মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৬:০৩

বঙ্গবন্ধু টানেলে প্রথমবার হেঁটে পার হয়ে যেমন লেগেছে

বঙ্গবন্ধু টানেলে প্রথমবার হেঁটে পার হয়ে যেমন লেগেছে

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : টিবিএম এমন একটি যন্ত্র, যা বিভিন্ন মাটি ও শিলা স্তরের মধ্যে বৃত্তাকারে সুড়ঙ্গ খনন করে। বঙ্গবন্ধু টানেলে এ যন্ত্রদানব ব্যবহার করে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি থেকে মাটি কেটে আনোয়ারা উপজেলায় বের হয়ে গেছে। তিনতলার সমান উচ্চতার ক্যাপসুল আকারের যন্ত্রদানবটি প্রথম টিউবের কাজ শেষ করেছে। এখন আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি পর্যন্ত ফিরতি কাজটি করছে। শক্ত শিলা থেকে বালু, যেকোনো কিছুর ভেতর দিয়ে সুড়ঙ্গ খনন করার জন্য এ এক্সপার্ট যন্ত্রটির কার্যক্ষমতা সচক্ষে দেখেছেন নুর মোহাম্মদ।  

তিনি বঙ্গবন্ধু টানেলে সিগন্যাল ম্যান হিসেবে কাজ করছেন। অর্থাৎ তার সিগন্যালে এখানে মালামাল লোড-আনলোডের কাজগুলো হয়ে থাকে। টিবিএম যখন আনোয়ারা অংশে বের হয়ে যায় ওইদিনও নেভাল একাডেমি অংশে সারাদিন কাজ করেছেন তিনি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তার দায়িত্ব পড়ে আনোয়ারা প্রান্তে। নুর মোহাম্মদ যেদিন প্রথম সুড়ঙ্গপথটি পাড়ি দেন, সেদিন ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজের পর নেভাল একাডেমি অংশের সুড়ঙ্গপথ দিয়ে হাঁটা শুরু করেন তিনি। সুড়ঙ্গপথে ঢোকার আগে স্মৃতি ধরে রাখতে নিজের মুঠোফোনে তার সহকর্মীদের দিয়ে ছবিও তোলেন।

নুর মোহাম্মদ জানান, সুড়ঙ্গপথে ঢোকার আগে যেখানে দিনের ফকফকা আলো, কর্ণফুলী নদীর জাহাজ, কলকারখানার শব্দ ও মানুষের কোলাহল। সেখানে স্বাভাবিকভাবে কিছু দূর যাওয়ার পরই নিমিষেই উধাও এসব। বিদ্যুতের বাতি ছাড়া অন্যসব অনুপস্থিত ও নিস্তব্ধ। তিনি বলেন, পুরো সুড়ঙ্গপথটি গোলাকার। নেভাল একাডেমি থেকে আনোয়ারা অংশ পর্যন্ত হেঁটে যেতে ৪০ মিনিটের মতো সময় লেগেছে। তবে দ্রুত হাঁটলে সময় আরও একটু কম লাগতে পারে।

নেভাল একাডেমির কর্ণফুলীর পাশ ঘেঁষে স্ন্যাক রোডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। বয়স ৭৫ এর কাছাকাছি। তিনি একটি চোখে স্পষ্ট দেখেন না, তবে অন্য চোখে দেখতে পান। তার ইচ্ছা মৃত্যুর আগে যেন বঙ্গবন্ধু টানেল দেখে যেতে পারেন। আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। বঙ্গবন্ধু কন্যা, বঙ্গবন্ধুর মতোই। তিনি যা বলেন, তা করে দেখান। পদ্মাসেতু করেছেন, মেট্রোরেল করছেন, বুলেট ট্রেন আসছে। দেশকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

তবে তিনি বলেন, কিছু নেগেটিভ খবর পড়ছি। দুর্নীতি, অনিয়ম। এগুলো নির্মূল করা গেলে দ্রুত উন্নত দেশে পৌঁছা যাবে। তবে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি প্রতিরোধে খুব বেশি আন্তরিক।এদিকে টানেল ঘিরে দুই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। সাগর ও কর্ণফুলী নদীতে মাছ ধরা অনেক জেলে টানেলে কাজ করছেন। এ ছাড়া অনেক বেকার যুবক এখানে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।  

মো. হোসেন মিয়া। বাড়ি পতেঙ্গার টানেলের মুখ এলাকায়। বাবা ৩ বছর আগে মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। অনেক জায়গায় কাজ খুঁজেছেন, পরে বঙ্গবন্ধু টানেলে কাজ পান তিনি। তার কাজ মালামাল আনলোড করা। এ কাজে তিনি ঘণ্টায় ৬০ টাকা করে পাচ্ছেন। দিনে ওভারটাইমসহ ১০ ঘণ্টা কাজ করে ৬০০ টাকা পান। মো. হোসেন মিয়া বলেন, টানেলে কাজ করছি আড়াই বছর। এখানকার আয় দিয়ে মা, এক ছোট বোনকে দেখাশুনা করছি। টানেল হওয়ায় অবশ্যই আমরা অনেক খুশি।

মো. আরাফাত নামে আরেক শ্রমিক বলেন, কর্ণফুলী নদীতে মাছ ধরে একসময় জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন দুই বছর ধরে টানেলে কাজ করছি। তিনি বলেন, জাল ফেলে সবসময় মাছ পাওয়া যেত না। যেদিন মাছ পেতাম না, সেদিন সংসার চলত না। এখন টানেলে প্রতিদিন কাজ করছি আর মজুরি পাচ্ছি। শুধু আমি নই, এখানে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও কমে গেছে।
উত্তরণ বার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK