট জুস পান শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া। এছাড়া যাদের মধ্যে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশী তাদের উচিৎ বীট জুস পান থেকে বিরত থাকা। বীটের উপাদান অক্সেলেট (oxalates) কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK