বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২০:৫৫
ব্রেকিং নিউজ
আজকের ভাবনা

জয়তু শেখ হাসিনা

জয়তু শেখ হাসিনা

  • আনিস আহামেদ
বঙ্গবন্ধু কন্যা মুজিব দুহিতা আওয়ামী লীগ ইতিহাসে টানা ৪২ বছর সভাপতি, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৯ বছর প্রধানমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক বরেণ্য নেতা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ ১৭ মে। ১৯৮১ সালের এই দিন দীর্ঘ ছয় বছর বিদেশে নির্বাসনে থাকার পর, ক্ষমতাসীন ১৫ আগস্ট ঘাতক চক্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক খুনি জিয়ার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দেশ মাতৃকার জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দিতে ঢাকায় ফিরে আসেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু বিহিন বাংলাদেশের এক হতশ্রী রাজনৈতিক পরিবেশে এবং কাণ্ডারী বিহীন আওয়ামী লীগে কাণ্ডারী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন দেশের জন্য ছিলো ইশ্বরের অপার আর্শিবাদ। আমরা তখন ছাত্রলীগ তথা আওয়ামী লীগের সার্বক্ষণিক কর্মী। বঙ্গবন্ধু হত্যাত্তোর এক বিষণ্ণ পরিবেশে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ত হই ১৯৭৭ সালে। কোনো আশা-ভরসা আমাদের চালিকা শক্তি ছিলো না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, খুনিচক্রকে প্রতিরোধ এবং ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবীকে বুকে ধারণ করেই রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশের অগুনিত অকুতোভয় কিশোর, তরুণ, ছাত্র, যুবরা নতুন মুজিব যাত্রায় পথচলা শুরু করেছিলো। আওয়াম লীগের ১৫ আগস্ট পূর্ব নেতৃস্থানীয় হাজারো নেতাকর্মীরা তখন জেলে, হুলিয়া মাথায় কেউ প্রবাসে আর বর্ণচোরা সুবিধাভোগীরা নিজেদের আড়াল করে ফেলেছিলো। রাজাকার, আলবদর ও তাদের সাঙ্গতদের দৌরাত্বে দেশটা যেন মিনি পাকিস্তান তূল্য হয়ে উঠেছিলো। এরই মধ্যে দলে সিনিয়র নেতাদের আত্মকলহ, দলাদলি, কোটারী সৃষ্টির অপচেষ্টা ছিলো “গোদের ওপর বিষ ফোড়া তূল্য”। ১৫ আগস্টকে যারা স্বাগত জানিয়ে ছিলো বা খুনি চক্রের সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী ও আপোষকর্মী অনেকেই তখন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা। আমরা ছাত্র-যুব কর্মীরা এদের সরূপ জানতাম, ঘৃণা করতাম, ইনডোরে প্রতিবাদ করতাম, মন কিছুতেই এসব ভিতু নেতাদের নেতৃত্ব মানতে চাইতোনা।
ওবায়দুল কাদের তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি। ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সার্বক্ষণিক নেতাকর্মীরা সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সন্ধ্যায় জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদ অফিসে উপস্থিত থাকতাম। কারণ জহরুল হক হল ছিলো মুজিববাদী ছাত্রলীগের ঘাটি। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলো তরুনদের প্রত্যাশা ছিলো জোহরা তাজউদ্দীন সভাপতি হবেন কিন্তু সভাপতি হলেন বির্তকিত আব্দুল মালেক উকিল। নির্বাচিত হওয়ার পর সম্মেলনস্থলে নেতাকর্মীদের মুহুর্মুহু প্রতিবাদী শ্লোগানের মধ্যে মালেক উকিল বক্তিতা দিতে দাড়ালেন, আমরা ছিলাম শ্রোতাদের প্রথম সারিতে ফরাসে বসা। মালেক উকিল বারবার শেক মুজিব, শেখ মুজিব উচ্চারণ করছিলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু বলার জন্য তাগিদ দিচ্ছিলাম উনি বলে উঠলেন “মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশী” ওমনিতেই আমাদের পায়ের জুতো মঞ্চের দিকে ধাবিত হলো, তিনি পালিয়ে বাঁচলেন।
 
 
১৯৮১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের নতুন সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হলো। কে হবে নেতা এনিয়ে তুমুল ফ্যাসাদ। একক আস্থাবান সভাপতি হওয়ার মতোই কেউই ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আবেগ ও অন্ধ ভালোবাসাই ছিলো তখন সারা দেশের নেতাকর্মীদের চালিকা শক্তি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার জন্য আমাদের হৃদয়ে জমা হতো প্রতিনিয়ত বোবা কান্না। তাদের দুঃখময় জীবন-যাপনের কথা কিছুটা আমাদের কানে ভেসে আসতো, তাতে দরদ আরো উথলে ওঠতো। 
১৯৮০ সালের ডিসেম্বর অথবা ১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের সমর্থনকারী পত্রিকা সাপ্তাহিক মুক্তিবানীর চিঠিপত্র কলামে আমার একটি চিঠি চাপা হলো। এতে আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচনের প্রস্তাব উল্লেখ করি। যাতে করে আওয়ামী লীগ আবারো স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হতে পারে।
সেই মুক্তিবানী সংখ্যা নিয়ে জহরুল হক হল ছাত্র সংসদ অফিসে ছাত্রলীগ সভাপতি ওবায়দুল কাদের ভাইকে দেখিয়ে ছিলাম। আমার সাথে ছিলেন তখনকার ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ নেতা প্রয়াত জাফর ইকবাল বাবু এবং কবি আসলাম সানী। স্মৃতি জাগানিয়া কথাগুলো মানস্পটে ভেসে ওঠায় আজ লিখে ফেললাম। শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন-জয়তু শেখ হাসিনা।
 
লেখক : সাংবাদিক, দেশকর্মী। বার্তা সম্পাদক উত্তরণ
            তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ    
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK