মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৫:১৯
ব্রেকিং নিউজ

১ লাখের জাল নোটের দাম মাত্র ১৫ হাজার টাকা

১ লাখের জাল নোটের দাম মাত্র ১৫ হাজার টাকা

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক :  টেবিলের উপরে বসানো হয়েছে কম্পিউটার, যুক্ত করা হয়েছে প্রিন্টার। মাউসে চাপ দিলেই বেরিয়ে আসছে হাজার ও পাঁচশ টাকার চকচকে নোট। তবে এসব টাকা আসল নয়, সবই জাল।  ৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে কোটি টাকার বেশি জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি চলছিল ঢাকার মিরপুর পল্লবীর একটি বাড়িতে। দীর্ঘ দশ বছর ধরে এমন জাল টাকা তৈরি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিত ছগির হোসেন ও দলের সদস্যরা। কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তা পর্যায়ে এসব জাল নোট ছড়িয়ে দিতে দেশজুড়ে ছিল ডিলার। পুরো এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরিতে খরচ হতো চার হাজার টাকা। এরমধ্যে একহাজার টাকার এক লাখের বান্ডিল ১৫ হাজার টাকা এবং পাঁচশ টাকার একলাখের বান্ডিল ১০ হাজার টাকা বিক্রি করা হতো।
 
৩ ডিসেম্বর সোমবার রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা ছগির হোসেন সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা সমমানের জাল নোট, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুইটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, তিনটি প্রিন্টারসহ জাল নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন, ছগির হোসেন, মোছা. সেলিনা আক্তার পাখি ও রুহুল আমিন।
 
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানিয়েছেন, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জাল নোট তৈরি করে বিভিন্ন লোকদের কাছে স্বল্প মূল্যে জাল নোট বিক্রি করে আসছিল। চক্রটির মূলহোতা গ্রেফতার ছগির হোসেন এবং অন্যান্যরা তার সহযোগী। চক্রের সঙ্গে ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছে।
 
১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে একটি হোটেল বয়ের কাজ নেয় ছগির। পরবর্তীতে ভ্যানে ফেরি করে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রয় শুরু করে। গার্মেন্টস পণ্য বিক্রয়ের সময়েই ছগিরের সঙ্গে ইদ্রিস নামক এক জাল টাকা কারবারির পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক ও জাল নোট তৈরির হাতেখড়ি হয়।
 
ছগির প্রথমে জাল নোট বিক্রি ও পরবর্তীতে সে জাল নোট তৈরির বিষয় রপ্ত করে। ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। বছরখানেক জেল খেটে পুনরায় সে ২০১৮ সাল হতে জাল নোট তৈরি শুরু করে। তৈরী করা জাল নোটগুলো তার চক্রে থাকা অন্যান্য সহাযোগী রুহুল আমিন, সেলিনা ও অন্যান্য ৭/৮ জনের মাধ্যমে বিক্রয় করে আসছিল।
 
মূলহোতা ছগির নিজেই পুরান ঢাকা হতে জাল নোট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি ক্রয় করে। তার ভাড়া বাসায় গোপনে বিশেষ কৌশলে এ-৪ সাইজের ২টি টিস্যু পেপার একসাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রঙ্গিন প্রিন্টারে ডিজাইনকৃত টাকা তৈরি করতো। সে নিজেই প্রিন্টিং ও কাটিং করতো। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রিন্টিংয়ের কাজে অন্যান্যদের সম্পৃক্ত করা হতো না। জাল নোট তৈরির পর সে তার অন্যান্য সহযোগিদের মোবাইলে কল করে তার কাছ থেকে জাল নোট নিয়ে যেতে বলতো।
 
প্রতি এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরিতে ছগিরের খরচ হতো ৫/৬ হাজার টাকা। আর তিনি লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি করতেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে। তার সহযোগিরা মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ ও বিক্রি করতো। টার্গেট বা চাহিদা অনুযায়ী ছগির প্রতিমাসে তার সহযোগিদের বোনাসও দিতো।
 
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ছগির জানিয়েছে, করোনাকালীন সময়ে মাঝে মাঝে ছগির নিজেও এ জাল নোট স্থানীয় বাজারে ব্যবহার করতো। কয়েকবার সে সাধারণ জনগণের হাতে ধরাও পড়েছিল। সাধারণত কোনো মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠানে তারা জাল নোট বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহার করত। সম্প্রতি পূর্বাচলে আয়োজিত বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তারা তৈরির পরিকল্পনা করে ছগির। এলক্ষ্যে দীর্ঘ সময় ধরে সে জাল টাকা তৈরি করে আসছিল। ২০১৭ সাল থেকে ১০ কোটি টাকা মূল্যমানের জাল টাকা তৈরি করেছে।
 
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে গ্রেফতার ছগির জাল নোট প্রিন্টিংয়ের সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয়ে ফেলতো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যাতে তাকে ধরতে না পারে সে জন্য গ্রেপ্তার ছগির ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করতো। জাল টাকার কারবারে জড়িয়ে জেলে পাখির স্বামীও গ্রেফতার সেলিনা আক্তারের স্বামীও জাল নোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং বর্তমানে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেলে আছে। সেলিনা ঢাকা জেলার কামরাঙ্গীর চরে একটি বিউটি পার্লারের বিউটিশিয়ান। স্বামীর মাধ্যমে এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সে নিজেও এ চক্রে জড়িয়ে জাল নোট ব্যবসা শুরু করে।
 
লাখ টাকার নোট ১৫ হাজারের বেশি দামে বিক্রি করত রুহুল গ্রেপ্তার সহযোগী রুহুল আমিন চক্রের মূলহোতা ছগিরের অন্যতম সহযোগী। রুহুল আমীনের মাধ্যমে ছগিরের অন্যান্য সহযোগীদের পরিচয় হয়। রুহুল আমিন ও পাখি বিভিন্ন সময় ৫০০ টাকার জাল নোট বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিক্যালসহ ব্যস্ত এলাকায় নিজেরাই বিক্রি ও এক্সচেঞ্জ করেছে। জাল নোট তৈরি ও বিক্রয়ের মামলায় ইতোপূর্বে ২০১৭ সালে জেলে ছিল এবং বর্তমানে তার নামে মামলা চলমান রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যে আরও বেশ ক’জন চক্রের সদস্যের নাম জানা গেছে। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে জাল টাকার উপকরণ বিক্রেতাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK