শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৮:৫৪

জ্বর গলাব্যথা? করোনা নাকি অন্য কিছু?

জ্বর  গলাব্যথা? করোনা নাকি অন্য কিছু?

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
২০২০ সালের আগে খুসখুসে কাশি, শ্বাস যন্ত্রের সামান্য সমস্যা বা শরীরের সামান্য তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে আমরা কেউই তেমন গুরুত্ব সহকারে দেখতাম না। কিন্তু বর্তমানে এই পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন একটু কাশি বা শ্বাস নিতে কষ্ট হলেই মনে হচ্ছে করোনা হল না তো?
 
করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কোভিড-১৯ এর উপসর্গের সাথে ঠান্ডাজনিত রোগের উপসর্রগের বেশ কিছু মিল আছে। এমনিতেই সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েনজা, জ্বর, নিউমোনিয়া ইত্যাদির সংক্রমণ শীতকালে বেড়ে যায়। এর সাথে মহামারি কোভিড-১৯ যোগ সবার হওয়ায় দুশ্চিন্তা হয়ে গেছে দ্বিগুণ। তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগের উপসর্গগুলো।
 
কোভিড-১৯ COVID-19 করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল তাই এর নাম দেয়া হয়েছে কোভিড-১৯ Corona VIrus Disease-2019 (COVID-19)। এটা ভীষণভাবে সংক্রামক শ্বাসযন্ত্রের অসুখ যা করোনাভাইরাস (SARS-C0V-2) দ্বারা সৃষ্টি হয়। সাধারণ ঠান্ডা জনিত রোগের উপসর্গের সাথে এর অনেক মিল আছে তবে এটা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, যাতে অনেক সময় ব্যক্তিকে হাসপাতালে রাখার দরকার হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয় এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
 
উপসর্গ
১। আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারিয়ে ফেলে।
২। জ্বর, কাশি, নিঃশ্বাসের দুর্বলতা এবং মাংসপেশীর ব্যথা হয়।
৩। গলা ব্যথা
৪। মাথা ব্যথা
৫। ডায়ারিয়া
 
এছাড়া এর সাথে যোগ হতে পারেঃ
  • সর্দি
  • শীত অনুভূ হওয়া
  • কাঁপুনি,
  • খাওয়ার রুচি নষ্ট হওয়া
  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • ক্লান্তি বোধ করা
  • ইনফ্লুয়েঞ্জা
 
ইনফ্লুয়েঞ্জা A, B অথবা C দ্বারা আক্রান্ত হলে ইনফ্লয়েঞ্জা বা ফ্লু (Flu) হয়। এই ফ্লু সারা বছর ভরেই
থাকা।
 
উপসর্গ
১। জ্বর
২। কাশি
৩। মাংসপেশীর ব্যথা
 
এ ছাড়া এর সাথে যোগ হতে পারেঃ
  • গলা ব্যথা
  • ডায়ারিয়া
  • সর্দি
  • মাথা ব্যথা
  • শীত লাগা
  • কাঁপুনি
  • ক্লান্তি
  • খাওয়ায় অরুচি
কোভিড-১৯ ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মধ্যে পার্থক্য হল, ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে নিঃশ্বাসের দুর্বলতা দেখা দেয় না। সাধারণ সর্দি জ্বর এটা হল স্বাসযন্ত্রের সাধারণ সংক্রমণ যা ১০০ ধরনের ভাইরাস, এমনকি করোনাভাইরাস বা রাইনোভাইরাস (Rhinovirus) দ্বারাও হতে পারে। এই রোগ সাধারণতঃ এক সপ্তাহের মধ্যেই চলে যায়।
 
উপসর্গ
১। নাক বন্ধ হওয়া
২। সর্দি কাশি
৩। গলা ব্যথা
 
এছাড়া এর সাথে যোগ হতে পারেঃ
  • জ্বর
  • ক্লান্তি
  • মাংসপেশীর ব্যথা
  • অরুচি
  • শীত লাগা
 
ঋতু পরিবর্তন জনিত এলার্জি
এটা কোন ভাইরাস জনিত সংক্রমণ নয়। এই এলার্জি হতে পারে নিরীহ কিছু পদার্থ থেকে যেমন, পুষ্প রেণু,ধূলাবালি ইত্যাদি। এটা সাধারণতঃ এক সপ্তাহ থেকে এক মাসের মত থাকতে পারে। এলার্জির সমস্যা বেশী দেখা যায় শীত ও বসন্ত কালে।
 
উপসর্গ
১। সর্দি
২। চোখ চুলকানি
৩। হাঁচি
৪। নাক বন্ধ থাকা। নাক বন্ধ থাকলে অনেক সময় গন্ধ নাও পেতে পারেন।
 
এলার্জিতে কখনো জ্বর, কাশি, নিঃশ্বাসের দুর্বলতা, মাংসপেশীর ব্যথা, গলা ব্যথা, ডায়ারিয়া, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অরুচি দেখা যায় না।
 
এজমা (Asthma)
এজমা হচ্ছে ফুসফুসের ক্রনিক অবস্থা যা আমাদের শ্বাসনালীর প্রদাহের কারণে হয়। এতে শ্বাসনালি চিকন হয়ে যায় ফলে শ্বাস প্রশ্বাসে ভীষণ সমস্যা দেখা যায়। এ থেকে মনে হতে পারে করোনা হয়েছে। সাধারণতঃ ঠান্ডা বা ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে এজমার প্রকোপ বেড়ে যায়।
 
উপসর্গ
১। শ্বাস নেয়ার সময় বাঁশির মত শব্দ হয়
২। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়
৩। বুকে চাপ অনুভূত হয়
৪। অবিরাম কাশি হয়
 
এছাড়া এর সাথে যোগ হতে পারেঃ
  • ঘাম
  • নাড়ির গতি দ্রুত হওয়া
  • ঠোঁট ও হাতের নখ নীল রং হওয়া
 
এজমা হলে জ্বর, মাংসপেশীর ব্যথা, গলা ব্যথা, ডায়ারিয়া, স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারানো, সর্দি, কাঁপুনি, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি, অরুচি দেখা দেয় না।
 
শেষ কথা
ঋতুর পরিবর্তনে হুটহাট সর্দি বা জ্বর হওয়া স্বাভাবিক। এদিকে আবার করোনার ভয় যোগ হওয়াতে অনেকেই ঘাবড়ে যেতে পারেন। ভয় না পেয়ে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যদি জ্বর না থাকে কিন্তু গলা খুশখুশে লাগে তাহলে আদা, লবঙ্গ দিয়ে চা পান করুন দিনে ৩ বার। দিনে ৩ বার গরম পানিতে লবন মিশিয়ে গার্গল করুন। দেখবেন চলে যাবে। কোন ঔষধের প্রয়োজন হবে না। এটা বললাম আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সব সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। এবং সাধারণ জ্ঞান বা কমন সেন্স নিয়ে চলুন তাহলেই সম্ভব হবে করোনা থেকে নিরাপদ থাকা।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK