রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০১:৪১
ব্রেকিং নিউজ

প্রতিদিন সকালে শুধু ৬টি কাঠাবাদাম খান আর দেখুন স্বাস্থ্যের পরিবর্তন

প্রতিদিন সকালে শুধু ৬টি কাঠাবাদাম খান আর দেখুন স্বাস্থ্যের পরিবর্তন

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
প্রতিদিন সকালে শুধু ৬টি কাঠবাদাম খেলেই শরীর থেকে বিদায় দিতে পারবেন অনেক জটিল রোগকে। আজ আমি আপনাদের বলব কাঠবাদামের উপকারিতা এবং সঠিক পদ্ধতি যেভাবে প্রতিদিন সকালে কাঠবাদাম খেলে আপনি এই উপকার পাবেন। আরও বলব কাদের কাঠবাদাম খাওয়া উচিৎ নয়। কাঠবাদাম আছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল। ২৮ গ্রাম
কাঠবাদামে আছেঃ
  • ফাইবারঃ ৩.৫ গ্রাম
  • প্রোটিনঃ ৬ গ্রাম
  • ফ্যাটঃ ১৪ গ্রাম
  • ভিটামিন ইঃ প্রতিদিনের চাহিদার ৩৭%
  • ম্যাঙ্গানিজঃ প্রতিদিনের চাহিদার ৩২%
  • ম্যাগনেশিয়ামঃ প্রতিদিনের চাহিদার ২০%
এছাড়া আরও আছে কপার, ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্ল্যাভিন) এবং ফসফরাস।
 
কাঠবাদামের উপকারিতা
১। খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমায়
কাঠবাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। ১৬-সপ্তাহ ব্যাপি চালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব অংশগ্রহনকারী আলমন্ড বা কাঠবাদাম খেয়েছে্ন তাদের খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) এর মাত্রা ২০% কমেছে। অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় প্রতিদিন ৪০ গ্রাম কাঠবাদাম খেলে পেটের চর্বি কমে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমে ও ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে।
 
২। ব্লাড সুগার কমায়
কাঠবাদামে আছে খুব কম পরিমাণে শর্করা এবং বেশী পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন ও ফাইবার। তাই এটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যুক্ত্ররাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ২৫-৩৮% এর শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি আছে। যাদের ডায়াবেটিস নেই তারাও যদি ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খায় তাহলে তাদেরও ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স কমবে।
 
৩। ব্লাড প্রেসার কমায় কাঠবাদাম
ম্যাগনেশিয়াম শুধু ব্লাড সুগারই কমায় না, এটা রক্তের চিনি বা ব্লাড সুগার কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে রক্তে ম্যাগনেশিয়াম কম থাকলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি কমাতে পারলে ব্লাড প্রেসার কমবে। তাই আপনি যদি হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগে থাকেন তাহলে চেষ্টা করুন নিয়মিত কাঠবাদাম খেতে।
 
৪। ওজন কমাতে কাঠবাদাম
আমাদের শরীর কাঠবাদামের ১০-১৫% ক্যালরি শুষে নিতে ব্যর্থ হয়। এছাড়া কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কাঠবাদাম মেটাবলিযম বৃদ্ধি করতে পারে। কাঠবাদাম পেট ভরা রাখে তাই এটা ওজন হ্রাসের জন্য একটি কার্যকর খাবার। ১০০ জন নারীর উপর চালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা কাঠবাদাম খেয়েছেন তারা অন্যান্যদের তুলনায় বেশী ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের পেটের চর্বিও কমেছিল এবং স্বাস্থ্যও অন্যান্যদের তুলনায় ভাল ছিল।
 
৫। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা কাঠবাদাম এবং অন্যান্য বাদাম যেমন চিনাবাদাম, আখরোট, ইত্যাদি খেয়েছেন তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় কম। গবেষকরা বলেন যারা এসব বাদাম নিয়মিত খান তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সম্ভাবণা কম।
 
৬। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
কাঠবাদাম ও অন্যন্য বাদাম খেলে রক্তে লিপিড (এক ধরণের চর্বি) কমে। ২০১৪ এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে রক্তে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, এর ফলে ব্লাড প্রেসার কমে এবং রক্ত চলাচলের উন্নয়ন হয়। এই গবেষণায় অংশগ্রহনকারীদের ৪ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৫০ গ্রাম কাঠবাদাম খেতে দেয়া হয়।
 
৭। কাঠবাদামের ভিটামিন ই
আলমন্ড সারা বিশ্বে ভিটামিন ই এর সব চেয়ে ভাল উৎসের মধ্যে অন্যতম। ভিটামিন ই এক ধরণের চর্বি-দ্রবণীয় এন্টিঅক্সিডেন্ট। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খেলে হৃদরোগ,ক্যান্সার ও আলযহাইমার্স রোগের ঝুঁকি কমে।
 
কাঠবাদাম খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি
রোস্টেড কাঠবাদাম খালি চিবিয়ে খাওয়া যায়, এতে কোন ক্ষতি নেই। তবে ভিজিয়ে খেতে চাইলে কাচা কাঠবাদাম একটি বোলে ঢালুন। এতে গরম পানি ঢেলে সামান্য লবণ (সি সল্ট হলে ভাল হয়) মেশান। এখন কাঠবাদাম ডুবিয়ে ৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এর ফলে সাইট্রিক এসিড ও ট্যানিন দূর হবে। কাঠবাদামে থাকা ট্যানিন হজমে সমস্যা করতে পারে। এছাড়া ভিজিয়ে বাদাম খেলে মলাশয় থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়।
 
কারা খাবেন না কাঠবাদাম?
যারা এন্টিবায়োটিক ও ব্লাড প্রেসারের ঔষধ সেবন করছেন, ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট নিচ্ছেন, যাদের বাদামের প্রতি এলার্জি আছে, তারা কাঠবাদাম খাবেন না।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK