রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৩:২৪
ব্রেকিং নিউজ

ফুটবলে মেতেছে বিশ্ব

ফুটবলে মেতেছে বিশ্ব

উত্তরনবার্তা ডেস্ক : লকডাউনের এই কঠিন সময়ে রাতভর ইউরোয় বুঁদ হয়ে থাকার পর ভোরের আলোয় মেসি ম্যাজিকে নয়ন জুড়িয়েছেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। তার দাপুটে পারফরম্যান্সে ইকুয়েডরকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। এখন সবার প্রত্যাশা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ক্ল্যাসিক ফাইনাল। পরশু রাতে ইউরোয় দাপট দেখিয়েছে ইংল্যান্ড। ইউক্রেনকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ২৫ বছর পর ইউরোর সেমিতে জায়গা করে নিয়েছে ইংলিশরা। সেমিতে তাদের প্রতিপক্ষ চেক রিপাবলিককে ২-১ গোলে পরাজিত করা ডেনমার্ক।

ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই গোলকিপারকে একা পেয়ে জালে বল জড়াতে পারেননি মেসি। তাই বলে হতাশ হয়ে পড়েননি তিনি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে রদ্রিগো ডি পলকে দিয়ে গোল করিয়েছেন তিনি। ৮৪ মিনিটে লাওতারো মার্টিনের গোলটিও আসে মেসির পাসে। এর পরও যেন মন ভরছিল না। যোগ করা সময়ে বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত ফ্রিকিকে গোল করে জয়ের পূর্ণতা দেন মেসি। একই সঙ্গে সেমির প্রতিপক্ষ কলম্বিয়াকে একটি বার্তাও দিয়ে রাখলেন তিনি। এবারের কোপায় দারুণ ছন্দে আছেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। এখন পর্যন্ত চারটি গোলের পাশাপাশি চারটি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। তবে ব্যক্তিগত সাফল্য নিয়ে মোটেও ভাবছেন না তিনি। সেমি নিশ্চিত হওয়ার পর মেসি বলেন, 'আমি সবসময় বলেছি, ব্যক্তিগত পুরস্কার আমার কাছে গৌণ। আমরা এখানে এসেছি ভিন্ন কিছুর জন্য। আমাদের একটি লক্ষ্য আছে এবং আমাদের মনোযোগ পুরোপুরি সেদিকেই।' মেসির লক্ষ্য যে কোপা শিরোপা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কোপার শেষ চারে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া। কোপার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ১৫ বার শিরোপাজয়ী উরুগুয়েকে টাইব্রেকারে বিদায় করে দিয়ে সেমিতে এসেছে কলম্বিয়া। লাতিন ফুটবলের আরেক পরাশক্তি ব্রাজিল সেমিতে খেলবে পেরুর বিপক্ষে। তাই ১১ জুলাই ভোর ৬টায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা স্বপ্নের ফাইনাল হয়েও যেতে পারে। করোনার কারণে ব্রাজিলের শূন্য গ্যালারিতে কোপা হচ্ছে, তার পরও উত্তেজনা কমতি নেই। মারাকানার ঐতিহাসিক মঞ্চে সেই স্বপ্নের ফাইনালের জন্যই তীর্থের কাকের মতো চেয়ে আছে পুরো বিশ্বের ফুটবল রোমান্টিকরা। মেসি বনাম নেইমার লড়াই দেখার জন্য যেন আর তর সইছে না।

রোমাঞ্চ ও উত্তেজনার নিরিখে ইউরো অবশ্য এক কাঠি এগিয়ে রয়েছে। করোনার এই কঠিন সময়ে ইউরোপের এগারো শহরে দর্শকভর্তি গ্যালারিতে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে রুদ্ধশ্বাস নৈপুণ্যে একের পর এক অঘটন ঘটছে। এরই মধ্যে ২৮ জুন ফুটবল ইতিহাসের স্মরণীয় এক রাত উপহার দিয়েছে স্পেন ও সুইজারল্যান্ড। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, ইউরো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল, চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি এবং ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দল বেলজিয়াম ছিটকে গেছে আসর থেকে। এসব অঘটনের ভিড়েও ইংল্যান্ড স্বমহিমায় উজ্জ্বল। রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইউক্রেনকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে তারা। জোড়া গোল করে ম্যাচেরনায়ক হয়ে ওঠেন অধিনায়ক হ্যারি কেন। অবাক ব্যাপার, বিশ্বকাপ জিতলেও এখনও ইউরোর ফাইনালের স্বাদ পায়নি ফুটবলের জনক ইংল্যান্ড। তাই ইতিহাস গড়ার স্বপ্নের বিভোর হ্যারি কেন-রাহিম স্টার্লিংরা। ডেনমার্কের বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলবে তারা ঘরের মাঠ ওয়েম্বলিতে, আর ইউরোর ফাইনালও হবে একই মাঠে। তাই ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো ইউরো জয়ের সুবর্ণ সুযোগ ইংল্যান্ডের সামনে। ১৯৬৮ ও ১৯৯৬ সালে সেমিতে উঠেও ফাইনাল খেলতে পারেনি তারা। এবার সেই অপূর্ণতা ঘোচানোর প্রত্যাশায় ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট, 'এখনও অনেক দূর যেতে হবে আমাদের। আমাদের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য। আমরা কখনও ইউরোর ফাইনাল খেলতে পারিনি। এবার আমাদের সামনে ইতিহাস গড়ার সুযোগ।'

ইংলিশদের সেমির প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক এগিয়ে চলছে ভালোবাসার শক্তিতে। ১২ জুন নিজেদের প্রথম ম্যাচে ডেনিশদের সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হন। সতীর্থকে মৃত্যুর দুয়ারে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন তারা। সে ধাক্কাতেই প্রথম দুই ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল, তবে এরিকসনের জন্য নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার প্রত্যয়ে মাঠে নেমে সেই ডেনমার্ক এখন সেমিফাইনালে। ১৯৯২ সালে ইউরোজয়ী ডেনমার্ককে হারানো মোটেও সহজ হবে না ইংল্যান্ডের জন্য।

ইংলিশদের শিরোপা-স্বপ্নে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ইতালি। এবারের ইউরোয় দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে রবার্তো মানচিনির দল। সেমিতে আজ্জুরিদের প্রতিপক্ষ আরেক ফেভারিট স্পেন। টিকিটাকায় পুরো মাঠ নিয়ন্ত্রণ করলেও স্প্যানিশরা অবশ্য স্কোরারের সংকটে ভুগছে। কোয়ার্টার ফাইনালে সুইজারল্যান্ডের পোস্টে ২৮ শট নিয়েও গোলের দেখা পায়নি তারা। যদিও এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে স্পেন। কিন্তু গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচ ও সুইসদের বিপক্ষে তাদের স্ট্রাইকারদের দুর্বলতা প্রকটভাবে ফুটে ওঠে। তাই সেমিতে ইতালিই ফেভারিট।
উত্তরণবার্তা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK