শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২০:০১

বড়দিনে দেশের সব গির্জায় করোনা থেকে মুক্তির প্রার্থনা

বড়দিনে দেশের সব গির্জায় করোনা থেকে মুক্তির প্রার্থনা

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তৃতির আশঙ্কার মধ্যেই শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে উদযাপিত হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন। দেশের সব গির্জায় অনুষ্ঠিত হয়েছে করোনা মহামারি থেকে মুক্তি এবং সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনার আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা।
 
তবে করোনার বিধিনিষেধ মেনে এ বছর সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বড়দিনের আয়োজন অনেকটাই সীমিত রাখা হয়েছিল। গির্জাগুলোতে জনসমাগম সীমিত রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করা হয়েছে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। বড়দিন শনিবার হলেও আগের দিন শুক্রবার রাত থেকেই উৎসবে মেতে ওঠেন খ্রিস্টানরা, তাদের বাড়ি বাড়ি শুরু হয় উৎসব। অভিজাত হোটেলগুলোতেও করা হয় বিশেষ আয়োজন।
 
রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জা হোলি রোজারিও চার্চে (পবিত্র জপমালা রানীর গির্জা) শনিবার সকাল ৭টায় শুরু হয় প্রথম প্রার্থনা সভা। এই প্রার্থনা সভা পরিচালনা করেন গির্জার প্রধান ফাদার সুব্রত ডি গোমেজ। বিরতি দিয়ে আবার সকাল ৯টায় শুরু হয়ে ১০টায় শেষ হয় দ্বিতীয় দফার প্রার্থনা। গির্জার আর্চবিশপ বিজয় এন ডি'ক্রুজ এই প্রার্থনা পরিচালনা করেন এবং খ্রিস্টযোগে অংশ নেন। আগের দিন সন্ধ্যা ৭টায় এবং রাত ১০টায়ও সেখানে খ্রিস্টযোগ অনুষ্ঠিত হয়।
 
প্রার্থনায় আর্চবিশপ বিজয় এন ডি'ক্রুজ দেশের মানুষের শান্তি কামনা ও করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির প্রত্যাশা প্রকাশ করে বলেন, বড়দিনের এই মুহূর্তে আমরা প্রার্থনা করি, সারাবিশ্ব ও প্রতিটি মানুষ যেন এই মহামারি থেকে মুক্তি লাভ করেন। যাতে আবার আমরা সুখ-শান্তিতে একাত্মতার মধ্যে জীবনযাপন করতে পারি। এরপর তিনি যিশুর অনুসারীদের পাপ স্বীকার (কনফেশন) করান।
 
কাকরাইলের সেন্ট মেরিস গির্জায় শনিবার সকাল ৮টায় প্রার্থনা শুরু হয়ে ৯টায় শেষ হয়। রমনা ক্যাথেড্রাল চার্চে সকাল ৮টায় বড়দিনের খ্রিস্টযোগ অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া মহাখালীর লুর্দের রানীর গির্জা, লক্ষ্মীবাজারের ক্রুশ ধর্মপল্লি, মোহাম্মদপুরের সেন্ট ক্রিস্টিনা গির্জা, মিরপুর-২-এর মিরপুর ক্যাথলিক গির্জা, কাফরুলের সেন্ট লরেন্স চার্চ এবং মনিপুরীপাড়া ও বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার গির্জাগুলোতে বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এসব প্রার্থনার বড় অংশজুড়ে ছিল করোনা মহামারি থেকে যেন সবার মুক্তি মেলে। সেই প্রার্থনায় পরমেশ্বরের কাছে নশ্বর জীবনের নানা ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ভক্তরা। প্রার্থনায় অংশ নেওয়া নানা বয়সী মানুষের অনেকেই গির্জায় থাকা সমাধিতে গিয়ে মৃতদের জন্যও প্রার্থনা করেছেন।
 
প্রার্থনা ছাড়া বড়দিনের অন্যান্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলোও উদযাপিত হয়েছে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে। সকাল থেকে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা নতুন পোশাক পরে পরিবারসহ বড়দিনের প্রার্থনাসহ অন্য আচার-অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এদিকে, করোনার প্রকোপ অনেকটাই কমে আসায় এবার রাজধানীর পাঁচতারকা ও অভিজাত হোটেলগুলোর আয়োজনে জৌলুস ফিরে এসেছিল। সোনারগাঁও হোটেল, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, র‌্যাডিসন, লা মেরিডিয়েন, ওয়েস্টিন, হোটেল ওয়েসিস এবং ঢাকা রিজেন্সিসহ বড় হোটেলগুলো সাজানো হয়েছিল রঙিন বাতি আর ফুল দিয়ে। সাজানো হয়েছিল ক্রিসমাস ট্রি। বড়দিনের কেক কাটার পাশাপাশি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক আয়োজনে মুখর ছিল সব হোটেল।
 
বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে দেশের সব গির্জার পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থলে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঢাকা মহানগরের ৬৫ গির্জা ও আশপাশ এলাকা সিসিটিভির আওতায় নেওয়া হয়েছিল। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরসহ জেলা এবং উপজেলায়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বড়দিন উদযাপনের খবর জানিয়েছেন সমকালের প্রতিনিধিরা।
উত্তরণবার্তা/এসএ
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ