বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৭:২০

অসময়ে চরের বুকে ২০ হাজার একর জমিতে সয়াবিন চাষ

অসময়ে চরের বুকে ২০ হাজার একর জমিতে সয়াবিন চাষ

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : মেঘনা নদীর বিশাল চরের বুকে ২০ হাজার একর জমিতে অসময়ে চাষ হয়েছে সয়াবিন। অসময়ে উৎপাদিত এ কাঁচা সয়াবিনের পুরোটাই প্রধান মৌসুমের বীজ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সয়াবিন সংগ্রহ, মাড়াইসহ ক্রয় বিক্রয়ে ব্যস্ত হাজারও কৃষক-কৃষাণী। কয়েকটি চর থেকে অসময়ে উৎপাদিত এ সয়াবিনের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার টন; যার বাজার মূল্য প্রায় ২শ' কোটি টাকা। এ কৃষিতে জড়িয়ে আছে চরের ভূমিহীন ৫ হাজার কৃষক। কাঁচা সয়াবিন দ্বিগুণ দামে বিক্রি সত্ত্বেও বাজারে তা প্রবল চাপ তৈরি করেছে প্রচলিত শুকনো বীজ ব্যবসার ওপর।

মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবংশী ইউপির চরাঞ্চলের কৃষক, ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্টরা এমন তথ্য জানান। রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউপির চর কাছিয়ার পানির ঘাট এবং মোল্লারহাটে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বীজ সয়াবিনের হাট বসে। গত প্রায় এক মাস যাবত প্রতি হাটে গড়ে প্রায় ৫শ' থেকে হাজার টন সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী রহমানসহ কয়েকজন।

ব্যবসায়ীরা জানান, এ উপজেলায় আরো ৫টি বাজারে বীজের হাট বসে। জেলার অন্য সয়াবিন উৎপাদনকারী উপজেলা, নোয়াখালী এবং চাঁদপুরের কৃষকরা সয়াবিন বীজের প্রধান ক্রেতা। মেঘনা নদীর চর কাছিয়া, কানিবগার চর, টুনুর চর, খাসিয়ার চর, চর ইন্দুরিয়ায় উৎপাদিত সয়াবিন এসকল বাজারে আসে। চরে গিয়ে দেখা গেছে, বাজার সংলগ্ন প্রতিটি নদীর ঘাটে মেশিনে মাড়াই করা সয়াবিন নৌকাবোঝাই করে ঘাট পার করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক। পরে আড়ৎদার ও পাইকারি বীজ বিক্রেতাদের হাত বদল হয়ে তা চলে যাচ্ছে কৃষকের মাঠে।

স্থানীয় চর গাছিয়ার মোল্লারহাঁট বাজার এবং পানিরঘাট বীজ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন শুকনো বীজ যেখানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১শ টাকায় সেখানে কাঁচা নতুন বীজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে২১০ টাকায়। গত প্রায় ১ মাস ক্রয় বিক্রয়ে ব্যস্ত কৃষক। রায়পুরের কানিবগার চরের কৃষক শাহজাহান পাইক জানান, কৃষক এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক সংরক্ষিত আগের বছরের শুকনো বীজের তুলনায় নতুন কাঁচা উৎপাদিত বীজ শতভাগ গজায়। সে কারণে দ্বিগুণ বেশি দামেও কৃষক কাঁচা সয়াবিন বীজ সংগ্রহ করছে।

কৃষক কাদের হাওলাদার জানান, মঙ্গলবার তিনি প্রতি কেজি দুইশ' টাকা দরে ৪শ' কেজি সয়াবিন বিক্রি করেছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, এ বছর চরে কয়েক দফা জলোচ্ছ্বাসের কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। তবুও ২ একর জমিতে তিনি ১ হাজার কেজি সয়াবিন পেয়েছেন। স্থানীয় কৃষকরা জানান, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস হচ্ছে সয়াবিন চাষের প্রধান মৌসুম। কিন্ত এ ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই মেঘনার চরের বালুময় মাটি থেকে সয়াবিন ঘরে তোলে কৃষক। কাঁচা সেই সয়াবিন সাথে সাথেই আবার মাটিতে বপন করেন কৃষক।

উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী দুই ইউনিয়নের মেঘনার নদীর চর কাছিয়া, কানিবগার চর, টুনুর চর, খাসিয়ার চর, চর ইন্দুরিয়া এবং সদর উপজেলার মেঘার চরে গত ৩-৪ বছর যাবত অসময়ে (বর্ষাকালে) সয়াবিন চাষ করছে চরের কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছেন, এ সকল চরে অসময়ে প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে সয়াবিন চাষ হয়। প্রচলিত সয়াবিনের তুলনায় বেশি দামের কারণে এর বাজার মূল্য প্রায় দুইশ' কোটি টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসির সিনিয়র পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শরীফ উল্লাহ জানান, বিগত বছরে প্রায় ৩শ' থেকে ৫শ' টন বীজ বিক্রয় করেছিল বিএডিসি। কিন্ত এবার মাত্র ৫ টন চাহিদা পেয়েছেন। বিএডিসির বীজ ১শ' টাকার নিচে বিক্রয় হলেও কৃষক তা কিনছে না বলেও জানান এই কর্মকর্তা। লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বেলাল হোসেন খান জানান, এ বছর লক্ষীপুর জেলায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ হবে। সেখানে২৭৩০ টন বীজ লাগবে। কিন্ত চরে উৎপাদিত বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) নোয়াখালী অঞ্চলের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ মহীউদ্দীন চৌধুরী বলেন, দেশের অন্তত ৩৩ জেলার ৭২টি উপজেলায় ৩-৪ লাখ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ হয়। যেখান থেকে বছরে ১০ লাখ টন সয়াবিনের উৎপাদন হয়। যার শতকরা ৬০ ভাগ সয়াবিন উৎপাদিত হয় লক্ষ্মীপুরে। অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে জানা যায়, সয়াবিন উৎপাদনে শীর্ষে থাকার কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের 'ব্র্যান্ডিং নাম' রাখে সয়াল্যান্ড। ওয়ার্ল্ড এটলাসের তথ্যমতে, বাংলাদেশ সয়াবিন উৎপাদনে বিশ্বের ৩৫তম দেশ। বাংলাদেশে সয়াবিন উৎপাদনে প্রধান জেলা লক্ষ্মীপুর।
উত্তরণ বার্তা/এআর


 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ