বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
ঢাকা সময়: ২২:৫৯
ব্রেকিং নিউজ

এ সপ্তাহেই দেশব্যাপী কালবৈশাখীর শঙ্কা, রবিশস্য তুলে ফেলার পরামর্শ

এ সপ্তাহেই দেশব্যাপী কালবৈশাখীর শঙ্কা, রবিশস্য তুলে ফেলার পরামর্শ

উত্তরণবার্তা  প্রতিবেদক : চোখ রাঙাচ্ছে কালবৈশাখী ঝড়। চৈত্রের প্রথম দিন আগামী ১৫ মার্চ থেকে ১৯ মার্চের মধ্যে দেশব্যাপী শক্তিশালী কালবৈশাখীর আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। এই সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে শক্তিশালী ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও তীব্র বজ্রপাত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে চলতি মাসে প্রবল কালবৈশাখীর আঘাতের পূর্বাভাস প্রদান করা হলেও নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। গতকাল এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হতে পারে। এরপর কয়েক দিন বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকতে পারে। আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুরর রহমান বলেন, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে দমকা বাতাস, ঝড়-বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 
আবহাওয়া পূর্বাভাসের আন্তর্জাতিক মডেলগুলো বিশ্লেষণ করে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, ১৫ মার্চ বিকেলের পর থেকে ১৬ মার্চ সকাল ৮টার মধ্যে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি। ১৬ মার্চ কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় প্রবাহিত হতে পারে। সম্ভাব্য এই ঝড় ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ১৭ ও ১৮ মার্চ কালবৈশাখী ঝড় বাংলাদেশে প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেশি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে। যা পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই দুই দিন ব্যাপক পরিমাণের বজ্রপাত হওয়ার শঙ্কা বেশি। এই দুই দিনে সকাল ৯টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলায় তীব্র বজ্রাপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে এই দুই দিন তীব্র বজ্রপাতের ঝুঁকি রয়েছে। ১৮ ও ১৯ মার্চ বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও তীব্র বজ্রপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ১৫ মার্চের মধ্য রাতের পর থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গের ওপর দিয়ে শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড়, শিলা বৃষ্টি ও তীব্র বজ্রপাত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
 
 
এদিকে বাংলাদেশে ধান গবেষণা ইনিস্টিউট (ব্রি) কালবৈশাখী-শিলাবৃষ্টি নিয়ে চাষিদের সতর্ক করেছে। ব্রি-এর সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দেশের কোনো কোনো জেলায় ১৫ মার্চ বুধবার থেকে কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও তীব্র বজ্রপাতের প্রবল শঙ্কা রয়েছে। আগামী ১৫-১৯ মার্চ দেশের অনেক জেলায় কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও তীব্র বজ্রপাতের প্রবল শঙ্কা রয়েছে। ১৫ মার্চ সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টি শুরু হয়ে ২১ মার্চ দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। এ সপ্তাহে দেশের কোনো কোনো জেলায় ১৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।
 
গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে আলু ও সরিষাসহ নানা রবিশস্যর ক্ষতি হতে পারে। ফসলহানি থেকে রক্ষা পেতে দেশের কৃষকদের জন্য পরামর্শ হলো—আলু ও সরিষা তুলে ফেলার মতো হলে তা মার্চের ১৪ তারিখে মধ্যে তুলে ফেলা উচিত। সেই সঙ্গে অন্যান্য কৃষি শস্যর জন্য স্থানীয় কৃষি অফিসার বা ব্লক সুপারভাইজারদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
 
তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে আবহাওয়াসম্পর্কিত অনেকগুলো সূচক যেমন : ব্যাপক শক্তিশালী জেট স্ট্রিম, মেসন-জুলিয়ান দোলন ও আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূলে আঘাত করা ঘূর্ণিঝড় ফ্রিডি ইত্যাদি ভারত উপমহাদেশের ওপর এক সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রায় সপ্তাহব্যাপী এই বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান জানান, মার্চ মাসে দেশে দুই-তিন দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা বা মাঝারি ধরনের এবং এক দিন তীব্র কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
 
৪ জেলায় মৌসুমের প্রথম তাপপ্রবাহ
 
বসন্তের প্রথম মাস সমাপ্ত না হতেই দেশের চার জেলায় শুরু হয়েছে মৃদু তাপপ্রবাহ। আগামী দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরো বাড়তে ও তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। একই সঙ্গে ক্রমেই ঝড়-বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার ও সিলেট জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল সীতাকুণ্ড ও রাঙ্গামাটিতে। এছাড়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সিলেটে ৩৬, কক্সবাজারের ৩৬, টেকনাফের ৩৬ দশমিক ৪ এবং বান্দরবানে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমের প্রথম তাপপ্রবাহ। আজ সোমবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK