সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০২:৫৯
ব্রেকিং নিউজ

মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত টিএসসি

মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত টিএসসি

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ এর প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ আজ বৃহস্পতিবার। পুরোনো গ্লানি, হতাশা আর মলিনতাকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। ইতিমধ্যে শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে টিএসসি এলাকায়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সেখানে নিরাপত্তা জোড়দার করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার ক্যাম্পাসে নববর্ষ উদ্‌যাপনের সব আনুষ্ঠানিকতা বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করতে হবে। তবে এই উৎসবকে ঘিরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দেয়া নির্দেশনাগুলোকে 'উৎসবের সংকোচন' আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ সুষ্ঠুভাবে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। 
 
প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এবারের শোভাযাত্রার তহবিল সংগ্রহের জন্য অনুষদ প্রাঙ্গণে গত এক সপ্তাহ ধরে 'আর্ট ক্যাম্প' হয়েছে। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি বিক্রি করে সংগৃহীত অর্থ খরচ হচ্ছে শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহে। এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে আরও আগে ৷ মুখোশ, ট্যাপা পুতুল, মাছ ও পাখির প্রতিকৃতিসহ লোকসংস্কৃতির নানা উপাদান থাকছে এবারের শোভাযাত্রায়। গতকাল বুধবার শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে-'নির্মল করো মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে'৷
 
করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়নি। ২০২১ সালে হয়েছে সীমিত পরিসরে। দুই বছর পর এবার অনেকটা চেনা রূপে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন হতে যাচ্ছে। তবে প্রতিবার যে সড়কে শোভাযাত্রা হতো, এবার তা বদলেছে ৷ নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সড়কদ্বীপ থেকে বের করা হবে ৷ শোভাযাত্রা শুরু হবে সকাল নয়টায় ৷ শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বর হয়ে পুনরায় টিএসসিতে এসে শেষ হবে ৷ এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে চারুকলা অনুষদের ২২ ও ২৩ তম ব্যাচ৷
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নববর্ষের সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ৩ এপ্রিল কর্তৃপক্ষের ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিকেল পাঁচটার পর কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে ৷ এদিন ক্যাম্পাসে কোনো যানবাহন চলবে না৷ এ ছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও সীমিত জনসমাগম দেখতে চেয়েছে কর্তৃপক্ষ ৷ এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পয়লা বৈশাখে ক্যাম্পাসে মুখোশ পরা ও ব্যাগ বহন করা যাবে না৷ তবে চারুকলা অনুষদের তৈরি করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে ৷ ভুভুজেলা বাজানো ও তা বিক্রি থেকে বিরত থাকতেও সবার প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে৷
 
বিগত বছরগুলোতে বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত করা হলেও এবার বেলা দুইটার মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি ৷ মাঝখান থেকে হঠাৎ কেউ শোভাযাত্রায় ঢুকলে 'কঠোর আচরণের' মুখে পড়তে হবে বলেও নির্দেশনা দিয়েছে তারা ৷ পুলিশের এমন নির্দেশনাকে 'উৎসবের সংকোচন' আখ্যা দিয়ে এটি প্রত্যাখ্যান করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ সুষ্ঠুভাবে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ৷ তারা বলেছে, উৎসবে সময় বেঁধে দেয়ার মাধ্যমে মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী শক্তিকে আরও উৎসাহিত করা হয়৷ গতকাল বুধবার বিকেলে চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে উৎসবের নিরাপত্তা ও সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ৷ সেখানে ডিএমপির নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করেন এই কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ৷
 
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ সামাদ বলেন, উৎসবের সময় বেঁধে দিয়ে মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী শক্তিকে আরও উৎসাহিত করা হয় ৷ এ ধরনের সংকোচন আমরা প্রত্যাখ্যান করি ৷ এটি গ্রহণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমাদের দেশ ও সমাজ পরিচালিত হয়, সেটিকে রক্ষা করতে হলে আরও দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার শপথটাই আমাদের জন্য সঙ্গত ৷ রমজানের কারণে হয়তো সময় বিকেলের দিক দিয়ে কিছুটা কমিয়ে আনতে হতে পারে ৷ কিন্তু কেউ ঢুকতে পারবে না-এটা ঠিক নয় ৷ যাঁরা অংশ নিতে চান, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করব তাঁদের যতটা সম্ভব নিরাপত্তা দিয়ে আমাদের মতো করে উৎসবটি আমাদের মতো করে এগিয়ে নিতে৷
 
সংবাদ সম্মেলনে চারুকলা অনুষদের ডিন ও বাংলা নববর্ষ সুষ্ঠুভাবে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব নিসার হোসেন বলেন, উৎসবের স্বতঃস্ফূর্ততা ও আনন্দ নিয়ে অংশগ্রহণ যেন বিঘ্নিত না হয় এবং মানুষের মনে যেন ভয়ের সঞ্চার হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা সেটি বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানাই ৷ আমরা চাইব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, সেখান থেকে যেন না কমানো হয়৷ এদিকে বাংলা নববর্ষের শেষ দিন চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় ৷ সেখানে অনুষদের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন ৷
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ
আরও সংবাদ