বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৯:৩৯

ফাঁসির আসামি হয়েও ২২ বছর যার রাজত্ব, ছিলেন সিরিয়াল কিলার

ফাঁসির আসামি হয়েও ২২ বছর যার রাজত্ব, ছিলেন সিরিয়াল কিলার

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রওশন আলী ওরফে উদয় মণ্ডল ছিলেন একজন সিরিয়াল কিলার। ফাঁসির আসামি হয়েও পরিচয় গোপন করে পালিয়ে ছিলেন রাজশাহীতে। ২২ বছর ধরে দাপটে চলাচল করে আসছিলেন তিনি। সেখানে গিয়ে নিজের নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে গাজীপুরের ঠিকানায় উদয় মণ্ডল নামে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। যিনি ২০০০ সালে ২১ জুন স্কুলশিক্ষক আমজাদ হত্যা মামলার ১ নম্বর চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি।

১৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে কাওরানবাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। খন্দকার আল মঈন জানান, র‌্যাব-৫ এর অভিযানে ১৮ আগস্ট বুধবার মধ্যরাতে রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানার ভারালীপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে একটি সভা চলাকালীন প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তদের অতর্কিত গুলিতে নিহত হন কাজী আরেফসহ পাঁচজন। ওই ঘটনায় দৌলতপুর থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় ২৯ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা দায়রা জজ আদালত ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

এরপর আসামিরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ২০০৮ সালের ৫ আগস্ট উচ্চ আদালত ৯ আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। আর বাকি ১৩ জনকে খালাস দেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি তিনজন আসামির ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়। এছাড়া একজন আসামি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অপর পাঁচ আসামি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় রওশনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, রওশন স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে রাজবাড়ীস্থ একটি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর ১৯৯২ সাল থেকে সীমান্তবর্তী চোরাচালান, হাট ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ কাজে সম্পৃক্ত হন। এসব কাজে তিনি এলাকায় সন্ত্রাসী চক্র গড়ে তোলেন। তার সঙ্গে চরমপত্রী দলের সখ্যতাও তৈরি হয়। ১৯৯৮ সাল পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হন তিনি। এ সময় মাঝে মধ্যে গা ঢাকা দিতে রাজশাহীতে অস্থায়ীভাবে অবস্থান শুরু করেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজশাহীতে আসল পরিচয় গোপন করে ‘আলী’ নামে নিজেকে পরিচয় দিতেন রওশন। রাজশাহীর স্থানীয়রা জানতেন রওশনের আদি নিবাস গাজীপুর। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি একটি গরুর খামার স্থাপন করেন। পরবর্তীতে জমি কেনা-বেচার ব্যবসায় যুক্ত হন। এভাবে ধীরে ধীরে রাজশাহীতে স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন তিনি। রাজশাহীতে অবস্থানকালে ‘উদয় মণ্ডল’ নামে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করেন। তবে সে নিজ এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। প্রভাব বিস্তার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে সে মাঝে মধ্যেই নিজ এলাকায় এসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেই আবার গা ঢাকা দিত।

কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে রওশন জানান, ওই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ছাড়াও সমন্বয় এবং পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। এছাড়া চেয়ারম্যান বাকি ও স্থানীয় আমজাদ হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও পরিকল্পনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। তার নামে ২০০৫ সালে গাংনীতে একটি ডাকাতি মামলাও রয়েছে। কাজী আরেফ ছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আরও ছয় থেকে সাতজনেরহত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও পরিকল্পনার সঙ্গেও তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।
উত্তরণবার্তা/এআ

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK