সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২৩:৩৪
ব্রেকিং নিউজ

নৌকায় ওরা বাঁচার স্বপ্ন দেখে

নৌকায় ওরা বাঁচার স্বপ্ন দেখে

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : রাজশাহীর পদ্মা নদীর মাজারদিয়া গ্রামের মঞ্জুর হোসেন। পদ্মা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। তার নিজের নৌকা নেই। নৌকা ভাড়া করে মাছ ধরতে হয়। এ কারণে মঞ্জুর মনে অনেক কষ্ট। নিজের নৌকায় নদীতে মাছ ধরার ইচ্ছা তার। তার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) একশ মাঝির প্রত্যেককে ১ টি করে নৌকা দিয়েছে। মঞ্জুরও ১ টি নৌকা পেয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীর পদ্মা নদীর তীরে টি-বাঁধে এক আড়ম্বর অনুষ্ঠানে মঞ্জুর হোসেনের হাতে নৌকার বৈঠা তুলে দেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম। ‘শত নৌকায় জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনে বিজিবি’ অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক ২৫ জন মাঝির হাতে নৌকার বৈঠা তুলে দেন। এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন সময়ে সাতক্ষীরার নীলডুমুর, ভোলার চরপাতা, মাওয়া ও মেঘনা ঘাটে ৭৫ টি নৌকা বিতরণ করা হয়।

নৌকা বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বিজিবি রংপুর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কায়সার হাসান মালিক, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, বিজিবি রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তুহিন মো. মাসুদ, বিজিবি রাজশাহী ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে.কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদসহ রাজশাহী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, এই ১০০টি নৌকা শুধুমাত্র ১০০ জন জেলেকেই নয় বরং ১০০টি পরিবার ও পরিবারের সদস্যদেরও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাবে। সীমান্তের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যতই স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে সীমান্ত সংক্রান্ত অপরাধ এবং চোরাচালান ততই হ্রাস পাবে।

বিজিবি ডিজি বলেন, প্রান্তিক জেলেরা দাদন নিয়ে জাল কেনে, নৌকা কেনে। এরপর মাছ ধরে। মাছ বিক্রি করে যে টাকা পান তার একটি বড় অংশ মহাজনদের পকেট এ চলে যায়। তাই জেলেদের সহায়তা করার জন্য তাদের মধ্যে নৌকা বিতরণ করা হলো। যাদের জাল নেই আগামীতে তাদের মধ্যে পর্যায়ক্রমে জালও বিতরণ করা হবে।

মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, অভ্যন্তরে ভারতের ৪০০ মিটার জলসীমা থাকায় রাজশাহীর চরখানপুরবাসিকে ১৩ কিলোমিটার ঘুরে রাজশাহীতে যেতে হয়। তাই এই জলসীমাকে আমরা করিডোর হিসেবে পেতে চাই। আগামী ২২ থেকে ২৬ ডিসেম্বর আসামে অনুষ্ঠিতব্য দুই দেশের ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

বিতরণ করা ২৫ টি নৌকা টি-বাঁধ সংলগ্ন পদ্মা নদীতে পাল তুলে সাজানো হয়। প্রত্যেক মাঝিকে লুঙ্গি, গামছা ও গেঞ্জি দেয় বিজিবি। ৬৫ বছর বয়সী জেলে আইনুদ্দিন জানান, ৩০ বছর ধরে তিনি পদ্মা নদীতে মাছ ধরেন। তার কোন নৌকা নেই। পরে নৌকা ভাড়া করে এতদিন তিনি মাছ ধরতেন। যার নৌকা ভাড়া করতেন মাছ ধরার পর তা বিক্রির একটি বড় অংশ নৌকার মালিককে দিতে হতো। এখন আর কাউকে মাছের ভাগ দিতে হবে না।

পরিতোষ হালদার বলেন, তার বাড়ি বাঘা থানার মীরগঞ্জ এলাকায়। মাছ ধরতে ধরতেই বড় হয়েছি। শীতকালে বেশি মাছ পাওয়া যায় না। এখন যে মাছ পাচ্ছি তাতে সংসার চলছে না। ভাড়া নৌকায় মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে তেমন লাভ থাকে না। এখন থেকে বিজিবির দেয়া নৌকায় মাছ ধরে সংসার চালাতে পারবেন।

উত্তরণ বার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ