শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৯:১৯
ব্রেকিং নিউজ

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় তিসির বীজ

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় তিসির বীজ

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
শত বছর ধরে মানুষ তিশির দানা খেয়ে আসছে এর স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য। আসলে চার্লস দি গ্রেট (শার্লামেইন) তাঁর অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যের জন্য তিসির বীজ খেতে। আজকাল এই তিসির বীজ অসংখ্য স্বাস্থ্যোপকারিতার কারণে পশ্চিমা বিশ্বে সুপের ফুড (super food) হিসেবে পরিচিত পাচ্ছে। তিসি চাষ করা হয় শুধুমাত্র এর বীজের জন্য। তিসির বীজ গুড়ো করে খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয় কিংবা এটা দিয়ে লিনসীড তেল বানানো হয়। তিসির গাছ খুব সুন্দর তাই এটা কখনো কখনো বাগানের শোভা বর্ধনের জন্য রোপণ করা হয়, আবার এর আঁশ দিয়ে লিনেন বানানো হয়।
 
তিসির বীজের পুষ্টিগুণ
তিসির বীজের ৪২% চর্বি, ২৯% শর্করা, এবং ১৮% আমিষ।
এক টেবিল চামচ পরিমাণ তিসির বীজে আরো আছেঃ
*ক্যালরিঃ ৫৫
*পানিঃ ৭%
*আমিষঃ ১.৯ গ্রাম
*শর্করাঃ ৩ গ্রাম
*চিনিঃ ০.২ গ্রাম
*আঁশঃ ২.৮ গ্রাম
*চর্বিঃ ৪.৩ গ্রাম
    o পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ ২.০ গ্রাম
    o ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডঃ ১.৫৯৭ গ্রাম
*ভাইটামিন বি১: প্রতিদিনের প্রয়োজনের ৮%
*ফোলেটঃ প্রতিদিনের প্রয়োজনের ২%
*ক্যালসিয়ামঃ প্রতিদিনের প্রয়োজনের ২%
*আয়রনঃ প্রতিদিনের প্রয়োজনের ২%
*ম্যাগনেশিয়ামঃ প্রতিদিনের প্রয়োজনের ৭%
*ফসফরাসঃ প্রতিদিনের প্রয়োজনের ৪%
*পটাসিয়ামঃ প্রতিদিনের প্রয়োজনের ২%
 
তিসির বীজের ৯ উপকারিতা
১। তিসির বীজে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩
আপনি যদি মাছ খেতে অপছন্দ করেন তাহ’লে তিসির বীজ হতে পারে আপনার জন্য ওমেগা-৩ আহরণের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সূত্র। এতে আছে প্রচুর আলফা লিনোলিক এসিড (এএলএ) alpha-linolenic acid (ALA) নামে এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি। গবেষণায় দেখা গেছে তিসির বীজের এএলএ রক্তের ধমনীতে কোলেস্টেরল জমা হওয়া বন্ধ করে, ধমনীর প্রদাহ কমায় এবং টিউমার হওয়া বন্ধ করে। ২৭টি গবেষণার একটি বড় রিভিউ, যা আড়াই লক্ষ (২,৫০,০০০) মানুষের উপর করা হয়, সেটাতে দেখা যায় এএলএ হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবণা ১৪% কমায়। এছাড়া অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে এএলএ স্ট্রোকের ঝুঁকি
কমায়।
 
২। তিসির বীজের লিগন্যান (Lignan) ক্যান্সার রোধ করে
লিগন্যান হচ্ছে এক ধরনের উদ্ভিজ উপাদান যাতে আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও এস্ট্রোজেন – এই দু’টি উপাদানই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবণা দূর করতে পারে। তিসির বীজে আছে অন্যান্য উদ্ভিজ খাদ্যের তুলনায় ৮০০% বেশী লিগন্যান। কানাডায় ৬,০০০ জন নারীর উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা তিসির বীজ খান তাঁদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১৮% কম। পুরুষদের জন্যেও তিসির বীজ খুব উপকারী। একটি ছোট গবেষনায় দেখা গেছে যেসব পুরুষ তিশির বীজ খান তাঁদের প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। এছাড়া তিসির বীজ পায়ু ও ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
 
৩। তিসির বীজে আছে অনেক স্বাস্থ্যোপকারী আঁশ
শুধু এক টেবিল চামচ তিসির বীজে আছে ৩ গ্রাম আঁশ, যা পুরুষ ও নারীর প্রতিদিনের প্রয়োজনের ৮% ও ১২%। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে তিসির বীজ একটি উপকারী খাদ্য।
 
৪। তিসির বীজ কোলেস্টেরল কমায়
একটি গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল সম্পন্ন যেসব মানুষ প্রতিদিন ৩ টেবিল চামচ (৩০ গ্রাম) তিসির বীজ খেয়েছেন তাঁদের সর্বমোট কোলেস্টেরল (total cholesterol) ১৭% কমেছে এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL cholesterol) ২০% কমেছে।
 
৫। তিসির বীজ উচ্চ রক্তচাপ কমায়
কানাডার একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ৩০ গ্রাম তিসির বীজ ৬ মাস ধরে খাওয়ার ফলে সিস্টোলিক (উপরের) ব্লাড প্রেশার ১০ mmHg এবং ডায়াস্টোলিক (নীচের) ব্লাড প্রেশার ৭ mmHg কমেছে।
 
৬। তিসির বীজে আছে উচ্চ মানের আমিষ
তিসির বীজ হচ্ছে উদ্ভিজ আমিষের একটি ভাল সূত্র। তিসির বীজের আমিষ খুব উঁচু মানের, এতে আছে প্রচুর আরজিনিন নামক এমিনো এসিড, এস্পার্টিক এসিচ এবং গ্লুটামিক এসিড। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে তিসির বীজের আমিষ ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতার উন্নয়ন, কোলেস্টেরল কমাতে এবং টিউমার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
 
৭। তিসির বীজ ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে
গবেষকদের মতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় তিসির বীজ অন্তর্ভুক্ত করলে তা তাদের রোগের উন্নতি করবে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগী যারা ১০-২০ গ্রাম তিসির বীজ প্রতদিন খাদ্যের সাথে খেয়েছেন এক মাস পর্যন্ত, তাঁদের ব্লাড সুগার ৮-২০% কমেছে।
 
৮। তিসির বীজ ক্ষুধা কমায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা
আপনার যদি খাদ্য খাওয়ার পরেও স্ন্যাক্স খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহ’লে আপনি পানীয়ের সাথে গুঁড়ো তিসির বীজ মিশিয়ে পান করতে পারেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ২.৫ গ্রাম তিসির পাউডার পানীয়ের সাথে মিশিয়ে খেলে পেট ভরা থাকে ও ক্ষুধা দূর
হয়।
 
৯। তিসির বীজ বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারেঃ
*তিসির বীজ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে
*সালাদে তিসির বীজের তেল মিশিয়ে খাওয়া
*গুড়ো তিসির বীজ দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়
*রান্নার সময় ব্যবহার করা যায়
 
কতখানি তিসির বীজ প্রতিদিন খাওয়া উচিৎ
প্রতিদিন ৫ টেবিল চামচ (৫০ গ্রাম) এর কম তিসির বীজ খাওয়া উচিৎ।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK