সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
জ্বর হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ, কেননা ডেঙ্গু এবং করোনা, এই দু’টি রোগেরই অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। জ্বরের সাথে যদি অন্যান্য উপসর্গ যেমন সর্দি-কাশি, প্রস্রাবে জ্বলাপোড়া থাকে তাহলে সেটা ডেঙ্গু না হয়ে অন্য কিছুও হতে পারে। তবে জ্বর হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ
-
জ্বর (১০১ থেকে ১০২ ডিগ্রি)। এই জ্বর একটানা থাকতে পারে আবার একবার ঘেমে জ্বর ছাড়ার পর আবার জ্বর আসতে পারে।
-
শরীরে ব্যথা
-
মাথা ব্যথা
-
চোখের পিছনে ব্যথা
-
ত্বকে লালচে দাগ (rash) দেখা দিতে পারে। তবে এটা না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি করবেন?
ডেঙ্গুর আরেকটি প্রকার আছে, সেটি হচ্ছে রক্তপাতসহ ডেঙ্গু জ্বর। এক্ষেত্রে উপসর্গঃ
-
২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ কিংবা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
-
জ্বরের পাশাপাশি বুকে কিংবা পেটে পানি জমে যাওয়া।
বিশ্রাম
ডেঙ্গু জ্বর হলে বিশ্রাম অত্যাবশ্যক। ঘর গোছানো, ইত্যাদি কাজ বাদ দিয়ে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
ডেঙ্গু রোগীর খাবার
-
ডেঙ্গুর সবচেয়ে ভাল পথ্য হচ্ছে তরল জাতীয় খাবার। খাবার স্যালাইন ছাড়াও পান করতে হবে লেবুর সরবত, ডাবের পানি, ফলের জুস (কমলা, মাল্টা আনারস), ইত্যাদি। সবসময় পানি পান করতে হবে এটা ঠিক নয়, তবে পানি জাতীয় তরল খাবার খেতে হবে।
-
সবজির জুসও খেতে পারেন।
-
জুসের পাশাপাশি খেতে পারেন পেঁপে, কমলা, আনারস, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, ইত্যাদি।
-
ব্রকলি, গাজর, টমেটো, শসা, ইত্যাদি খেলে উপকার পাবেন। ব্রকলিতে আছে ভিটামিন কে, যা ডেঙ্গুতে রক্তপাতের ঝুঁকি কমায়।
-
ডেঙ্গু রোগীকে প্রতিদিন নানা ধরনের স্যুপ, যেমন সবজির স্যুপ, টমেটোর স্যুপ, চিকেন স্যুপ বা কর্ন স্যুপ দিন। এতে পানির চাহিদা পূরণ হবে, পাশাপাশি পুষ্টিও নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া নরম সেদ্ধ করা খাবার, জাউ, পরিজ, ওটমিল, ইত্যাদি খেতে পারেন।
-
অতিরিক্ত মশলা ও চর্বি তেলযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। খাদ্য তালিকায় আমিষ থাকতে হবে। ডিম, মাছ, মুরগি, দুধ, ইত্যাদি খেতে পারেন।
ঔষধ – যেসব খাবেন এবং যেসব খাবেন না
ডেঙ্গু জ্বরে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪টি প্যারাসিটামল ঔষধ খেতে পারবেন। চিকিৎসকদের মতে প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কারও যদি হৃদপিন্ড, লিভার, এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন চিকিৎসকরা। কারণ, ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ সেবনে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
হাসপাতালে কখন ভর্তি হবেন?
ডেঙ্গু জ্বরকে ‘এ’, ‘বি,’ এবং ‘সি’ – এই ৩টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।
‘এ’ ক্যাটাগরিঃ বেশীরিভাগ রোগীই এই ক্যাটাগরির। এই ক্যাটাগরির রোগীদের শুধু জ্বর থাকে এবং খুব সিরিয়াস কোন উপসর্গ থাকে না। এই রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না।
‘বি’ ক্যাটাগরিঃ এই ক্যাটাগরির রোগীদের আর সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও শরীরে কিছুল লক্ষণ দেখা যায়। লক্ষণগুলি হচ্ছে পেটে ব্যথা, প্রচুর বমি হওয়া এবং কিছু খেতে না পারা। অনেক সময় দু’দিন জ্বরের পর শরীর ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াটাই নিরাপদ।
‘সি’ ক্যাটাগরিঃ এই ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এসব রোগীদের কারও কারও আইসিইউ তে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।
পরিশেষে
এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয় এটা সবারই জানা। এই মশার গায়ে সাদা ডোরা কাটা দাগ থাকে। তবে এই মশা দিনে কামড়ায় এবং শুধু এডিস মশার স্ত্রী প্রজাতিই কামড়ায়। এদের কামড়ানোর প্রবণতা সবচেয়ে বেশী সূর্যোদয়ের ২ ঘন্টা পরে এবং সূর্যাস্তের বেশ কয়েক ঘন্টা আগে। তবে এরা রাতেও কামড়াতে পারে যদি জায়গাটি হয় খুব বেশী আলোকিত। এই মশার হাত থেকে বাঁচা একটু কঠিন কারণ এরা পেছন দিক থেকে এসে কামড়ায় এবং সাধারণতঃ কামড়ায় কনুই বা হাঁটুতে।
এডিস মশা মানুষ ছাড়াও কুকুর, বেড়াল, গরু ইত্যাদি গৃহপালিত পশুকেও কামড়াতে পারে। আরেকটা জিনিষ মনে রাখতে হবে; এডিস মশা দূর থেকে এসে কামড়ায় না, এরা সাধারণতঃ এদের জন্মস্থানের কয়কশ’ ফুট জায়গার মধ্যেই মানুষকে কামড়ায়। তাই বাসার আশে পাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা উচিৎ এবং পানি জমে থাকলে তা ফেলে দেয়া উচিৎ।
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক