শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৫:৪৫
ব্রেকিং নিউজ

ডায়াবেটিস হলে সেহরি ও ইফতারে কি খাবেন?

ডায়াবেটিস হলে সেহরি ও ইফতারে কি খাবেন?

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
রোজা এলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাধারণ প্রশ্ন হচ্ছেঃ “ডায়াবেটিস রোগীদের কি রোজা রাখা উচিৎ?” 
 
যারা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ঔষধ খাচ্ছেন তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে হবে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই ইন্সুলিন নেয়া চালিয়ে যেতে হবে। ইন্সুলিন নেয়া বন্ধ করলে ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস (diabetic ketoacidosis) নামের ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
 
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কার্যকরি উপায় হচ্ছে সঠিক খাদ্যাভ্যাস। ডায়াবেটিস রোগীরা অনেক খাবারই খেতে পারেন না কারণ, সুস্থ থাকতে চাইলে স্বাদকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রোজার সময় খাবারের বিষয়ে পর্যাপ্ত সচেতন হোয়া উচিৎ।
 
ইফতারে সামান্য কিছু খেলেই দেখবেন মনে হচ্ছে আপনার পেট ভরে গেছে। এর কারণ হচ্ছে রোজা রাখলে আপনার পাকস্থলি সংকুচিত হয়ে পড়ে। তাই রোজা ভাঙ্গার সময় উচিৎ সামান্য খাবার খাওয়া তবে তাতে থাকতে হবে প্রচুর নিউট্রিয়েন্ট এবং ক্যালরি। এতে আপনার পাকস্থলি সংকুচিত থাকবে এবং আপনার মস্তিষ্ককে সিগন্যাল দিবে মেটাবলিক রেট ঠিক রাখতে। 
 
ইফতারে অনেকেই অস্বাস্থ্যকর শর্করাজাত খাদ্য খেলে ফেলেন যা খুবই সুস্বাদু মনে হয়। উচ্চ গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স (৭০ এর বেশী) যুক্ত খাবার দ্রুত হজম হয় এবং যার ফলে ব্লাড সুগার এবং ইন্সুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই আপনার ডায়াবেটিস থাকলে ইফতারে খেতে হবে নিম্ন গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্সের খাবার যেমন সাদা ভাতের পরিবর্তে ঢেঁকি ছাঁটা চাল বা ব্রাউন রাইস, আটার রুটি, ফল-মূল, সালাদ ইত্যাদি।
 
অনেকের কাছে ইফতারে জিলাপি না খেলে ‘ইফতারই হল না’ এমন মনে হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের উচিৎ মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে খুবই কম পরিমাণে খাওয়া।
 
সেহরি এবং ইফতারে যেসব খাবার খাবেন
সেহরিতে অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি পান করবেন
সেহরিতে ভাত খেলে ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, 
সেহরিতে খেতে পারেন একটি রুটির সাথে দুই পিস মাঝারি আকারের গ্রিল চিকেন
ইফতারে খেজুর খেলে তা শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাবে। খেজুরে আছে নিম্ন মাত্রার গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স যার ফলে ব্লাড সুগার বাড়ার ঝুঁকি কম
সেহরি ও ইফতারে টক দই খুবই উপকারি
সেহরি ও ইফতারে খেতে পারেন চিনি ছাড়া লাচ্ছি
সেহরি ও ইফতারে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার বেশী খাবেন। ব্রাউন রাইস, ওটমিল, বার্লি, ইসব গুলের ভূষি, ইত্যাদি।
সেহরি ও ইফতারে লো ফ্যাট দুধ, মাঠা, সামান্য পনির খেতে পারেন।
ইফতারে বাদাম, তৈলাক্ত মাছ, জলপাই, অলিভ অয়েল অনেক শক্তি দিবে এবং ভাল কোলেস্টেরল বা এইচ ডি এল বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
 
যেসব খাবার খাবেন না
চিনি দেয়া শরবত পান থেকে বিরত থাকবেন এবং ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করবেন।
মিষ্টি খাবেন না। জিলাপি খেতে খুব বেশী ইচ্ছে হলে খুব সামান্য পরিমাণে খেতে পারেন। 
ভারী খাবার খেলে পেটফাঁপা ও এসিডিটির সমস্যা হতে পারে, তাই ভারী খাবার খাবেন না।
ক্যাফিন যুক্ত খাবার যেমন কফি, কোক, স্প্রাইট ইত্যাদি থেকে দূরে থাকবেন।
 
রাতের খাবারে যা খাবেন
এক বাটি সালাদ সাথে দু’ টুকরো মুরগীর মাংস 
এক পিস রুটি, ২ টুকরো মাছ খেতে পারেন। 
খাওয়ায় একটু সৌখিন হতে চাইলে অল্প পরিমাণে মোরগ পোলাও সাথে এক বাটি সবজি খেতে পারেন।
 
পরিশেষে
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি সারা রোজার মাস জুড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত গ্লুকোজের মাত্রা মাপতে হবে। কোন কারণে অসুস্থতা বোধ করলে সাথে সাথে গ্লুকোজের মাত্রা মেপে দেখুন। দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ৩০০ এমচি/ডিএল হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। 
রোজার মাসে চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণের সময় পরিবর্তন করে নিন।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK