বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৮:৫৬

ব্রিটেন : করোনা টিকার প্রয়োগ শুরু

ব্রিটেন : করোনা টিকার প্রয়োগ শুরু

উত্তরণ বার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৯০ বছর বয়সী মার্গারেট কিনানকে দিয়ে যুক্তরাজ্যে গতকাল মঙ্গলবার শুরু হলো করোনা টিকা প্রয়োগ কর্মসূচি। এর আগে দেশে দেশে টিকার ট্রায়াল চললেও সর্বসাধারণের মাঝে অনুমোদিত টিকার প্রয়োগ এই প্রথম। এর মধ্য দিয়ে ফাইজার ও বায়োএনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনার টিকা সাধারণের নাগালে গেল। চলতি মাসেই এই টিকার প্রথম চালান কানাডা পাবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। যুক্তরাষ্ট্র ও প্রতিবেশী ভারতেও শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে টিকা কার্যক্রম। এরই মধ্যে সোমবার  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বলেছে, তারা করোনার  টিকা বাধ্যতামূলক করার পক্ষে নয়।
 
যুক্তরাজ্যে প্রথম টিকাপ্রাপ্ত মার্গারেট কিনান নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা। গতকাল গ্রিনিচ মান সময় ৬টা ৩১ মিনিটে তাঁকে মধ্য ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রির ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ফাইজার-বায়োএনটেক টিকাটি দেয়া হয়। কিনানকে টিকাটি প্রয়োগ করেন নার্স মে পারসনস।
 
আগামী সপ্তাহে মার্গারেট কিনান ৯১ বছরে পা রাখবেন। জন্মদিনের ঠিক আগে করোনার টিকা পেয়ে তিনি বেশ উত্ফুল্ল। তিনি টিকা নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার। বলেছেন, ‘আমি হাসপাতালের কর্মীদের শুভেচ্ছা না জানিয়ে পারছি না। আমি মনে করি, সবারই টিকা নেয়া উচিত। আমি যদি ৯০ বছরে টিকা নিতে পারি, তা হলে সকলেই নিতে পারবেন।’
 
আর টিকা প্রয়োগকারী নার্স মে পাসনস বলেছেন, করোনার লড়াইয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পেরে তিনি আনন্দিত। এ যেন এক ঐতিহাসিক মুহৃর্ত তাঁর কাছে। তিনি বলেছেন, ‘শেষ কয়েক মাস, জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার হয়ে আমাদের কাজ করতে হয়েছে। সময়টা কঠিন ছিল, কিন্তু আমরা জানতাম, অন্ধকার সময়ের পরে একটা আলো আছে।’ এই ঐতিহাসিক দিনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘বিজ্ঞানী, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক থেকে শুরু করে যাঁরা প্রতিদিন নিয়ম মেনে চলেছেন, তাঁদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
 
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফাইজার-বায়োএনটেকের যে আট লাখ ডোজ দেওয়া হবে, কিনানকে দিয়েই তার যাত্রা শুরু হলো। চলতি মাসের মধ্যে দেশটিতে আরো ৪০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের সুরক্ষা এবং জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে শুরু হওয়া এ টিকাদান কর্মসূচিতে ৮০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তি ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে ফাইজার-বায়োএনটেকের চার কোটি ডোজ টিকার ক্রয়াদেশ দিয়েছে। দেশটির রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (৯৪) কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা নেবেন বলে খবর বেরিয়েছে।
 
গত ২ ডিসেম্বর ফাইজার-বায়োএনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য। এরপর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে গত শুক্রবার এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বাহরাইন। গত বৃহস্পতিবার বেলজিয়াম থেকে যুক্তরাজ্যে এসে পৌঁছায় ফাইজারের তৈরি করোনার টিকা। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, বেলজিয়াম থেকে ইউরো টানেল হয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছে টিকার এই চালান। কয়েকটি ট্রাকে করে পরিবহনের সময় যানবাহনের গায়ে কিছু লেখা ছিল না। পরে ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের কিছু গোপন স্টোরেজে টিকা পাঠানো হয়।
 
চলতি মাসেই কানাডাতে টিকা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ‘টিকার আগাম সরবরাহের বিষয়ে ফাইজারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। ডিসেম্বর মাসেই ফাইজার দুই লাখ ৪৯ হাজার ডোজ টিকা সরবরাহ করবে। প্রথম চালান আগামী সপ্তাহেই এসে পৌঁছবে। আরো লাখ লাখ ডোজ ২০২১ সালের মধ্যে আসতে থাকবে।
 
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে শিগগিরই টিকাকরণ
 
অনুমোদন পাওয়া মাত্রই ব্যাপক পরিসরে টিকার প্রয়োগের প্রস্তুতি নিয়েছে চলমান মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, ফাইজারের টিকার অনুমোদনের বিষয়ে আগামী ১০ ডিসেম্বর এবং মডার্নার টিকার বিষয়ে তারা ১৭ ডিসেম্বর বসবে। ফাইজারের টিকা অনুমোদন পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশটির সব হাসপাতালে চালান পৌঁছানোর সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ক্যালিফোর্নিয়া লকডাউন করা হয়েছে।
 
এদিকে প্রতিবেশী ভারতে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকার অনুমোদনের জন্য গত সোমবার আবেদন করেছে সেরাম ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আদর পুনওয়ালা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় কোটি ডোজ উৎপাদন করা হয়েছে। টিকার অনুমোদন হলেই জোরেশোরে উৎপাদন শুরু হবে।
 
‘টিকা বাধ্যতামূলক নয়’
 
ডাব্লিউএইচও সোমবার বলেছে, কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক করার চেষ্টার চেয়ে এর উপকারিতা সম্পর্কে লোকজনকে বুঝানো অনেক বেশি কার্যকর হবে। সংস্থার জরুরি বিষয়ক পরিচালক মাইকেল রায়ান বলেন, ‘টিকার গল্প একটি সুসংবাদের গল্প। এটি জীবাণু প্রতিরোধে মানুষের সম্ভাবনা ও উদ্যমের বিজয়। আমাদের দরকার মানুষকে বুঝানো, রাজি করানো।’
 
ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক করা হবে কি না—এ ধরনের প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা যারা জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করি, তাদের উচিত টিকার নানা দিক নিয়ে মানুষকে বুঝানো এবং তাদের সিদ্ধান্ত তাদেরই নেওয়ার সুযোগ দেয়া।’এ ছাড়া সংস্থার টিকাদান বিভাগের পরিচালক ওব্রিয়েন এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমি মনে করি না এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন আছে, বিশেষ করে এই টিকার ক্ষেত্রে। বরং এর পরিবর্তে লোকজনকে উৎসাহিত করা দরকার।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি না যে টিকা নিতে বাধ্য করা হচ্ছে এমন কোনো দেশকে আমরা দেখব।’ সূত্র : বিবিসি, এএফপি।
 
উত্তরণ বার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK