বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৪:১৯
ব্রেকিং নিউজ

মা-ছেলে হত্যা : আসামিদের ফাঁসি চান স্বজনেরা

মা-ছেলে হত্যা : আসামিদের ফাঁসি চান স্বজনেরা

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : রাজধানীর কাকরাইলে পারিবারিক দ্বন্দ্বে ও সম্পত্তির লোভে নৃশংসভাবে খুন করা হয় মা ও ছেলেকে। সেদিন কিশোর ছেলের সামনেই মা শামসুন্নাহার করিমকে হত্যায় মেতে ওঠে দুর্বৃত্তরা। সেই দৃশ্য দেখে মাকে বাঁচাতে গিয়ে নির্মমভাবে ওই কিশোর শাওনও খুন হন। সেই ঘটনার তিন বছরের অধিক সময় পর আগামীকাল রোববার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম রায় ঘোষণা করবেন। 
 
সেই খুনের দায়ে কারাগারে রয়েছেন খুন হওয়া ওই নারীর স্বামী আব্দুল করিম, তার তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তা ও মুক্তার ভাই আল-আমিন ওরফে জনি। এদিকে রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি চান স্বজনেরা। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, আদালতে তারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন যে জোড়া খুনের সাথে  আসামিরা জড়িত। তাই তারা খুনীদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড চান। আর আসামিপক্ষের আইনজীবীর দাবি, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই তারা খালাস পাবেন।
 
মামলার বাদী আশরাফ আলী বলেন, সম্পত্তির জন্য আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখ লাগে যখন দেখি আমার বোনের দুই ছেলে মা ও ভাইকে হত্যার বিচার চায় না। যাইহোক, অনেক হুমকি-ধামকি পেরিয়ে মামলার রায়ের পর্যায়ে এসেছে। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি।
 
তিনি বলেন, আমার বোনের নামে সম্পত্তি ছিল। আব্দুল করিম সম্পত্তি লিখে নিতে চাপ দিয়ে আমার বোনকে খুন করেছে। এখন তার ছেলেরা আমার আম্মাকে চাপ দিচ্ছে সম্পত্তি লিখে দিতে। আম্মা বয়স্ক মানুষ। প্রতিদিন কান্নাকাটি করে মেয়ে ও নাতীর জন্য। মারা যাওয়ার আগে মেয়ে ও নাতী হত্যার বিচার দেখে যেতে চান।
 
আশরাফ আলী বলেন, আসামিদের অনেক টাকা আছে। আর আমরা গরীব মানুষ। এখন বিচারের আশায় চেয়ে আছি। একজন নামাজরত মহিলাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। আল্লাহর জিকির বন্ধ করে দেয়। যারা এ জঘন্য অপরাধ করেছে আমরা তাদের মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউট সাবিনা আক্তার দিপা বলেন, এটা একটা ট্রাজেডি মামলা। মাকে কোপাচ্ছে, ছেলে দাঁড়িয়ে থাকবে। মাকে বাঁচানোর জন্য শাওন দৌঁড়ে যায়। মায়ের সামনে আগে শাওনকে খুন করে। এরপর মাকে। আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করেছে। তিন জনেরই ফাঁসি চাই।
 
আসামিপক্ষের আইনজীবী রুহুল আমিন খান বলেন, আমরা সাক্ষীদের জেরা করেছি। এতে উঠে এসেছে, প্রকৃত আসামিদের আড়াল করে তাদের জড়িত করা হয়েছে। আসামিরা নিরাপরাধ। তারা ঘটনার সাথে জড়িত না। এখন আমরা চাই মামলাটি পুনরায় তদন্ত করা হোক। পুলিশ প্রকৃত আসামিদের খুঁজে বের করে আনবে। যেহেতু আসামিরা ঘটনার সাথে জড়িত না সেহেতু তাদের খালাস প্রত্যাশা করছি।
 
বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি। প্রকৃত আসামিদের আড়াল করা হয়েছে আসামিপক্ষের আইনজীবীর এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক আহাম্মদ বলেন, তদন্তে তো উঠে এসেছে কারা জড়িত। তারা জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ, বিচারও শুরু হয়েছে। আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করেছে।
 
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর কাকরাইলের পাইওনিয়ার গলির ৭৯/১ নম্বর বাসার গৃহকর্তা আব্দুল করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার করিম (৪৬) ও তার ছেলে শাওনকে (১৯) হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন রাতে শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আব্দুল করিম, করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তা ও মুক্তার ভাই জনিসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
 
হত্যাকাণ্ডের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা আবদুল করিম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুক্তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর ৩ নভেম্বর দিবাগত রাত ৩টায় গোপালগঞ্জ থেকে মামলার মূল আসামি জনিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩। ৫ নভেম্বর জনির ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড চলাকালিন ৮ নভেম্বর জনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে মুক্তাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
 
২০১৮ সালের ১৬ জুলাই ওই তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আলী হোসেন। গত ৩১ জানুয়ারি তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। গত ১ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। চার্জশিটভুক্ত ২২ সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। ১২ নভেম্বর তিন আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। গত ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেন।
উত্তরণ বার্তা/এআর
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ