শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২১:৫১
ব্রেকিং নিউজ

কী খাবে মানুষ

কী খাবে মানুষ

উত্তরণ বার্তা লাইফস্টাইল ডেস্ক : আমিন তার এক ভাইয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে খাবারের জন্য লইট্টা শুঁটকি আনলেন। খুব যত্ন করে সেই শুটকি রান্না করেন, খেলেন খুব মজা করে। খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা করে জানলেন, আমিনের শরীরে ফরমালিন ও কীটনাশকের রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় এমন হয়েছে। এমন অনেক চিত্র দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন মেডিকেলগুলোতে গেলে।

চিংড়ি, ছুরি, লইট্টা, পোয়া, চান্দা, ফাইস্যা, কোড়াল, লক্কা, টুনা, চইস্কা, নাইল্লা, ধলছা, সিলং ইত্যাদি মাছের শুঁটকি। শুঁটকি মাছ খেতে পছন্দ করে না এমন লোক খোঁজে পাওয়া ভার। কিন্তু, সাবধান! সুস্বাদু এই খাবারে মেশানো হয় কীটনাশক, বিষাক্ত রাসায়নিক। যা মানবদেহে প্রবেশ করে দেখা দিতে পাড়ে মরণব্যাধি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক সব রোগ।

সংশ্লিষ্টদের সূত্রে আরও জানা যায়, সমুদ্র, নদীনালা, খালবিল থেকে আহরিত বিভিন্ন মাছ শুঁটকিতে রূপান্তরিত করার পদ্ধতিটি এখনও অস্বাস্থ্যকর ও সেকেলে। দেশ জুড়ে প্রায় একই পদ্ধতিতে মাছকে শুঁটকিতে পরিণত করা হয়। খোলা মাঠ, বাড়ির উঠোন সমুদ্র উপকূলবর্তী তীর এলাকায় বাঁশ ও মাচা বেঁধে বড় মাছগুলো ঝুলিয়ে দিনের পর দিন রোদে শুকানো হয়। শুকিয়ে ফেলার পর শুঁটকি মাছে শুরু হয় মাছিসহ ক্ষতিকর বিভিন্ন পোকার আক্রমণ।

পোকামাকড় শুঁটকি মাছের ভেতর ঢুকে পড়ে। অবস্থান করে দীর্ঘ সময়। একপর্যায়ে মাছের ভেতরের হাড়সহ পুরো অংশটিই পোকামাকড় নষ্ট করে ফেলে। এতে মাছের ওজন কমে যায়। আড়ত সংশ্লিষ্টরা কিনতে আগ্রহী হন না। লাভের পুরো অংশ নষ্ট হয়। আর এ থেকে শুঁটকি রক্ষা করতে মৎস্য আহরণকারীরা বেছে নেন কীটনাশক পন্থা।

সাধারণত, দীর্ঘদিন তা সংরক্ষণের জন্য শুঁটকিতে মেশানো হয় এনড্রিন, বাসুডিন, এগস, ডাইমেক্রন, হেপাটেকলোর, ডিডিটি পাউডার, গ্যার্মোক্সিন পাউডারসহ মারাত্মক সব বিষাক্ত কীটনাশক। শুধু তাই নয়, শুঁটকি যাতে পচে নষ্ট না হয় সে জন্য মেশানো হয় ফরমালিনসহ বিষাক্ত রাসায়নিক। ফলে শুকনো মাছে পোকার আক্রমণ হয় না। সংরক্ষণ করা যায় দীর্ঘ দিন। স্বাদ ও গন্ধ নষ্ট হয় না কখনও। স্প্রে করা কীটনাশকের কার্যকারিতাও অমলিন থাকে।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের খাদ্য ও বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. কে এম ফরমুজুল হকের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাছকে শুঁটকিতে পরিণত করে তা দীর্ঘ দিন সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার হয়। মাছি ও বিভিন্ন পোকামাকড় যাতে শুঁটকির ভেতর প্রবেশ করতে না পারে এজন্য শুঁটকিতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

শুঁটকিতে ফরমালিনসহ বিষাক্ত কীটনাশক এ বিষয়ে ড. ফরমুজুল হকের গবেষণা থেকে জানা গেছে, কৃষি জমিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে যে সব কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় , ঠিক একই কায়দায় শুঁটকি মাছ সংরক্ষণ করতেও তা ব্যবহার হচ্ছে। গবেষণায় তিনি কিছু সুপারিশ উল্লেখ করেন তাহল, দেশে মৎস্য আহরণ ও তা সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকে ও শুঁটকিতে রূপান্তর ও তা সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়ন করা।

শুঁটকিতে ফরমালিনসহ বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মানবদেহের ক্ষতি সর্ম্পকে জানতে চাইলে খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. বশির আহমেদ জানান, শুঁটকিতে মেশানো কীটনাশক জাতীয় বিষের কার্যকারিতা থাকে দীর্ঘ দিন। এমনকি রান্নার পরও এর কার্যকারিতা নষ্ট হয় না। কীটনাশক ও রাসায়নিক মেশানো শুঁটকি মাছ খেয়ে মানবদেহে যে সব রোগ বা রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে তার মধ্যে রক্ত শূন্যতা, স্নায়ুবিক বৈকল্য, চোখ ও ত্বকে জ্বালাপোড়া, শ্বাসকষ্ট, জন্ম বিকলাঙ্গতা, নিদ্রাহীনতা সহ ক্যান্সার, জন্ডিস, হার্ট অ্যাটাক, লিভার ড্যামেজ ও মরণব্যাধি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক সব রোগ।

মৎস্য অধিদপ্তর ও রাজধানীর সবচেয়ে বড় শুঁটকি মাছের পাইকারি বাজার কাওরানবাজার, যাত্রাবাড়ী এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমুদ্র উপকূলবর্তী মহেশখালি, কুতুবদিয়া, রাঙ্গাবালী, চরদুবলা, আফতাবিয়ার, সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, কুরুসকুল এলাকায় মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকিতে পরিণত করা হয় সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকার নদী ও সমুদ্রে পাওয়া যায় সুস্বাদু সব সামুদ্রিক মাছ। সেখানে আড়ত হয়ে চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
উত্তরণ বার্তা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK