শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
ঢাকা সময়: ১৯:০৩

বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর

বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর

আমিরুজ্জামান পলাশ :জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন : বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছার দুই জীবিত উত্তরাধিকারী। তাদের ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার সড়ক নং-৩২, বাড়ি নং-৬৭৭ (পুরাতন), বর্তমান বাড়ি নং-১০, সড়ক নং-১১ বাড়ির স্বত্ব বিগত ১১ এপ্রিল ১৯৯৪ইং তারিখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট দলিল ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ইং তারিখে যথারীতি সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে উক্ত বাড়ি ট্রাস্টের হাতে অর্পণ করেন।
১৪ই আগস্ট, ১৯৯৪ইং, ৩০শে শ্রাবণ, ১৪০১ বাংলা সালে বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ এবং দেশি-বিদেশি সম্মানিত বুদ্ধিজীবীদের এক বিরাট সমাবেশে এক ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের শুভ উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
এতদ্ব্যতীত ট্রাস্টের ৭ মে ১৯৯৫ইং তারিখের সভায় শহিদ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে একটি হাসপাতাল, মাতৃসদন এবং শিশু চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। (সূত্র : ট্রাস্টের গঠনতন্ত্র)।
মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্দেশ্য : ট্রাস্ট দলিলের চতুর্থ অনুচ্ছেদে লিপিবদ্ধ তথ্য অনুযায়ী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদ্দেশ্য নিম্নরূপ (সূত্র : ট্রাস্টের গঠনতন্ত্র) :
(ক) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মধারার পরিচয় সম্বলিত একটি স্মৃতি সংগ্রহালয় (জাদুঘর) গঠন, সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা;
(খ) বঙ্গবন্ধুর সম্মানে জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
(গ) ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৩২নং সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং বাড়িটিকে জাতীয় ঐতিহাসিক ‘শেখ মুজিব মেমোরিয়াল’ ইমারত হিসেবে ঘোষণা ও সেইরূপে ও চালনা করিবার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
(ঘ) বঙ্গবন্ধু, তাঁহার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী এবং তাঁহার পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করিয়া যাঁহারা স্বগৃহে ও কারাগারে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হইয়াছেন, তাঁহাদের সকল বক্তৃতা, আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র সংগ্রহ করা;
(ঙ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়বস্তু ও রচনা প্রভৃতি সংগ্রহ করা এবং প্রয়াত নেতার নামে একটি অধ্যয়ন কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা;
(চ) বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মকা- গবেষণা ও অধ্যয়ন বিশেষ করিয়া যে রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে পরিণতি লাভ করে, তাহার পরিচয় ফুটিয়া ওঠে এ সম্পর্কিত প্রামাণিক দলিলপত্র ও সংকলন সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা;
(ছ) গণ-আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও তাঁহার বিশ্বাস এবং রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে তাঁহার নেতৃত্ব সম্পর্কে অধ্যয়ন ও গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করা;
(জ) বঙ্গবন্ধুর উপর একটি গ্রন্থাগার স্থাপন ও চালনা করা এবং এই গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করার জন্য নির্বাচিত তথ্যগ্রন্থ ও আলোকচিত্র সংগ্রহ করা;
(ঝ) বাংলাদেশের ইতিহাস, দর্শন ও বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি এবং শান্তি, স্বাধীনতার জন্য জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষা সম্পর্কিত তথ্য ও জ্ঞানের প্রসার ঘটায় এমন গ্রন্থ, পুস্তিকা, পত্রিকা ও সাময়িকী প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা;
(ঞ) যে সকল রাজনৈতিক কর্মী জনসাধারণের স্বার্থরক্ষার জন্য নির্যাতিত এবং তাঁহাদের মৌলিক অধিকার, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য নির্যাতন ভোগ ও ত্যাগ শিকার করিয়াছেন, যাঁহারা কারাগারের যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছেন, রাজনৈতিক সংগ্রামের চূড়ান্ত পরিণতি মুক্তিযুদ্ধে যাহারা জীবন দিয়াছেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হইতে তাঁহাদের নাম সংগ্রহ করিয়া তালিকাভুক্ত করা এবং তাঁহাদের পরিবারের অভাবগ্রস্ত সদস্যদের সাহায্য করা;
(ট) ট্রাস্টের সামর্থ্য অনুযায়ী হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্র, ক্লিনিক ও এতিমখানা সংগঠন ও স্থাপন করা, নিরক্ষরতা দূরীকরণে প্রকল্প ও আন্দোলনে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা দান করা এবং সাক্ষরতার জন্য স্কুলগুলোতে সাহায্য করা;
(ঠ) দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের মধ্যে বৃত্তি বা অন্য কোনো সাহায্য দেওয়া;
(ড) বাংলাদেশের যে কোনো অংশে যে কোনো স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় বা অন্য ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদান দেওয়া।

বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবিষয়ক কথন : বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক বাড়িটি আজও তার স্মৃতি সংরক্ষণ করে চলেছে। ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবনটিকে স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করে ট্রাস্টের সভাপতি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট এই বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে উদ্বোধন করেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট দলিলের চতুর্থ অনুচ্ছেদের ধারা ‘ক’ ও ‘গ’ মোতাবেক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। ট্রাস্ট দলিলের চতুর্থ অনুচ্ছেদের ধারা হলোÑ (ক) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মধারার পরিচয় সংবলিত একটি স্মৃতি সংগ্রহালয় (জাদুঘর) গঠন, রক্ষণ ও পরিচালনা করা; এবং (গ) ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৩২নং সড়কের প্রয়াত নেতার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং বাড়িটিকে জাতীয় ‘ঐতিহাসিক শেখ মুজিব মেমোরিয়াল ইমরাত’ হিসেবে ঘোষণা ও সেরূপে সংরক্ষণ ও চালনা করিবার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা (জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের গঠনতন্ত্র)।
ট্রাস্ট দলিল অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার উদ্যোগে এই বঙ্গবন্ধু ভবনকে স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়। এ জন্য অধ্যাপক আ ফ ম সালাউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেনÑ অ্যাডভোকেট গাজীউল হক, স্থপতি মাযহারুল ইসলাম, শিল্পী হাশেম খান, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, কবি রবিউল হুসাইন এবং সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। অতঃপর ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট দেশি-বিদেশি সম্মানিত বুদ্ধিজীবী, বিদেশি কূটনৈতিক এবং বঙ্গবন্ধু আদর্শের অনুসারীদের একটি বিরাট সমাবেশে ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ভবনে এই জাদুঘরের শুভ উদ্বোধন হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা।
জাদুঘর রূপান্তরের সময় বড়িটি মহান নেতার জীবদ্দশায় যেরূপে ঠিল সেরূপে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে সাধ্যমতো। পর্যায়ক্রমিকভাবে এই জাদুঘরের পূর্ণতা পাবে। প্রথমত; বঙ্গবন্ধু ভবনের নিচতলার দুটি কক্ষ ও দোতলায় ৪টি কক্ষ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০০৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ভবনের তৃতীয়তলা দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এবং শেষ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ভবনের পিছনের ৬৮৬নং প্লটে সম্প্রসারিত জাদুঘরের জন্য ছয়তলা বিশিষ্ট একটি বর্ধিত ভবন নির্মিত হয়েছে। নবনির্মিত ভবনটিতে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের স্মৃতি নিদর্শন, আলোকচিত্র, সংবাদচিত্র ও ডকুমেন্ট সম্বলিত সম্প্রসারিত স্মৃতি জাদুঘর ২০১১ সালের ২০ আগস্ট শনিবার সকাল ১১টায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ রেহানা উদ্বোধন করেন।
ভূমিনকশা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ভবন (বঙ্গবন্ধুর মূল বাসভবন) পরিদর্শন শেষ করে দর্শক পুরাতন ভবন থেকে জাদুঘরের নবনির্মিত অংশের চতুর্থতলায় প্রবেশ করবে। দর্শক লিফটযোগে বা সিঁড়ি দিয়ে সরাসরি চতুর্থতলায় উঠে গিয়ে প্রদর্শনী পরিক্রমা শুরু করতে পারবেন। সম্প্রসারিত স্মৃতি জাদুঘরে প্রদর্শনী পরিকল্পনায় স্থায়ী প্রদর্শনীর পাশাপাশি গ্যালারি, লাইব্রেরি, অডিও ভিজ্যুয়াল গ্যালারি, সেমিনার হল, স্বল্পকালীন প্রদর্শনী গ্যালারি প্রভৃতি সন্নিবেশিত হয়েছে।
সম্প্রসারিত ষষ্ঠতলা ভবনে ২৬টি পর্বে বঙ্গবন্ধুর তথ্য ও সচিত্র ঘটনাবলি তুলে ধরা হয়েছে। পঞ্চমতলায় একটি লাইব্রেরি রয়েছে। জাতির পিতার শৈশব থেকে ১৯৭০-এর নির্বাচন পর্যন্ত চতুর্থতলায় তুলে ধরা হয়েছে। তৃতীয়তলায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে ১৯৭৩ সালের দেশ পুনর্গঠন পর্যন্ত সচিত্র তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। পারিবারিক জীবন থেকে জীবনাবসানের মর্মান্তিক ঘটনাবলি দ্বিতীয়তলায় সন্নিবেশিত হয়েছে। চতুর্থতলা থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে নামতে পারেন। ভবনের নিচতলায় সভা-সেমিনারের জন্য অডিটরিয়াম রয়েছে।
দর্শক সম্প্রসারিত জাদুঘর পরিদর্শন করে মূল ভবনের জাদুঘর পরিদর্শন করতে পারেন।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে ১৯৯৮ সালে জনাব আনোয়ারুল হক লিখেছিলেন, “এই জাদুঘরটি দিয়ে এই শতাব্দী জাদুঘর পরিক্রমায় গর্বিত ইতি টানা হলো বলে মন্তব্য করা যায়। বাংলাদেশের জাদুঘর পরিক্রমার অবশ্যই এটি এই শতাব্দী ইতিবাচক পরিসমাপ্তি।” (হক, ১৯৯৮ : ১৯)।
১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পঠিত বক্তব্যে অধ্যাপক মুতাসীর মামুন বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক সময় আর দল বা পরিবারের ছিলেন না, হয়ে গিয়েছিলে বাঙালির, বাংলাদেশের। এ-কথা মনে রেখেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ট্রাস্টিরা এ বাড়িটিকে দান করেছেন বাঙালির জন্য। এজন্য আমরা তাঁদের কাছে বিশেষ করে ট্রাস্টের সভাপতি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের জাতীয় বীরদের স্মৃতি সংরক্ষণ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করা জরুরি। তাহলে তাঁদের অবমাননার বিরুদ্ধে লড়াইটা জোরদার হয়। মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের মিথ্যা প্রচার রোখা যায়। আসুন নিরস্ত্র মানুষের বিজয়ের প্রতীক এ জাদুঘরটি দল-মত-নির্বিশেষ গড়ে তুলি। (মামুন, ১৯৯৯ : ১৫৯-১৬০)।
বঙ্গবন্ধু ভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার বক্তব্য, “এই বাড়িকে ঘিরে সবসময় আমাদের একটা চিন্তা ছিল যে, এমন একটা কিছু করব যা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। একমাত্র আমরা দুই বোন। থাকার মতো জায়গাও ছিল না, তারপরও বাড়িটি জাদুঘরের জন্য দিয়ে দিয়েছি। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর নানা প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ফেরার পর আমাদের কেউ বাড়ি ভাড়া দিত না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমাদের দেশে ফিরতে দেয়া হয়নি। দেশে ফেরার পরও আমাদের ধানমন্ডির বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। একরাত ছোট ফুপুর বাড়িতে, একদিন মেঝো ফুপুর বাড়িতে এইভাবে আমাকে থাকতে হতো। তারপরও আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল আমরা এটাকে স্মৃতি জাদুঘর করব এবং আমরা সেটা করেছি।” (টজখ-১)।
বাঙালি জাতীয়তাবাদকে জাতিসত্তায় রূপান্তরিত করে একটি জাতি রাষ্ট্র নির্মাণ এবং এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি নিয়মতান্ত্রিক, ধারাবাহিক দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার স্মৃতি বিজড়িত নিদর্শনাদি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সামাজিক অবক্ষয়, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের রাষ্ট্রীয় মসনদ দখলের ষড়যন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প আর ইতিহাস বিকৃতির ইন্দ্রজালে পতিত প্রজন্মকে ইতিহাসের মুখোমুখি দাঁড়াবার শক্তি, সাহস, শিক্ষা ও চেতনা যোগানদাতা হিসেবে দিগভ্রষ্ট জাতিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পারে সঠিক পথ দেখাতে।

তথ্যসূত্র
১. আহমেদ, সিরাজ উদ্দিন; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাস্কর প্রকাশনী, ২০০১
২. ইব্রাহীম, নীলিমা; বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জাগৃতি প্রকাশনী, ২০১০
৩. হাসিনা, শেখ; শেখ মুজিব আমার পিতা (স্মৃতি বড় মধুর, স্মৃতি বড় বেদনার), আগামী প্রকাশনী, ২০১৬
৪. হক, আনোয়ারুল; ঐতিহ্য-১৯৯৮
৫. রহমান, শেখ মুজিবুর; কারাগারের রোজনামচা, বাংলা একাডেমি, ২০১৭
৬. সুফী, মোতাহার হোসেন; ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক, অনন্যা প্রকাশনী, ২০১২
৭. মওদুদ, বেবী; মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেসা, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব স্মারক গ্রন্থ (সম্পাদিত), বৈশাখী প্রকাশনী, ২০১০
৮. মামুন, মুনতাসীর; বাংলাদেশে ফেরা, মজিবরের বাড়ি, ১৯৯৯
৯. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের গঠনতন্ত্র
১০. URL-1: https://bangabandhumuseum.org.bd/en/page/8/Building-History.

(২য় ও  শেষ পর্ব)

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK