মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২০:১০
ব্রেকিং নিউজ

দর্শনার্থী টানছে সূর্যমুখীর আভা মিটবে ভোজ্যতেলের ঘাটতি

দর্শনার্থী টানছে সূর্যমুখীর আভা  মিটবে ভোজ্যতেলের ঘাটতি

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : বাংলাদেশে রান্নায় ব্যবহৃত হয় ছয় ধরনের ভোজ্যতেল। এর মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে আছে সূর্যমুখী তেল।বছরে গড়ে ৩৭ শতাংশ হারে বাড়ছে এই তেল আমদানি। দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দামে লাগাম টানতে চলছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে বছরে ৩-৪ হাজার টন সূর্যমুখী তেলবীজ উৎপন্ন হয়। উৎপাদন বাড়লে তেলবীজ আর আমদানি করতে হবে না।  

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম দেওয়ানপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এলাকায় সড়কের পাশে ১ একরের বেশি জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, সূর্যমুখীর হলুদ আভায় ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সেই নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছে মানুষ। বাগান দেখতে আসা স্কুল শিক্ষিকা হাবিবা শারমিন বলেন, সূর্যমুখী ফুল সূর্যের দিকেই মুখ ঘুরিয়ে থাকে। সন্তানদের এর কারণ ব্যাখ্যা করেছি এবং দেখিয়েছি।  

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট বায়োলজির অধ্যাপক স্টেসি হারমার এর একটি গবেষণা নিবন্ধের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সূর্যের দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলে সূর্যমুখী গাছের পক্ষে অনেক বেশি ফোটন কণিকা শোষণ করা সম্ভব হয় এবং গাছের জন্য আলো হচ্ছে খাদ্যের মতোই একটা বস্তু। এছাড়া এই গাছের মধ্যে বায়োলজিক্যাল ঘড়ির মতো প্রক্রিয়া আছে। এতে  দিন ও রাতের পার্থক্য, সূর্য ওঠা ও অস্ত যাওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারে এই উদ্ভিদ। দিনে সূর্যমুখীর ডাটার পূর্বদিকের কোষ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, পশ্চিমদিকের কোষ অতটা বাড়ে না। তাই ভারসাম্যের কারণেই ফুল পশ্চিম দিকে ঘুরতে থাকে। রাতের বেলা দেখা যায় এর ঠিক উল্টো চিত্র। এটাকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘সার্কেডিয়ান ছন্দ’।  

আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জামান বলেন, চলতি মৌসুমে ২য় পর্যায়ে বারি-৩ জাতের সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষদিকে রোপণ করা বীজ থেকে ফুল ফোটার পর পরিপক্ক বীজ সংগ্রহ করা যাবে মে মাসে। বপন থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করতে হয়। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, প্রতি একর জমিতে সূর্যমুখী আবাদে বীজ প্রয়োজন হয় ৫ কেজি। এক বিঘা জমি চাষে কৃষকের খরচ হয় ৪-৫ হাজার টাকা। প্রতি শতকে ৪০-৪৫ কেজি বীজ পাওয়া যায়। রোগবালাই রোধে ও পরিপক্ক বীজ পেতে জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রয়োগ করতে হয় ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বরিক এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার। বারি-৩ জাতের সূর্যমুখী ফুল উচ্চতায় তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট হয়। গাছের কাণ্ড বারি-২ জাতের তুলনায় অনেক শক্ত। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেকটা সামাল দেয়া যায়।

গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. খলিলুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, অলটারনারিয়া হেলিয়াস্থি নামের ছত্রাকের আক্রমণে সূর্যমুখীর পাতা ঝলসানো রোগ, স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামের ছত্রাকের কারণে শেকড় পচা রোগ ও গাছের পাতায় বিছা পোকার আক্রমণ হতে পারে। এজন্য রোভরাল/ইভারোল ৫০ ডব্লিউপি ২ গ্রাম/লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। ফসল কাটার পর গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হয়। প্রোভেক্স/অটোস্টিন-২০০ দিয়ে বীজ শোধনের মাধ্যমে শেকড় পচা রোগের বিস্তার রোধ করা যায়। গাছে পোকার আক্রমণ হলে নাইট্রো ২০ ইসি ২ মিলিলিটার বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি ২ মিলিলিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত ক্ষতে ১০ দিন পর পর দুইবার জমিতে স্প্রে করতে হয়।

পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখী তেলে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৬ ও ওমেগা ৯, অলিক অ্যাসিড, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ও পানি বিদ্যমান। এই তেল কোলেস্টেরলমুক্ত, ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’ ও মিনারেল সমৃদ্ধ। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ। হাটহাজারী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, সূর্যমুখী সারা বছর চাষ করা যায়। পরিপক্ক পুষ্পমঞ্জুরি বা শাখার ব্যাস ১৫-১৮ সেন্টিমিটার হয়। বীজের রং কালো। প্রতিটি মাথায় বীজের সংখ্যা থাকে ৫০০-৬৫০টি। রবি মৌসুমে জীবনকাল ৯৫-১০০ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ৯০-৯৫ দিন পর্যন্ত হয়। সূর্যমুখী বীজ সারি করে নির্দিষ্ট দূরত্বে বুনতে হয়। গুণগত মান ও স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাওয়ার লক্ষ্যেই সূর্যমুখী চাষ করা হচ্ছে। এখানকার বীজ ভবিষ্যতে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা যাবে। ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে সূর্যমুখী দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম হবে।
উত্তরণ বার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ