রবিবার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১১:২৬
ব্রেকিং নিউজ

এই ১২টি লক্ষণ বলে দিবে আপনার কিডনি রোগ আছে

এই ১২টি লক্ষণ বলে দিবে আপনার কিডনি রোগ আছে

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ

বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে কিডনি রোগে ভুগছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ হাজারের কিডনি পুরোপুরি অকেজো হচ্ছে প্রতিবছর, বলছে কিডনি ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কিডনি রোগ সহজে বোঝা যায় না। এটা ধরা পড়ে খুব দেরীতে এবং তখন করার মত আর কিছু থাকে না। এই সর্বনাশা রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে আগে থেকেই প্রতিরোধ করতে হবে, সচেতন থাকতে হবে।

১। ক্লান্তি
আপনি সবসময় ক্লান্তি বোধ করেন। শুধু কম ঘুমের কারণেই আপনি ক্লান্ত হন না। এমন কিছু কারণ আছে, যা আপনার অজান্তেই আপনাকে ক্লান্ত করে তুলতে পারে; কিডনি রোগ তার মধ্যে একটি। এই রোগ হলে আপনি বেশী বেশী ক্লান্ত বোধ করবেন, শক্তি কম মনে হবে এবং কোন কাজে একাগ্রতা কমে যাবে।

২। ঘুমের সমস্যা
ঘুমের সমস্যা কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে। কিডনির শোধন ব্যবস্থা যখন ঠিকমত কাজ করে না তখন শরীরের বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের সাথে বের না হয়ে রক্তে থেকে যায়। এর ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া স্থূলতা হলে ক্রনিক কিডনি রোগ হওয়ার সম্ভাবণা বেশী আর সুস্থ মানুষের তুলনায় কিডনি রোগীদের মধ্যে স্লিপ এপনিয়া (sleep apnea) হওয়ার প্রবণতা বেশী।  

৩। ত্বকের চুলকানি
কিডনি রোগ হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং ত্বক চুলকায়। সুস্থ কিডনি আমাদের শরীরকে ঠিক রাখতে অনেক কাজ করে যেমন, শরীর থেকে বর্জ্য এবং অতরিক্ত পানি অপসারণ করা, লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন করা, হাড় শক্ত রাখা এবং শরীরে মিনারেলের ভারসাম্য রক্ষা করা। ত্বক শুষ্ক হলে এবং বেশী চুলকালে এটা হতে পারে কিডনি রোগের লক্ষণ। তবে মনে রাখতে হবে ত্বক চুলকানো শুধু কিডনি রোগেরই লক্ষণ নয়, এটা এলার্জি বা অন্য কোন কারণেও হতে পারে।

৪। ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
তুলনামূলকভাবে প্রস্রাব কম হওয়া কিডনি রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ। শুধু তাই নয় রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগও কিডনি সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ করে। সাধারণত কিডনির ফিল্টার নষ্ট হয়ে গেলে তা কিছুক্ষণ পর পর প্রস্রাবের বেগ সৃষ্টি করে। ঘন ঘন প্রস্রাব কিডনি রোগ ছাড়া অন্য কারণেও হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগ, যা কিডনির রোগের অন্যতম কারণ, এই ডায়াবেটিসের কারণেও ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হতে পারে। এছাড়া ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশান বা পুরুষদের প্রস্টেট বড় হয়ে গেলেও এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

৫। প্রস্রাবে রক্ত
আপনার প্রস্রাবের সাথে যদি রক্ত পড়ে তাহলে দেরী না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এটা কিডনি রোগের একটি প্রধান লক্ষণ। একটি সুস্থ কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য অপসারণের সময় রক্ত কণিকা শরীরেই রেখে দেয়, কিন্তু কিডনির ফিল্টার নষ্ট হয়ে গেলে এই রক্ত কণিকাগুলি লিক করে প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে বের হতে থাকে। কিডনি রোগ ছাড়া অন্যান্য কারণেও প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে যেমন, কিডনিতে টিউমার হলে, কিডনির পাথর হলে বা কিডনির ইনফেকশানের কারণে।

৬। প্রস্রাবে ফেনা হওয়া
কিডনি রোগীদের প্রস্রাবে বেশী ফেনা হয়। অল্প ফেনা ক্ষতিকর নয় তবে যদি প্রস্রাবে খুব বেশী ফেনা হয় যা কমোড ফ্ল্যাশ করা দূর করা যায় না, এমন ফেনা হলে বুঝতে হবে প্রস্রাবে আমিষ (protein) আছে। এই আমিষ হচ্ছে এল্বুমিন নামের এক ধরণের আমিষ যা প্রস্রাবে দেখা যায় এবং এই এল্বুমিন ডিমের সাদা অংশে থাকে। এর কারণেই কিডনি রোগীদের প্রস্রাবের ফেনা দেখতে অনেকটা ডিম ফেটলে যেমন ফেনা হয় সেরকম।

৭। খাদ্যের স্বাদ লোহার মত
কিডনি রোগ হলে মুখে সবসময় একটা লোহা বা ধাতব পদার্থের মত স্বাদ বিদ্যমান থাকে এবং যে কোন খাবার খেলে তার স্বাদও লোহার মত লাগে।

৮। চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া
সাধারণতঃ কিডনি রোগীদের চোখের চারপাশ ফুলে যায়। চোখের চারপাশ যখন ফুলে যায় তখন বুঝতে হবে কিডনি থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন লিক করে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যাচ্ছে এবং এর ফলেই চোখের চারপাশ ফুলে যাচ্ছে।

৯। পা এবং গোড়ালি ফুলে যাওয়া
কিডনি শুধু শরীর থেকে বর্জ্যই অপসারণ করে না, এটা শরীর থেকে অতিরিক্ত পানিও বের করে দেয়।  কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে পানি এবং সোডিয়াম শরীরে থেকে যায়, যার ফলে পা ফুলে যায়। পায়ের অংশ ফুলে গেলে সেটা হৃদরোগ, লিভারের রোগ বা পায়ের শিরার রোগেরও একটা লক্ষণ হতে পারে।

১০। ক্ষুধা কমে যাওয়া
যেকোন রোগের মত কিডনি রোগেও ক্ষুধা কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক। এটা একটা সাধারাণ লক্ষণ, তবে শরীরে বর্জ্য এবং টক্সিন জমা হওয়ার ফলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়, ফলে ক্ষুধা কমে যায়। এছাড়া সবসময় বমি বমি ভাবও থাকতে পারে।

১১। মাংসপেশীতে ব্যথা হওয়া
কিছু কিছু কিডনি রোগে শরীরে ব্যথা হয়। পিঠের পাশে নিচের দিকে ব্যথা হয়। মাংসপেশীতে ব্যথা, বিশেষ করে পায়ের মাংসে ব্যথা হওয়া কিডনি রোগের একটি লক্ষণ।

১২। সবসময় শীত বোধ হওয়া
কিডনি রোগ হলে গরম আবহাওয়ার মধ্যেও শীত শীত অনুভব হয়। আর কিডনিতে সংক্রমণ হলে জ্বরও আসতে পারে।

পরিশেষে
কিডনির যে কোন সমস্যাকেই কিডনি রোগ বলে ধারণা করে চিন্তিত হবার কারণ নেই। অনেক সময় ছোটখাটো কিডনি সমস্যার কারণে কিডনি বা পিঠের ব্যথা হতে পারে। কিডনি ইনফেকশান হলে তা ঔষধের সাহায্যে সহজেই নিরাময় করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে যেকোন ধরনের কিডনি বা প্রস্রাবের সমস্যায় দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক  


 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK