রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০১:৪০
ব্রেকিং নিউজ

শরীরকে বিষমুক্ত করার ১০টি ঘরোয়া পদ্ধতি

শরীরকে বিষমুক্ত করার ১০টি ঘরোয়া পদ্ধতি

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
শরীরকে বিষমুক্ত করার এই দশটি নিয়ম অনুসরণ করলে আপনার প্রতিদিনের জীবিন হবে সহজ, স্বাস্থ্যকর এবং আরামদায়ক আপনি যদি শুধু এক সপ্তাহ সিগারেট, মদ্যপান, চা ও কফি পান থেকে বিরত থাকেন, ময়দা জাত খাবার না খেয়ে বেশী বেশী ফল-মূল ও শাক সবজি খান এবং পর্যাপ্ত ঘুমান তাহলে আপনি অটোম্যাটিকেলি অনেক ভাল বোধ করবেন।

শরীরকে বিষমুক্ত বা ডিটক্স (Detox) করার ১০টি ঘরোয়া পদ্ধতি

১। পর্যাপ্ত পানি পান
পানি মানুষের জন্য খুবই জরুরি কারণ এটা বহু মেটাবলিক পদ্ধতিতে সহায়তা করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা উচিৎ তার একটি তালিকাঃ
  • পুরুষ, ১৯ বছর বা তদুর্ধ – ১৩ কা্প, বা ৩ লিটার
  • নারী, ১৯ বছর বা তদুর্ধ – ৯ কাপ, বা ২.১ লিটার
  • গর্ভবতী নারী – ১০ কা্প বা ২.৩ লিটার
  • বুকের দুধ খাওয়ানো মা – ১৩ কাপ, বা ৩ লিটার
২। ফলমূল ও শাকসব্জি খান
বেশী বেশী ফলমূল ও শাকসব্জি খেতে চেষ্টা করুন। তাজা ফলমূল ও শাকসব্জিতে ভিটামিন ও মিনারেলের পাশাপাশি আছে ফাইবার বা আঁশ, যা হজমে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। নিয়মিত কাচা সবজি দিয়ে বানানো সালাদ খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং স্ন্যাক্স হিশেবে স্যান্ডুইচ, বার্গার ইত্যাদির পরিবর্তে ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
 
৩। রেডিমেড বা ফাস্টফুড পরিহার করুন
যে কোন ধরণের রেডিমেড খাবার যেমন স্যান্ডুইচ, পিৎযা, বার্গার, ইত্যাদি খুবই ক্ষতিকর, বার্গার, স্যান্ডুইচ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পিৎযা সহ অন্যান্য রেডিমেড খাবার তৈরি করা হয় প্রক্রিয়াজাত মাংস দিয়ে, যা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবে এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
 
৪। মাংস খাওয়া কমিয়ে দিন
যারা প্রতিদিন মাংস খায় তারা খুব বেশী স্যাচুরেটেড ফ্যাট খেয়ে ফেলে যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া বেশী মাংস খেলে রক্তের পিউরিন ভ্যালু বৃদ্ধি পায়, ফলে গেঁটেবাত (gout) হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে সুস্থ থাকতে চাইলে বেশী বেশী মাছ, শাকসব্জি খাওয়া উচিৎ এবং সপ্তাহে একদিন গোমাংস এবং একদিন মুরগীর মাংস খাওয়া যেতে পারে।
 
৫। চিনি খাওয়া কমান
প্রতিদিন ৬ চা চামচ চিনি খাওয়া মোটেই কঠিন নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিদিন ৬ চা চামচ (২৫ গ্রাম) এর বেশী চিনি খাওয়া উচিৎ নয়। এর বেশী হলে ডায়াবেটিস এবং দাঁতের রোগের ঝুঁকি বাড়বে। গবেষকদের মতে চিনি আপনাকে শক্তি ছাড়া আর কিছুই দেয় না এবং এতে নেই কোন প্রকার ভিটামিন, মিনারেল বা পুষ্টি।
 
সমস্যা হচ্ছে অনেক খাদ্যের মধ্যেই চিনি লুকিয়ে থাকে। খাবার কেনার আগে লেবেল দেখে কিনবেন এবং সেখানে চিনির অন্য নামগুলো পাবেন যেমনঃ
  • গ্লুকোজ-ফ্রুকটোজ সিরাপ
  • ইনভার্ট সুগার সিরাপ
  • ডেক্সট্রোজ
  • মালটোডেক্সট্রিন
  • ন্যাচারাল ফ্রুট সুইটনেস
  • ল্যাকটোজ
৬। গ্রিন টি
নিয়মিত গ্রিন টি পান করার অভ্যাস করুন। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন অন্ততঃ ৩ কাপ গ্রিন টি পান করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। এটা শুধু আপনার শরীরকে বিষমুক্তই করবে না, আপনার ওজন হ্রাসেও সাহায্য করবে। এছাড়া অনেক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমে।
 
৭। ঘরের বাইরে বের হন
মুরুব্বিদের কথা শুনুন এবং ঘরে বসে না থেকে বাইরের ফ্রেশ বাতাস উপভোগ করুন। পার্কে হাঁটাহাঁটি করুন বা রোদ পোহান। আমরা যখন অক্সিজেন নিই তখন তা আমাদের কোষ ডিভিশন এবং কোষ পুনরুজ্জীবিত হতে সাহায্য করে।
 
৮। মাসাজ
একটি স্ট্রেসফুল দিনের পর আপনার শরীর টেন্স হয়ে পড়ে। টেনশানের মধ্যে থাকলে আমাদের চোয়াল এবং ঘাড়ের মাংসপেশীও টেন্স হয়ে পড়ে যার ফলে সেখানে রক্ত চলাচল কমে যায়। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তারা এসব শক্ত পেশীর উপশম করতে পারেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দরকার মাসাজ বা মালিশ। নিয়মিত শরীরে মাসাজ করালে দেখবেন আপনার শরীর হালকা মনে হচ্ছে এবং হাঁটা চলা সহজ মনে হচ্ছে।
 
৯। সনা (Sauna)
সনা বা স্টীম বাথ আপনার মাংসপেশীকে নরম এবং ত্বককে মোলায়েম করবে। স্টীম বাথের সময় শরীর থেকে পানি এবং লবণ নিঃসরণের পাশাপাশি বিষাক্ত পদার্থও বের হয় যায়। তাই চেষ্টা করুন মাঝে মাঝে কিছু সময় সনায় বসে থাকতে।
 
১০। সবকিছু গুছিয়ে ফেলুন
শরীরকে বিষমুক্ত করলে আপনার আত্মাও শুদ্ধি পাবে। আপনার বাড়িতে নিশ্চয়ই অনেক জিনিষ পড়ে আছে যা কখনও ব্যবহৃত হয় না, এবং শুধু জায়গা নষ্ট করছে। একটা লিস্ট বানিয়ে এসব জিনিষ গরীবদের দান করে দিন। 
 
এছাড়া সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা করা কঠিন মনে হলেও চেষ্টা করুন। আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবদের একটা লিস্ট করুন। লিস্টে এমন অনেক মানুষ আছে যারা আপনার ভাল চায় না, আপনাকে হিংসা করে, এবং আপনার বদনাম করে। এসব মানুষ থেকে দূরে থাকুন। চেষ্টা করুন সব সময় সেসব মানুষের সাথে থাকতে যারা আপনার ভাল চায়, যারা আপনাকে আনন্দ দেয় এবং যারা আপনার প্রতি সবসময় সহানুভূতিশীল। আপনার আত্মা নিজ থেকেই সবসময় এসব মানুষের সংস্পর্শে থাকতে চায়।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK