বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৮:০৩

পারসিভিয়ারেন্স সংশয়ের অবসান ঘটাতে পারবে

পারসিভিয়ারেন্স সংশয়ের অবসান ঘটাতে পারবে

উত্তরণ বার্তা তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : সৌরজগত্ স্রষ্টার বিস্ময়কর সৃষ্টি। কত রহস্য লুকিয়ে আছে এখানে। এটা শুধু সৌন্দর্যের আধারই নয়, বরঞ্চ অজানা তত্ত্ব ও তথ্য ভরা এক স্থান। মহাকাশ, গ্রহ, নক্ষত্র নিয়ে রহস্য ভেদ করতে, অজানা কে জানার তীব্র আকাঙ্কা নিয়ে বিজ্ঞানের স্পর্শে মহাকাশ পানে নিরন্তর ছুটে চলা মানুষের। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলশ্রুতিতে মহাকাশ নিয়ে গবেষণার পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, পৃথিবী অদূর ভবিষ্যতে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে ওজোন স্তর ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে যার কারণে পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবী ধ্বংসের সম্মুখীন হলে মানব সভ্যতার নিরাপত্তার স্বার্থে নিরাপদ কোনো স্থানে মানব জাতির বিকাশে সবাই উদগ্রীব হয়ে উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক এবং সংগত। সে ক্ষেত্রে মানুষের বিবেচনার প্রথম পছন্দ হতে পারে লাল গ্রহ সাদৃশ্য মঙ্গল। এজন্যই ভবিষ্যতে মানব সভ্যতাকে নিরাপদ রাখার জন্য মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কারণ, বর্তমান পৃথিবীর উপযোগী আবহাওয়া ও জলবায়ু বিবেচনায় সৌরজগতের সব থেকে কাঙ্ক্ষিত গ্রহ মঙ্গল।

এজন্য মঙ্গল গ্রহ নিয়ে জানার প্রবল আকাঙ্ক্ষা থেকেই সৌরজগতের এ লাল গ্রহে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ক্রমাগত অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে প্রায় ৩ কোটি ৮৬ লাখ মাইল দূরত্বের গ্রহটিতে পানির উত্স, জীবের অস্তিত্ব অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) ১৯৭৬ সালে মঙ্গলে ভাইকিং অভিযান পরিচালনা করে। পরবর্তীতে চীন, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের রহস্য উন্মোচনে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মনুষ্যবিহীন রোভারগুলো মঙ্গল গ্রহ নিয়ে গবেষণাকে এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। সর্বশেষ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশযান ‘পারসিভিয়ারেন্স’ নিরাপদে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে অবতরণ করেছে। এ অভিযানের মাধ্যমে নাসা মঙ্গল গ্রহে এক টন ওজনের দ্বিতীয় রোভার পাঠাল। এর পূর্বে ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো নাসার রোভার ‘কিউরিসিটি’কে মঙ্গলে পাঠানো হয়। সেটি এ গ্রহের পৃথক একটি খাদে নেমেছিল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী এই ঘটনার মাধ্যমে দূরের লাল গ্রহ মঙ্গল মানব সভ্যতার কতটা সন্নিকটে এলো সেটা সময়ই বলে দিবে।পারসিভিয়ারেন্স গ্রহটির নিরক্ষরেখার কাছে জেজিরো নামের বিশেষ একটি খাদে এটি অবতরণ করেছে বলে জানিয়েছে ।

শত শত কোটি বছর আগে জেজিরোতে একটি বিরাট হ্রদ ছিল বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। ধারণা করা হয়, সেখানে পানি ও প্রাণেরও সম্ভাব্য অস্তিত্ব ছিল। বলা হচ্ছে, মঙ্গলে মানুষের পাঠানো এটি সর্বাধুনিক যান। এই মহাকাশযানটিতে রয়েছে একটি ল্যান্ডার ভিশন সিস্টেম, রয়েছে টেরেন রিলেটিভ নেভিগেশন। রোভারটিতে সাতফুট লম্ব্বা রোবটিক হাত, ১৯টি ক্যামেরা, দুইটি মাইক্রোফোন রয়েছে। এই মঙ্গলযানে রিয়েল টাইম ছবি তুলে রাখার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র রয়েছে। পারসিভিয়ারেন্স অবতরণের পর প্রথম ছবিও পাঠিয়েছে।

আগামী দুই বছর ছয় চাকার রোবটটি মঙ্গলে অবস্থান করবে। প্রাচীন হ্রদ এলাকার মাটি পাথরের মধ্যে খনন চালিয়ে মঙ্গলে অতীত অণুজীবের অস্তিত্ব সন্ধানের প্রচেষ্টা চালাবে যানটি। তাছাড়া মঙ্গলে হেলিকপ্টার চালানো সম্ভব কি না, সেটি পরীক্ষা করার জন্য রোবটটির সঙ্গে একটি ছোট আকারের হেলিকপ্টার যুক্ত করা হয়। হেলিকপ্টারটির নাম ইনজেনুইটি, যার মূল উদ্দেশ্য ভিনগ্রহে উড়োযান উড়ানো সম্ভব কি না সেটা পর্যবেক্ষণ করা। মঙ্গলের ভূমি ও পলি গঠন, পানির উত্স, জীবাশ্ম, রাসায়নিক আলামত, আবহাওয়া ও জলবায়ু, তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ইত্যাদি বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করবে পারসিভিয়ারেন্স। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল ৯৫ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড সংবলিত। বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে পারসিভিয়ারেন্সে একটি যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে যা কার্বন ডাই-অক্সাইডকে অক্সিজেনে রূপান্তর করতে সক্ষম। এখন দেখার বিষয় , এ রোভারটি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলকে কতটুকু প্রভাবিত করতে পারে! এত আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ রোবট পূর্বে মঙ্গল পৃষ্ঠে অবতরণ করেনি। যার কারণে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছে, মঙ্গলের এ অভিযান নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। নাসার মনুষ্যবিহীন এ রোবটিক মহাকাশযান মঙ্গল নিয়ে অনেক সংশয় দূর করতে পারবে সেটা অনুমেয়। মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের যে স্বপ্ন লালন করে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা, পারসিভিয়ারেন্স সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কতটুকু অগ্রসর হলো সেটা সময়ের পরিক্রমায় আমরা জানতে পারব। সৃষ্টিকর্তার এত বৃহত্ সৃষ্টিজগতের মধ্যে শুধু আমাদের পৃথিবী কি প্রাণী বসবাসের উপযুক্ত, নাকি অতীতে মঙ্গলেও প্রাণীর অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল সে কৌতূহল মেটানোর বুনিয়াদি কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে পারসিভিয়ারেন্স দ্বারা। লাল গ্রহ সম্পর্কে মানব সমাজের বহু লালিত প্রশ্নের উত্তর পারসিভিয়ারেন্স দিতে পারে কি না সেটার জন্য অপেক্ষমাণ থাকতে হবে। সময়ের পরিক্রমায়, মঙ্গলে মানুষের পদার্পণ ঘটবে এই ইচ্ছা পোষণ করি।
উত্তরণ বার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK