রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২২:১৭
ব্রেকিং নিউজ

বরগুনার দুই নদ-নদীর সংযোগকারী খালের খনন শেষ পর্যায়ে

বরগুনার দুই নদ-নদীর সংযোগকারী খালের খনন শেষ পর্যায়ে

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : জেলা শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত ভারানি খালটি খাকদোন নদ ও পায়রা নদীর সংযোগকারী খাল। নৌ চলাচল ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ খালটি অবৈধ দখল ও ভরাটের কারণে দীর্ঘ দিন মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে ছিলো। পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্প্রতি খালটি পুনঃখনন শুরু করায় অবশেষ প্রাণ ফিরে পাচ্ছে বরগুনার এ দুই নদ-নদীর সংযোগ রক্ষাকারী ভারানী খাল। খাকদোন নদের এ শাখা খালটি বরগুনা শহরের মাছবাজার এলাকা মাদরাসা সড়ক হয়ে  বরগুনা সদর ও বুড়িরচর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে দক্ষিণে সাত কিলোমিটার গিয়ে পায়রা নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে। এক সময়ে বরগুনা সদর উপজেলার সঙ্গে নৌপথ কেন্দ্রিক   ব্যবসা বাণিজ্যের নির্ভরযোগ্য চলাচলের মাধ্যম ছিল খালটি। দখলদারদের দৌরাত্ন্য ও দূষণে সময়ের ব্যবধানে এটি মরা খালে পরিণত হয়। একই সঙ্গে খালের আরও সাতটি শাখা খালেরও একই অবস্থা হয়। ২০১৭ সালে স্থানীয় পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকরা খালটি দখলমুক্ত করতে আন্দোলন শুরু করেন। ওই বছরের ২৮ মার্চ ও ১০ এপ্রিল দুই দফায় বরগুনার খাকদোন নদ ও ভারানি খাল অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। 
 
বরগুনা জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহায়তায় পৌরসভা অংশের দেড় কিলোমিটার এলাকার উভয় পাড়ে ১৩৫ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা তৈরি করে। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের জন্য উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খাল উদ্ধারে আইনি সহায়তা চেয়ে একটি আবেদন করে। একই মাসে খালটির দখল উচ্ছেদ ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে বেলা উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করে। প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিব আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বরগুনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) খালটি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
এরই প্রেক্ষিতে বরগুনা জেলা প্রশাসন ভূমি অফিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ডিসেম্বরে শেষ হয়। এরপর বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটি পুনঃখননের প্রকল্প হাতে নেয়।
 
বরগুনার পাউবো কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভারানি খালের খনন কাজ শুরু হয়। চট্টগ্রাম জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গরীবে নেওয়াজ ও পটুয়াখালী জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল মামুন এন্টারপ্রাইজ যৌথভাবে এ খাল খননের প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায়। এ কাজের দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ স্থান ভেদে ২৬ থেকে ৩০ মিটার বা ৮৫ থেকে ১০০ ফুট ও নি¤œস্তরের প্রস্থ ১২ মিটার বা ৩৯.৩৬ ফুট, গভীরতা ১.৫ মিটার থেকে ২ মিটার পর্যন্ত বা ৫ ফুট থেকে ৬.৫০ ফুট। গতবছরের আগস্ট মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খননকাজ শুরু করে। বৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় খননকাজ বন্ধ থাকলেও শীত মৌসুমের শুরু থেকে পুরোদমে ফের খনন শুরু হয়। বর্তমানে খালটির খনন প্রায় শেষ পর্যায়ে। বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, খালটি দখলমুক্ত করতে আমরা আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খননকাজ শেষ হলে এটিকে ঘিরে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা যায় কি না, তা নিয়ে পৌর মেয়রের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসবো।
উত্তরণবার্তা/এআর 
 
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK