শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৮:৩৬

মিষ্টি খাবারে আসক্তি? জানুন কিভাবে সুইট টুথ নিয়ন্ত্রণে আনবেন

মিষ্টি খাবারে আসক্তি? জানুন কিভাবে সুইট টুথ নিয়ন্ত্রণে আনবেন

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
আপনি কি সবসময় মিষ্টি জিনিষ খেতে খুব ভালবাসেন? স্ন্যাক্স হিশেবে শুধু মিষ্টি, ডোনাট, কেক, এসব খেতে বেশী পছন্দ করেন? মনে রাখবেন, মিষ্টিজাত খাবার অল্প খেলে ঠিক আছে কিন্তু যদি বেশী মাত্রায় খাওয়া হয় তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মিষ্টি খাবার আপনার ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগ, এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিদিন ৫০ গ্রামের বেশী চিনি খাওয়া উচিৎ নয়। চিনিতে কোন স্বাস্থ্যকর গুণাবলী নেই, আছে শুধু ক্যালরি যা ধীরে ধীরে চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। কিভাবে আপনি চিনি খাওয়া কমাতে পারেন সেটাই আজকের আলোচনা।
 
১। চিনির বিকল্প
চিনিজাত খাদ্যের পরিবর্তে মিষ্টি ফল খেতে চেষ্টা করুন। আইস ক্রিমের পরিবর্তে চিনি ছাড়া ফ্রুট শেক কিংবা খুব অল্প পরিমাণে বিস্কিট বা কেক খেতে পারেন।
 
২। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশী খান
প্রত্যেকটি মানুষের উচিৎ তার শরীরের ওজনের প্রতি কেজিতে ১.২ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া। এটা করতে পারলে আপনি অনেক বেশী সময় পেট ভরা অনুভব করবেন এবং প্রতি বেলার খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে আপনার ক্ষুধা কম লাগবে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার সব সময় পেট ভরা রাখে। যেসব খাদ্যে অনেক প্রোটিন আছেঃ মুরগির মাংস, ডিম, শুঁটি, ইত্যাদি।
 
৩। সব সময় স্বাস্থ্যকর খাদ্য মজুত রাখুন
চেষ্টা করবেন নিয়মিত আপনার ফ্রিজ এবং খাদ্য ভান্ডার থেকে চিনিজাত খাদ্য সরিয়ে ফেলতে। তারপর একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের লিস্ট বানিয়ে আপনার খাদ্য ভান্ডার ভরে ফেলুন। লিস্টে থাকবেঃ
*ফ্রেশ শাক-সবজি, ফলমূল
*আলু, মিষ্টি আলু, লাল চাল, মসুরের ডাল, কিনোয়া
*মাছ, মাংসঃ মুরগি, গরু, রুই মাছ, কিংবা ফ্রোযেন মাছ
*ডিম, দুধ, টক দই
*স্বাস্থ্যকর তেল
*শুকনো ফল (যদি হঠাৎ ক্ষুধা লাগে)
*গ্রীন টি
* চিনি এবং আর্টিফিসিয়াল স্যাকারিন বাদ দিন
 
আপনি যদি চা বা কফি চিনি মিশিয়ে পান করতে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে সেই অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। চিনির পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। ফলের জুস পান করবেন না। ফলের জুস কোমল পানীয়ের মতই অস্বাস্থ্যকর। জুসের পরিবর্তে ফল খান। এক গ্লাস পানিতে লেবুর রস চিপড়ে তাতে সামান্য আদা এবং পুদিনা পাতা মিশিয়ে পান করুন; খুব স্বাস্থ্যকর একটি পানীয়। যেসব খাদ্যে ফ্রুকটোজ (fructose) আছে সেসব পরিহার করুন। গবেষণায় দেখা গেছে ফ্রুকটোজ সিরাপ ডায়াবেটিস এবং ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়।
 
৫। নিউট্রিয়েন্ট লেবেল দেখে খাবার কিনুন
খাবার ক্রয় করার সময় প্যাকেটের গায়ে লেখা নিউট্রিয়েন্ট লেবেল দেখে কিনুন। লিস্টে নিম্নে দেয়া উপাদান গুলি থাকলে সেটা কিনবেন নাঃ
*সুক্রোয (Sucrose)
*ডেক্সট্রোজ (Dextrose)
*র‌্যাফিনোজ (Raffinose)
*গ্লুকোজ, গ্লুকোজ সিরাপ (Glucose, Glucose syrup)
*ফ্রুকটোজ সিরাপ (Fructose syrup)
*ক্যারামেল সিরাপ (Caramel syrup)
*ল্যাকটোজ (Lactose)
*ম্যালটোজ (Maltose)
*সুইট হোয়ে পাউডার (Sweet whey powder)
*ম্যালটোডেক্সট্রিন (Maltodextrin)
*বার্লি মল্ট (Barley malt)
 
৬। বেশী বেশী শাকসব্জি খান
শাকসব্জিতে অনেক বেশী পানি থাকায় তাতে ক্যালরি খুবই কম। এছাড়া এটা সহজেই পেট ভরে ফেলে। প্রোটিনের সাথে শাক-সব্জির মিশ্রণ খুবই ভাল। দিনে ৫০০-৬০০ গ্রাম শাকসব্জি খাওয়া উচিৎ। শাকসবজিকে শর্করাজাত খাদ্য যেমন রুটি, পাস্তা, আলু, ইত্যাদির বিকল্পে হিসাবে ব্যবহার করুন।
 
৭। বেশী বেশী ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম আপনার চিনি খাওয়ার ইচ্ছাকে কমাবে। ব্যায়াম করলে শরীরে হ্যাপিনেস হরমোন (Happiness hormone) নিঃসরণ হয় ফলে আপনার শরীরের শেইপ ভাল থাকে এবং ওজন কমে।
 
৮। পর্যাপ্ত পানি পান করুন
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দিনে ৩.৭ লিটার এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর দিনে ২.৭ লিটার পানি পান করা উচিৎ।
 
৯। শুকনো ফল বর্জন করুন
শুকনো ফলে আছে কন্সেন্ট্রেটেড সুগার। তাই মিউযলি (muesli) বা ট্রেইল মিক্স (trail mix) এর পরিবর্তে ফ্রেশ ফল খান।
 
১০। শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমান
রুটিও এক ধরণের চিনিজাত খাবার কারণ শর্করা ছোট ছোট অনেক চিনির মলিকিউল দিয়ে তৈরি। শর্করার পরিবর্তে পূর্ণ শস্য বা হোল গ্রেইন (whole grain) খাওয়ার অভ্যাস করুন।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক
 
 
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK