উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : বরিশাল মহাশ্মশানে সনাতন ধর্মালম্বীদের ভূতচতুর্দশী পূণ্য তিথিতে অনুষ্ঠিত হবে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দীপাবলি উৎসব। আগামীদিন শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) বিকেল চারটা ৩২মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে দুই শত বছরের অধিক পুরনো এই দীপাবলি উৎসব। উৎসব শেষ হবে শনিবার বেলা ২টা ৮মিনিটে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে প্রতি বছরের ন্যায় উপমহাদেশে একমাত্র বৃহত্তর দীপাবলি উৎসব এই মহাশ্মশানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিবছর কালি পূজার আগের দিন হিন্দু ধর্মালম্বীদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা ও নিজের পূণ্য অর্জনের জন্য প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী দীপাবলি অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে যোগ দিতে বরিশাল মাহাশ্মানে আসেন ভারতসহ দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো মানুষ। পূর্ব পুরুষের সমাধিতে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে জ্বালিয়ে দেন আলোর রোশনাই।
উৎসবকে ঘিরে মহাশ্মশান রক্ষা কমিটি দু’ দিনব্যাপী মেলার আয়োজনসহ পুরো মহাশ্মশান ঘিরে তোরণ নির্মাণ এবং আলোকসজ্জা করে। অতীতে দীপাবলির দিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে মহাশ্মশানে। কিন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে মহাশ্মশান রক্ষা কমিটি সংক্ষিপ্ত পরিসরে দীপাবলি উৎসব অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জি জানান, এ বছর দু’দিনের মেলা থাকছে না। নির্মাণ করা হবে না তোরণ। কমিটির পক্ষ থেকে আলোকসজ্জাও করা হবে না। বরং মহাশ্মশানে প্রবেশ করতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। হাত ধোয়ারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রবেশপথগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে জীবাণুনাশক টানেল। সার্বক্ষণিক মাইকে প্রচার করা হবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বজনদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, দীপবলি উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো মহাশ্মশান এলাকায় ২০টি সি সি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হবে। ১৫০ জন পোশাকধারী পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন মহাশ্মশানে। এ ছাড়াও র্যাবের একাধিক টিম নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন। মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সঙ্গে মত বিনিময় করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দীপাবলি উৎসব উদযাপনের জন্য আহ্বান জানান। তারাও করোনা পরিস্থিতি বিষয়টি মাথায় রেখ সল্প পরিসরে দিপাবলী উৎসবের আয়োজন করেছেন।
মহাশ্মান রক্ষা কমিটির সাধারন সম্পাদক তমাল মালাকার জানান, বরিশাল নগরীর কাউনিয়া বিসিক রোড ও লাকুটিয়া খালের মধ্য স্থান ঘিরে প্রায় ৫ একর জায়গা নিয়ে ২০০ বছরের প্রাচীন দেশের অন্যতম বৃহৎ মহাশ্মশান। শুধু দেশেরই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম মহাশ্মশান এটি। যতদূর জানা গেছে, বৃহত্তর পরিসরে বরিশাল মহাশ্মশানের ছাড়া অন্য কোনো দেশে দিপাবলী উৎসব অনুষ্ঠিত হয় না। বর্তমানে বরিশালে এ মহাশ্মানের অবস্থিত এক লাখের অধিক সমাধিমন্দির রয়েছে।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, কত বছর আগে এই শ্মশানে দীপালি উৎসব শুরু হয়েছে তা জানা নেই। তবে ছোটবেলা থেকে বাবা, ঠাকুরদার কাছ থেকে যতটুকু জেনেছি, তাতে প্রায় ২০০ বছর আগে শ্মশান দীপালি উৎসব শুরু হয়েছে। দিনে দিনে এর ব্যাপ্তি বেড়েছে। দিপালী অনুষ্ঠান ভারতে দিপাবলী উৎসব নামে পরিচিত হলেও বরিশালে দিপালী উৎসব হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। অনুষ্ঠানে দলমত নির্বিশেষে সকল ধর্মে মানুষ এ অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসে।
উত্তরণ বার্তা/এআর