শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৪:৫২
ব্রেকিং নিউজ

বর্ষবরণে ৭ পদ

বর্ষবরণে ৭ পদ

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : চিরন্তন বাঙালি ঐতিহ্য ও বাংলা সংস্কৃতি উদযাপনের উপলক্ষ নিয়ে আসে পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষকে বরণ করে নিতে বৈশাখের প্রথম দিন বাঙালিয়ানা পোশাকের সঙ্গে চলে খাবারের রকমারি আয়োজন। নানারকম ভর্তা, মাছ বা ভাতই নয়, পহেলা বৈশাখ জমে ওঠে দেশীয় ঘরানার খাবারদাবারে। এ ছাড়া বৈশাখে বিভিন্ন এলাকায় নানারকম জনপ্রিয় খাবার খাওয়ার রেওয়াজ আছে। তেমনই কিছু ভিন্নধর্মী খাবারের রেসিপি -
আস্ত ইলিশ কাবাব
উপকরণ : ইলিশ মাছ ১২০০ গ্রাম, লবণ ও হলুদ প্রয়োজনমতো, শুকনা মরিচ কয়েকটি, আলু একটি (সেদ্ধ), তেল ৪ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ২টি, বড় পেঁয়াজ একটি (কুচি) এবং লেবুর রস সামান্য।
প্রস্তুত প্রণালি : ইলিশ মাছ টুকরো করে পেটির অংশ সরিয়ে ফেলুন। পিঠের অংশ ও লেজ ও মাথা দিয়ে তৈরি করতে হবে ইলিশের কাবাব। মাছের মাথার ভেতরের ফুলকা ফেলে পরিস্কার করে নিন।। লবণ ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে মাছ মেখে রাখুন। ইলিশের পিঠের অংশ আলাদা করে অল্প পানিতে সেদ্ধ করে নিন। এমনভাবে পানি দেবেন, যেন সেদ্ধ হওয়ার পর অতিরিক্ত পানি না থাকে। লবণ, হলুদ ও পানি দিয়ে সেদ্ধ করুন মাছের টুকরা। বেশ খানিকটা তেল দেখবেন উঠে গেছে। এটি ইলিশের তেল। লেজ আর মাথা আলাদা করে মচমচে করে ভাজতে হবে। একই সঙ্গে ভেজে নিন শুকনা মরিচও। সেদ্ধ করা ইলিশের টুকরা থেকে সাবধানে কাঁটা বেছে নিন। একটি প্লেটে ভাজা শুকনা মরিচ ডলে গুঁড়া করে নিন। ইলিশের তেল ও সামান্য লবণ দিন। সবকিছু একসঙ্গে মেখে বেছে রাখা মাছ দিয়ে দিন। ছোট একটি আলু একটু শক্ত করে সেদ্ধ করে দিয়ে দিন মিশ্রণে। চুলায় মিডিয়াম আঁচে প্যান গরম করে তেল দিয়ে দিন। তেলে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ কুচি ভেজে নিন। পেঁয়াজ হালকা সোনালি হয়ে গেলে আলু ও ইলিশের মিশ্রণ দিয়ে মিনিট দুয়েক নেড়ে নিন। মাছ ঝুরা ঝুরা হয়ে গেলে লেবুর রস দিয়ে নেড়ে নামিয়ে ঠান্ডা করুন মিশ্রণ।

নকশি পিঠা
উপকরণ : ২৫০ গ্রাম চালের গুঁড়া বা ময়দা, ৪টি ডিম, ১০০ গ্রাম ডাল, ২ কাপ পরিমাণ বিস্কুট গুঁড়া, পরিমাণমতো লবণ, এক কাপ পরিমাণ চিনি।
প্রস্তুত প্রণালি : প্রথমেই একটি প্যানে এক কাপ পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। তার মধ্যে চালের গুঁড়া বা ময়দা দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে লবণ পানির সঙ্গে আগেই দিয়ে দিতে হবে। পানির সঙ্গে ময়দা মিশিয়ে হালকা গরম অবস্থায় ভালোভাবে হাত দিয়ে মাখাতে হবে। সঙ্গে ডিম ফেটিয়ে দিয়ে দিতে হবে। এবার ডিম দিয়ে মাখানোর পরে এর সঙ্গে বিস্কুটের গুঁড়া দিয়ে দিতে হবে, সঙ্গে ডাল সিদ্ধ করে এর সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে, এমনভাবে মেশাতে হবে, যাতে কোনো উপকরণ আলাদাভাবে না বোঝা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে মিক্সিংটা যেন একদম নরম বা শক্ত না হয়। তাহলে নকশা করতে সমস্যা হবে। এমনভাবে নিতে হবে যাতে হাতে ধরে নকশা করা যায়। মিক্সিং আপনার ইচ্ছেমতো নকশা করে কেটে নিলেই হবে। নকশা করা পিঠাগুলো এবার ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে। ভাজার সময় মনে রাখতে হবে, একটি প্যানে তেল নিয়ে গরম করে তাতে মাঝরি আঁচে ভাজতে হবে, তবে ডুবন্ত তেলে ভাজতে হবে। বাদামি রং করে ভাজলে দেখতে ভালো হবে আর খেতেও ভালো হবে। পিঠা ভেজে তেল ঝরিয়ে ওপরে গুড় গলিয়ে দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

বউয়া ভাত আর ভর্তা
উপকরণ : বউয়া ভাতের জন্য খুদের চাল ২ কাপ, সয়াবিন তেল ০.২৫ কাপ, তেজ পাতা একটা, শুকনো মরিচ ৩টি, পেঁয়াজ কুচি ০.৫ কাপ, আদা কুচি এক টেবিল চামচ, রসুন কুচি এক টেবিল চামচ, লবণ এক চা চামচ, কাঁচামরিচ ৩/৪টি, ২ কাপ পানি। শুঁটকি ভর্তার জন্য ৭/৮টা চ্যাপা শুঁটকি, ১৫-১৬টা দেশি পেঁয়াজের কুচি, ১০-১২টা রসুন কুচি, পরিমাণমতো হলুদ, লবণ, মরিচ এবং তেল। ধনেপাতার ভর্তার জন্য ধনেপাতা পরিমাণমতো, রসুন কোয়া কয়েকটি, কাঁচামরিচ একটি, লবণ স্বাদমতো, সরিষা তেল পরিমাণমতো। মসুর ডালের ভর্তার জন্য মসুর ডাল আধা কাপ, পেঁয়াজ একটি, কাঁচামরিচ একটি। লবণ পরিমাণমতো, সরিষা তেল এক টেবিল চামচ।

প্রস্তুত প্রণালি : খুদের চাল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। একটি হাঁড়িতে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি, আদা, রসুন, তেজপাতা, কাঁচামরিচ ও সামান্য লবণ দিয়ে ভালো করে ভাজতে হবে। পেঁয়াজের রং হলদে হয়ে এলে ধুয়ে রাখা খুদের চালগুলো দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার ভাজা হয়ে গেলে পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। চালগুলো ফুটে এলে ১০ থেকে ১২ মিনিট দমে রেখে নামিয়ে নিতে হবে।

শুঁটকি ভর্তা : প্রথমে তেলে পেঁয়াজ আর রসুন ঢেলে বেশ খানিকক্ষণ নাড়ুন। হালকার চেয়ে একটু বেশি বাদামি রং এবং সিদ্ধ হয়ে, নরম হয়ে গেলে হলুদ, মরিচ আর লবণ দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নাড়ুন। তারপরে শুঁটকি দিয়ে দিন। এর পরে আবারও নাড়ুন। ঢেকে রেখে দিন, কিছুক্ষণ পরপর খুলে আবারও নাড়ুন। কিছুক্ষণ পরে যখন পুরোটার রং গাঢ় বাদামি হয়ে যাবে, শুঁটকি, পেঁয়াজ, রসুন কিছুই আলাদা করে চেনা যাবে না এবং পেঁয়াজ আর মসলা থেকে তেল আলাদা হয়ে ভেসে উঠবে, তখন নামিয়ে ফেলুন।

ধনেপাতার ভর্তা : একটি কড়াইতে সরিষার তেলে রসুন ভেজে নিয়ে এতে কাঁচামরিচ, ধনেপাতা আর পরিমাণমতো লবণ মিশিয়ে একটু ভেজে তুলে পাটায় বেটে নিতে হবে।
মসুর ডালের ভর্তা : মসুর ডাল ৩ থেকে ৪ কাপ পানি দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। এবার ডাল ভালো করে সিদ্ধ হয়ে ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন। এবার ডাল, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ কুচি, লবণ, সরিষার তেল দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিন।

এবার খুদের চালের বউয়া ভাতের সঙ্গে মনের মতো ভর্তা সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

মুড়ির মোয়া
উপকরণ : মুড়ি ২৫০ গ্রাম, গুড় ১০০ গ্রাম, পানি সামান্য, ঘি (মোয়া গোল করার জন্য)।

প্রস্তুত প্রণালি : মৃদু আঁচে কড়াই বসিয়ে অল্প পানিসহ গুড় জ্বালাতে হবে। গুড় গলতে শুরু করলে সামান্য পানির ছিটা দিন। এবার গুড় কিছুক্ষণ জ্বাল দিয়ে আঠালো করতে হবে। গুড় আঠালো হয়ে গেলে মুড়ি দিয়ে দিন। গুড় ও মুড়ি ভালোভাবে নেড়ে নেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার নামিয়ে হালকা ঠান্ডা হলে হাতের তালুতে সামান্য ঘি মেখে সহনীয় গরম থাকতেই ভালোভাবে চেপে হাতের তালুতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মোয়া বানাতে হবে।

পায়েস
উপকরণ : দুধ ১ লিটার, চাল ১০০ গ্রাম, দারুচিনি ১ ইঞ্চি, এলাচ ৩টি, তেজপাতা ২টি, চিনি স্বাদমতো, লবণ সামান্য, বাদাম, কিশমিশ

প্রস্তুত প্রণালি : দুধ ঘন করে জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। এক লিটার দুধের মধ্যে ১০০ গ্রাম চাল দিলে ভালো হয়। চাল ধুয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে পানিতে ভিজিয়ে। তারপর দুধ জ্বাল দিতে হবে। দুধ যখন ফুটতে থাকে তখন চাল দুধের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। সামান্য লবণ দিতে হবে। চাল অর্ধেক সেদ্ধ হয়ে এলে তারপর চিনি মেশাতে হবে। চিনি মেশানোর পর দুধ ঘন হয়ে চাল পুরো সেদ্ধ হয়ে এলে চুলায় থাকা অবস্থায় এর মধ্যে দারুচিনি, এলাচ ও তেজপাতা দিতে হবে। যখন দুধ ঘন হয়ে আসবে, চাল ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে যাবে, পরিমাণমতো চিনি দেওয়া হলে তারপর নামিয়ে নিতে হবে। নামানোর পর ঠান্ডা করে পাত্রে রেখে ওপরে কিছু বাদাম ও কিশমিশ দিতে হবে। এরপর পরিবেশন করুন মজাদার পায়েস।

ইলিশ ভাজা
উপকরণ : ইলিশ মাছ ২ টুকরা, হলুদ গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, লবণ ১/২ চা চামচ, তেল ৩ টেবিল চামচ।

প্রস্তুত প্রণালি : সবগুলো মসলা ইলিশ মাছের সঙ্গে মেখে রেখে দিতে হবে। ১০ মিনিট পর অন্য একটি পাত্রে তেল গরম হতে দিন। তেল গরম হয়ে এলে অল্প আঁচে ভেজে নিতে হবে। হালকা বাদামি রং ধারণ করলে মাছগুলো নামিয়ে নিয়ে পান্তার সঙ্গে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

তিলের নাড়ু
উপকরণ : ১০০ গ্রাম তিল, এক কাপ আখের গুড় এবং পরিমাণমতো পানি।

প্রস্তুত প্রণালি : কড়াইতে তিল ভেজে নিতে হবে। গুড় আর পানি কড়াইতে নিয়ে মিশিয়ে ঘন করে নিয়ে তিল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। একটা থালাতে মিশ্রণ নিয়ে অল্প ঠান্ডা হলে হাতে অল্প পানি দিয়ে গোল গোল করে নাড়ু বানিয়ে নিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
উত্তরণ বার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK