সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৩:০৮
ব্রেকিং নিউজ

৪২ নাগরিকের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিইসি সব অভিযোগ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

৪২ নাগরিকের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিইসি  সব অভিযোগ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ ও আর্থিক অনিয়মের যেসব অভিযোগ তুলেছেন ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক, সেগুলোকে অসত্য, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। সিইসি বলেন, ‘জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে, তাই বিষয়টি স্পষ্ট করতে এ সংবাদ সম্মেলন। ইসিকে দায়ী করে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা অনভিপ্রেত ও আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।’ লিখিত বক্তব্যের বাইরে সিইসি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন নেননি। সংবাদ সম্মেলনে সিইসি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তবে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ৪২ বিশিষ্ট নাগরিকের রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনে যাঁর অভিযোগ যুক্ত ছিল, সেই নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার উপস্থিত ছিলেন না।

গত ১৪ ডিসেম্বর কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ এনে রাষ্ট্রপতির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। চিঠিতে ওই সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’-এর মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। গত ১৯ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনারদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে অথবা নৈতিক কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। গত ২০ ডিসেম্বর বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা বক্তব্য জানতে চাইলে সিইসি বলেছিলেন, ‘এটি রাষ্ট্রপতি দেখছেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না।’

নির্বাচনী প্রশিক্ষণের জন্য বক্তৃতা না দিয়ে বিশেষ বক্তা হিসেবে সম্মানী গ্রহণের যে অভিযোগ চিঠিতে করা হয়েছে, সে বিষয়ে সিইসি বলেন, প্রশিক্ষণ ব্যয়ে আর্থিক অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। আগের কমিশনের অভিজ্ঞতার আলোকে ছয়-সাত লাখ জনবলের দক্ষতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৫ জন বিশেষ বক্তা, কোর্স উপদেষ্টা ও অন্যান্য প্রশিক্ষকসহ নির্বাচনী প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা এবং বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এ পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন করে। কর্মপরিকল্পনায় ১৫ জন বিশেষ বক্তার সম্মানী বাবদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক কোটি চার লাখ টাকা এবং পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৪৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা সংস্থান রাখা হয়। দ্য চিফ ইলেকশন কমিশনার (রেমুনারিশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনাররা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মতো সুবিধা পান বিধায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত হারেই এই কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ জন বিশেষ বক্তা প্রশিক্ষণ প্রদান করে সম্মানী গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ কোর্সের  উপদেষ্টা হিসেবে ইসির সচিব সম্মানী নিয়েছেন এবং প্রশিক্ষণ খাতের অব্যবহৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক ট্রেজারিতে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

সংবিধান ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন অনুযায়ী, নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রশাসনিক ব্যয় খাতের জন্য কমিশন চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সব ব্যয় অডিটযোগ্য। অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি না হলে ব্যয়কৃত অর্থ কোষাগারে ফেরত যাবে। সব প্রক্রিয়া দালিলিক প্রমাণভিত্তিক। এ ক্ষেত্রে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘একাদশ সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ১৫ জন বিশেষ বক্তার জন্য কর্মপরিকল্পনায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দই ছিল না। সেখানে নির্বাচন কমিশনারদের ‘বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার নামে দুই কোটি টাকার মতো ‘আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম’ মর্মে অভিযোগটি অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, যা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৭(৩) অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু প্রশিক্ষণ প্রদানের সম্মানীর সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। ফলে সংবিধান লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠতে পারে না এবং সংবিধানের অপব্যাখ্যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়।

কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে সিইসি বলেন, ‘নিয়োগপ্রক্রিয়াটি ছিল নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত। নিয়োগের যাবতীয় প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করে নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় কোনো মহল থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কোনো প্রমাণ ছাড়াই চার কোটি চার লাখ টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে মর্মে যে অভিযোগ করা হয়েছ, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।’নিয়মবহির্ভূতভাবে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করার অভিযোগ প্রসঙ্গে সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তাদের প্রাধিকারভুক্ত একটি জিপ (পাজেরো স্পোর্টস) ও একটি কার (টয়োটা করোলা) এবং তার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করে। নতুন গাড়ি বিলাসবহুল তো নয়ই, অতি সাধারণ মানের। নির্বাচন কমিশন গাড়ি বিলাস করেনি, বরং তিন বছর ছয় মাস প্রাধিকারভুক্ত গাড়ি পায়নি। তারা প্রকল্প থেকে সচিবালয়ের জন্য দেওয়া গাড়ি শেয়ার করে ব্যবহার করেছেন মাত্র। কাজেই নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

ইভিএম ক্রয় ও ব্যবহারে অসদাচরণ ও অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ইভিএম আমদানি করেনি। ২০১৮ সালে একনেকে ইভিএম প্রকল্প অনুমোদনের পর পিপিআর, ২০০৮-এর বিধান-পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তা ক্রয় করা হয়েছে। ইভিএম কেনার কোনো বিল কমিশনের কাছে ন্যস্ত হয় না। এ বিল সরকারিভাবে সরাসরি সেনা কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করা হয়। এ কাজে নির্বাচন কমিশন কোনো আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে না। এখানে দুর্নীতির কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’ জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ অনিয়মের অভিযোগ খণ্ডন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন।

বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। নির্বাচন নিয়ে তাঁরা কোনো অভিযোগ তোলেননি। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ দল সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছে। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতেও কোনো গুরুতর অনিয়ম ও অসদাচরণের কোনো বিষয় প্রচার করা হয়নি। সিইসি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অনেক ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করা হয় এবং পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বাতিল করে সেখানে পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০২০ সালের ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বাতিল করা হয়। অভিযোগ সঠিক হলে যেকোনো পর্যায়ে নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের প্রচুর উদাহরণ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ভোটে অনিয়মসংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে যে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে, তা অনভিপ্রেত এবং আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা চলে গেছে—এমন মন্তব্য ভিত্তিহীন দাবি করে সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি পদে দুই থেকে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট পড়ে ৬০-৮০ পার্সেন্ট।
উত্তরণ বার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK