রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৬:৩৪
ব্রেকিং নিউজ

হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আপনার হার্টকে শক্তিশালী করবে এই ১৪টি খাবার

হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আপনার হার্টকে শক্তিশালী করবে এই ১৪টি খাবার

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
হৃদরোগ সারা বিশ্বে এক তৃতীয়াংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী। প্রতিদিনের খাবার আপনার হার্টের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে এবং আপনার হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি করতে পারে। এমন কিছু খাবার আছে যা রক্তচাপ, ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং প্রদাহ – হৃদরোগের ঝুঁকির এসব গুণককে প্রভাবিত করে।
 

আপনার হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী করতে আপনার উচিৎ নিয়মিত এই ১৪টি খাবার খাওয়াঃ

১। সবুজ শাক সবজি
পালং শাক, পাট শাক, ইত্যাদি সবুজ শাক ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্টের জন্য বিখ্যাত। বিশেষ করে এগুলোতে আছে প্রচুর ভিটামিন কে, যা আপনার ধমনীকে সুস্থ রাখবে এবং সুষ্ঠভাবে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করবে। এছাড়া এসব শাকে থাকা নাইট্রেট ব্লাড প্রেশার কমায় এবং ধমনীকে শক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। একটি গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত সবুজ শাক খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৬% কমে।
 
২। গোটা শস্য (হোল গ্রেইন)
গোটা শস্যের তিনটি ভাগ – জার্ম, এন্ডোস্পার্ম এবং ব্র্যান – সবই নিউট্রিয়েন্টে পরিপূর্ণ। পূর্ণ শস্যের কিছু উদাহরণ হচ্ছে আটা, ব্রাউন রাইস, ওট, রাই, বার্লি, বাকহুইট এবং কিনোয়া। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত পূর্ণ শস্যের খাবার খেলে হৃদপিন্ড সুস্থ থাকে।
 
৩। বেরি
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ইত্যাদিতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় পরিপোষক যা আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এসব বেরিতে আছে এন্থোসায়ানিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে শরীরকে রক্ষা করে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
 
৪। আভোকাডো
আভোকাডোতে আছে প্রচুর স্বাস্থ্যকর মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা গবেষণামতে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত আভোকাডো খায় তাদের এলডিএল কোলেস্টেরল (খারাপ কোলেস্টেরল) এর মাত্রা কমে এবং মেটাবলিক সিন্ড্রোম এর ঝুঁকি কমে। এছাড়া আভোকাডোয় আছে প্রচুর পটাশিয়াম, যা হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে। শুধু একটি আভোকাডোয় আছে ৯৭৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, যা দিনের চাহিদার ২৮%।
 
৫। তৈলাক্ত মাছ
ইলিশ, পাবদা, পাঙ্গাস, স্যামন, টুনা, ইত্যাদি মাছে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত মাছ খেলে টোটাল কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, ফাস্টিং ব্লাড সুগার এবং সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার কমে।
 
৬। আখরোট
আখরোটে আছে প্রচুর ফাইবার এবং ম্যাগনেশিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজ। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত আখরোট খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। একটি গবেষণায় দেখা যায় যারা নিয়মিত আখরোট খান তাদের ব্লাড প্রেশার, এলডিএল কোলেস্টেরল (খারাপ কোলেস্টেরল) এবং টোটাল কোলেস্টেরল কমে।
 
৭। বিন, ডাল
কিডনি বিন, মসুর ডাল, মুগ ডাল, ইত্যাদি হার্ট ভাল রাখতে সহায়ক। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছ বিন খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। ২৬টি গবেষণার একটি রিভিউতে দেখা যায় বেশী বেশী বিন খেলে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকখানি কমে। এছাড়া অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বিন খেলে ব্লাড প্রেশার এবং প্রদাহ কমে।
 
৮। ডার্ক চকোলেট
ডার্ক চকোলেটে আছে ফ্ল্যাভনয়েড নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী রাখে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত চকোলেট খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। একটি বড় মাপের গবেষণায় দেখা যায় যারা সপ্তাহে কম পক্ষে ৫দিন চকোলেট খেয়েছেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় ৫৭% কম ছিল। 
 
৯। টমেটো
টমেটোতে আছে প্রচুর লাইকোপিন, যা একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট। এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে ও অক্সিডেটিভ ড্যামেজ রোধ করে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। গবেষণায় দেখা গেছে যাদের রক্তে লাইকোপিন কম তাদের হার্ট এটাক ও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশী।
 
১০। কাঠবাদাম
কাঠবাদাম খুবই সুস্বাদু এবং এতে আছু প্রচুর নিউট্রিয়েন্ট ও বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ও মিনারেল, যা হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী করতে কাজ করে। এছাড়া কাঠাবাদামে আছে হার্টের জন্য উপকারি মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ফাইবার। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল ও টোটাল কোলেস্টেরল কমে এবং এইচডিএল কোলেস্টেরল (ভাল কোলেস্টেরল) বৃদ্ধিপায়, ফলে ধমনীতে প্ল্যাক হওয়া বন্ধ হয় এবং ধমনী ক্লিয়ার থাকে।
 
১১। বীজ
চিয়া সিড, তিসির বীজ, সূর্যমুখির বীজ, কুমড়োর বীজ, ইত্যাদি হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে এসব বীজ নিয়মিত খেলে প্রদাহ, ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস পায়, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। গবেষণায় দেখা গেছে তিসির বীজ, চিয়া সিড, ইত্যাদি নিয়মিত খেলে টোটাল কোলেস্টেরল, এলডিএল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমে এবং উপকারি কোলেস্টেরল এইচডিএল বৃদ্ধি পায়।
 
১২। রসুন 
হাজার বছর ধরে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে মানুষ রসুন ব্যবহার করে আসছে। সাম্প্রতিক গবেষণায়ও জানা গেল রসুনের শক্তিশালী ঔষধি গুণাগুণ আছে এবং এটা হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে। রসুনের উপাদান এলিসিন (Allicin) এর আছে অনেক ঔষধি গুণ।
 
একটি গবেষণায় অংশগ্রহনকারীদের ২৪ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৬০০-১৫০০ মিলিগ্রাম রসুনের নির্যাস খেতে দেয়া হয়। ফলাফলে দেখা যায় রসুনের কার্যকারিতা ছিল ব্লাড প্রেশার কমানোর ঔষধের মতই। অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায় রসুন টোটাল কোলেস্টেরল এবং এলডিএল কোলেস্টেরল (খারাপ কোলেস্টেরল) কমায়।
 
১৩। অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলে আছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ কমায় এবং ক্রনিক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়া এতে থাকা মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদপিন্ড শক্তিশালী রাখে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা বেশী বেশী অলিভ অয়েল খেয়েছেন, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অন্যান্যদের চেয়ে ৩৫% কম ছিল। এছাড়া আরও দেখা যায় যে, বেশী বেশী অলিভ অয়েল খেলে হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৮% কমে। অন্যান্য আরও গবেষণায় দেখা যায় অলিভ অয়েল ব্লাড প্রেশার কমায়।
 
১৪। গ্রিন টি
গ্রিন টি’তে আছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। গ্রিন টি মেদ ঝরাতে এবং ইন্সুলিন সেন্সিটিভিটির উন্নয়ন করে। গ্রিন টি’র পলিফেনল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতি রোধ করে, প্রদাহ কমায় এবং হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী রাখে। ২০টি গবেষণার একটি রিভিউতে দেখা যায় বেশী বেশী গ্রিন টি পান করলে এলডিএল কোলেস্টেরল (খারাপ কোলেস্টেরল) এবং টোটাল কোলেস্টেরল কমে।
 
শেষ কথা
অসংখ্য গবেষণা একটি জিনিষই প্রমাণ করছে, সেটা হলো হৃদরোগ ও খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে একটি যোগসূত্র আছে। আপনি আপনার প্লেটে যা খাবেন সেটা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলবে। আমার এই লিস্টের হৃদপিন্ড বান্ধব খাবারগুলি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখলে আপনার হার্ট শক্তিশালী থাকবে এবং আপনাকে হৃদরোগ থেকে রক্ষা করবে।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK