শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২২:৩৬
ব্রেকিং নিউজ

আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান এই ১০টি উপায়ে

আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান এই ১০টি উপায়ে

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
প্রতিদিন আমরা যা খাই তা আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটিকে প্রভাবিত করে। করোনাকালে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদেরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি নজর দিতে হবে। আপনার শিশুকে ফিট রাখতে প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য তালিকা এবং জীবনধারার পরিবর্তন। শিশুকে খেতে হবে সেসব খাবার যা তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং বাড়াতে হবে শারীরিক কার্যকলাপ ও খেলাধূলা। ঘরে বসে সারাক্ষণ ট্যাব বা মোবাইল নিয়ে খেলা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।
 
প্রত্যেক বাবা-মায়েরই উচিত তাদের শিশুদের বেশি করে ফল ও শাকসবজি খাওয়ানো, যা ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। আসুন জেনে নিই কিভাবে আপনি আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারবেনঃ
 
১। শিশুকে বেশী বেশী শাক-সব্জি ও ফলমূল খেতে দিন
বেশীরভাগ শিশুই শাক-সব্জি পছন্দ করে না। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে শিশুকে অবশ্যই বেশী বেশী শাক-সব্জি ও ফলমূল খেতে হবে। ফল ও শাক-সব্জিতে থাকা ভিটামিন, মিনারেল শরীরকে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আপনার শিশুকে প্রতিদিন খেতে দিন ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন সবুজ পাতাওয়ালা শাক, গাজর, পেঁপে, আনারস, কমলা, পেয়ারা, মিষ্টি কুমড়ো ইত্যাদি।
 
২। গরুর কলিজা
গরুর কলিজাকে বলা হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি সুপারফুড। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং আয়রন বা লোহা। এছাড়া গরুর কলিজায় আছে ভিটামিন বি-১২, ফোলিক এসিড, জিঙ্ক, কপার, এবং সেলেনিয়াম, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধের একটি দুর্গ তৈরি করতে পারে।
 
৩। দই
দই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে মিষ্টি দইয়ের চেয়ে টক দই বেশী উপকারি। আপনার শিশু শুধু টক দই খেতে না চাইলে এর সাথে মধু মিশিয়ে দিন। দইয়ের ফাঙ্গাসবিরোধী উপাদান সর্দি-কাশির সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং হজম প্রক্রিয়ার উন্নয়ন করে। দই একটি প্রোবায়োটিক যা শরীরের খারাপ ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।
 
৪। হলুদ
হলুদে আছে প্রদাহ বিরোধী, ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং অ্যান্টিসেপটিক গুণাবলী, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে বাচ্চাদের দুধের সঙ্গে হলুদ এবং সামান্য মধু মিশিয়ে খাওয়া্তে পারেন। সকালে নাশতার আগে আধা চা চামচ মধুর সঙ্গে অল্প একটু কাঁচা হলুদের টুকরোও খাওয়াতে পারেন।
 
৫। পর্যাপ্ত ঘুম
গবেষণায় দেখা গেছে অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে। আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম সাইটোকিন (cytokine) নামক প্রোটিন নিঃসরণ করে। এই সাইটোকিন ইমিউন সিস্টেমের যোদ্ধা। ঘুম কম হলে সাইটোকিন উৎপাদন কমে যায় ফলে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। একজন নবজাতকের ১৬ ঘন্টা, ২-৩ বছর বয়সি শিশুর ১১ থেকে ১৪ ঘন্টা, ৪-৫ বছর বয়সি শিশুর ১০ থেকে ১৩ ঘন্টা এবং অন্যান্যের ৮ থেকে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুম প্রয়োজন হতে পারে।
 
৬। মাতৃদুগ্ধ 
মায়ের দুধে আছে ইমিউনিটি শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজন এন্টিবডি এবং শ্বেত রক্ত কণিকা। মায়ের দুধ শিশুকে সংক্রমণ বা ইনফেকশান, এলার্জি, ডায়ারিয়া, নিউমোনিয়া, মেনেঞ্জাইটিস এবং মূত্রনালীর ইনফেকশান থেকে রক্ষা করে। মায়ের স্তন্যপান হচ্ছে শিশুর জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার।
 
৭। সূর্যালোক
সূর্যের আলোয় আছে ভিটামিন ডি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই প্রয়োজনীয়। আমাদের শরীর ভিটামিন ডি উৎপাদন করে না তাই এটা আমাদের নিতে হবে সূর্যালোক বা অন্য কোন খাবার থেকে। প্রতিটি শিশুর উচিৎ সপ্তাহে ৩-৪ দিন দুপুরে ছাদ বা বারান্দায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যালোক গ্রহণ করা। 
 
৮। ডিম 
ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ দু’টোতেই আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন ও মিনারেল। কুসুমে আরো আছে কোলেস্টেরল, চর্বি দ্রবণীয় (fat soluble) ভাইটামিন ও প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড। এছাড়া ডিমে আছে প্রোটিন, যা একটি কার্যকর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয়। ডিমে আরও আছে রোগ প্রতিরোধের জন্য দরকার বেশ কিছু নিউট্রিয়েন্ট যেমন ভিটামিন ডি, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, এবং ভিটামিন ই। যেসব মুরগীকে সব্জিজাত খাবার খাওয়ানো হয়, সেগুলোর ডিম সবচেয়ে বেশী পুষ্টিকর।
 
৯। চিকেন সুপ
অসুস্থ হলে চিকেন সুপ খাওয়াটা খুবই সাধারণ ব্যপার। কারণ এটা সর্দি-কাশি ভাল করার সাথে সাথে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মুরগীর মাংসে আছে প্রচুর ভাইটামিন বি-৬। শুধুমাত্র ৮৫ গ্রাম মুরগীর মাংসেই আছে প্রতিদিনের প্রয়োজনের ৫০% ভাইটামিন বি-৬। ভাইটামিন বি-৬ শরীরের বিভিন্ন প্রকারের কেমিক্যাল রিয়েকশানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া এটি নতুন লাল রক্ত কণিকা তৈরীতেও ভূমিকা রাখে। মুরগী সেদ্ধ করার সময় এর হাড় থেকে বের হয় জেলাটিন, কনড্রয়টিন এবং অন্যান নিউট্রিয়েন্ট, যা অন্ত্র সুস্থ রাখতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে চিকেন সুপ ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে।
 
১০। বাদাম
সব ধরণের বাদামই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। আখরোট (walnut) ও কাঠবাদামে (almond) এ আছে প্রচুর ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এসব বাদামে থাকা ভাল ফ্যাট ফুসফুসকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। স্ন্যাক্স হিশেবে শিশুকে এসব বাদাম দিতে পারেন।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক 
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK