শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
ঢাকা সময়: ১৩:০৭

বাংলাদেশ ২১ রানে হেরেছে

বাংলাদেশ ২১ রানে হেরেছে

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : ব্যাটারদের ব্যাটে বড় ইনিংস না থাকায়, হার দিয়ে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ। আজ আসরের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ২১ রানে হেরেছে পাকিস্তানের কাছে।
প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৬৭ রান করে পাকিস্তান। জবাবে ৮ উইকেটে ১৪৬ রান করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান ৫০ বলে অনবদ্য ৭৮ রান করে ম্যাচে বড় প্রভাব ফেলেন। তবে বাংলাদেশের কোন ব্যাটারই ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারেননি। শেষদিকে ইয়াসির আলির ২১ বলে অপরাজিত ৪২ রান শুধুমাত্র হারের ব্যবধানই কমিয়েছে।
ক্রাইস্টচার্চে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। টস করতে নামেন নুরুল হাসান সোহান। টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নেন সোহান।
পেসার তাসকিন আহমেদের করা ইনিংসের প্রথম ওভার থেকে ১ রান পায় পাকিস্তান। তবে মুস্তাফিজুর রহমানের করা পরের ওভার থেকে ২টি চারে ১০ রান নেন পাকিস্তানের ওপেনার-অধিনায়ক বাবর আজম। পরের ওভারে হাসান মাহমুদকেও ২টি চার মারেন বাবর। এরপর পাওয়ার-প্লের শেষ ৩ ওভারে ২টি চার ও ১টি ছক্কা পায় পাকিস্তান। এরমধ্যে চতুর্থ ওভারে সাব্বির রহমানের ভুলে রান আউটের হাত থেকে বাঁচেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান।
৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৪৩ রান তুলেন বাবর ও রিজওয়ান। সপ্তম ওভারে পাকিস্তানের স্কোর ৫০ স্পর্শ করে।
অষ্টম ওভারে প্রথমবারের মত বোলিং আক্রমনে আসেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথম ডেলিভারিতেই বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মিরাজ। সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে মুস্তাফিজকে ক্যাচ দেন বাবর। ৪টি চারে ২৫ বলে ২২ রান করে আউট হন  পাক দলনেতা। দলীয় ৫২ রানে বাবরের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন শান মাসুদ। দ্রুত গতিতে পাকিস্তানের রানা চাকা ঘুড়িয়েছেন মাসুদ। রিজওয়ান-মাসুদের জুটির প্রতিটি ওভারেই বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি আসায়, ১২ ওভার শেষে পাকিস্তান রান গিয়ে দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৯১ রানে।
১৩তম ওভারে রিজওয়ান-মাসুদের জমতে থাকা জুটি ভাঙ্গেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। লং-অন দিয়ে খেলতে গিয়ে ঠিক-ঠাক টাইমিং না হওয়ায় আউটসাইড-এডজে পয়েন্টে হাসানের তালুবন্দি হন মাসুদ। ২২ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২২ বলে ৩৩ রান করেন মাসুদ। রিজওয়ানের সাথে ৩৪ বলে ৪২ রানে জুটি গড়েছিলেন মাসুদ। এতে মাত্র ১০ রান অবদান ছিলো রিজওয়ানের।
চার নম্বরে নেমে সুবিধা করতে পারেননি হায়দার আলি। নিজের তৃতীয় ও ইনিংসের ১৫তম ওভারের শেষ বলে হায়দারকে ব্যক্তিগত ৬ রানে বিদায় করেন তাসকিন। হায়দারের পুল করা শটে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ইয়াসির আলি।  ওভারের চতুর্থ বলে রিজওয়ানের বিপক্ষে লেগ বিফোর আবেদনে রিভিউ নিয়ে সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ।
১৬তম ওভারের প্রথমে বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২১তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান রিজওয়ান। রান আউট থেকে বেঁচে গিয়ে ৩৮ বল খেলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় অর্ধশতক করেন রিজওয়ান। তার হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৬ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ছিলো ১১৬।  মুস্তাফিজের করা ১৭তম ওভারে ৩টি চারে ১৬ রান তুলেন রিজওয়ান ও ইফতেখার। ১৮তম ওভারে ইফতেখারকে ফেরালেও, ১২ রান দেন হাসান। ডিপ মিড উইকেটে আফিফকে ক্যাচ দিয়ে ১৩ রানে থামেন ইফতেখার।
নিজের প্রথম ৩ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছিলেন তাসকিন। দুর্দান্ত বোলিং করা তাসকিন ১৯তম ওভারে উইকেট নিলেও, দেন ১০ রান। আসিফ আলির পুল করা শটে, নিজেই ক্যাচ নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পান তাসকিন। ৪ রান করেন আসিফ।
শেষ ওভারে আক্রমনে ছিলেন মুস্তাফিজ। রিজওয়ানের চার ও মোহাম্মদ নাওয়াজের ছক্কায় এবার ১৩ রান দেন ফিজ। ফলে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৭ রান পায় পাকিস্তান। ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫০ বলে ৭৮ রানে অপরাজিত থাকেন টি-টোয়েন্টির এক নম্বর ব্যাটার রিজওয়ান। ৫ বলে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন নাওয়াজ। বোলিংয়ে সফল ছিলেন তাসকিন, নাসুম ও মিরাজ। ৪ ওভারে ২৫ রানে ২ উইকেট নেন তাসকিন। ৪ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট নেন নাসুম। আর ২ ওভারে ১২ রানে ১ উইকেট  শিকার ছিলো মিরাজের।
তবে ৪ ওভার করে বোলিং করে ব্যয়বহুল ছিলেন মুস্তাফিজ-হাসান। ফিজ ৪৮ রান দিয়েও উইকেটশূন্য, আর হাসান ৪২ রান খরচ করে নেন ১ উইকেট। ২ ওভারে ১৭ রান নেন স্পিনার মোসাদ্দেক। ১৬৮ রানের টার্গেটে সাবধানী শুরু ছিলো বাংলাদেশের দুই ওপেনার মিরাজ ও সাব্বির রহমান। প্রথম ৪ ওভারে ২৪ রান তুলেন তারা। এসময় সাব্বির ১টি চার ও মিরাজ ছক্কা মারেন।  পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ২৫ রানে ভাঙ্গে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন  ১১ বলে ১০ রান করে আউট হন  মিরাজ।
পরের ওভারে সাব্বিরকে শিকার করেন রউফ। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নেন রউফ। ১৮ বলে ১৪ রান করেন সাব্বির। ফলে পাওয়ার-প্লেতে ৩৮ রানে ২ ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ।
এরপর উইকেটে গিয়ে বাউন্ডারি দিয়ে রানে খাতা খোলেন লিটন দাস। অষ্টম ওভারে দারুন শটে ছক্কা মারেন আফিফ। তারপরও বাংলাদেশের রানের গতি ছিলো মন্থর। ১০ ওভার শেষে দলের স্কোর ৬৪। ১১তম ওভার থেকে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন লিটন-আফিফ। ১১ ও ১২তম ওভারে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০ রান করে তুলেন তারা।
১৩তম ওভারে তৃতীয় বলে লিটন ও চতুর্থ বলে মোসাদ্দেক ফিরলে, বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। স্পিনার নাওয়াজের বলে স্লগ সুইপে করে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দেন লিটন। আফিফের সাথে তৃতীয় উইকেটে ৪০ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। আর মোসাদ্দেককে লেগ বিফোর আউট করেন নাওয়াজ। পরপর দুই বলে উইকেট নিয়ে হ্যাট্টিকের সুযোগ পেয়েছিলেন নাওয়াজ। সেটি রুখে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সোহান।
১৪তম ওভারে উইকেট সেট ব্যাটার আফিফকে থামান দাহানি। মিড-উইকেটে ওয়াসিমের ক্যাচে আউট হন আফিফ। ১টি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ২৫ রান করেন আফিফ। আর পরের ওভারে নুরুলকে থামিয়ে বাংলাদেশকে হারের পথে ঠেলে  দেন স্পিনার শাদাব খান। ১৩ থেকে ১৫ ওভার পর্যন্ত ১৭ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফলে ১০১ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে তাদের।
৪ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ৩০ বলে ৬৭ রান প্রয়োজন পড়ে বাংলাদেশের। ১৬ ও ১৭তম ওভারে আসে মোট ৮ রান করে। এতে শেষ ৩ ওভারে ৫৯ রানের দরকার পড়ে টাইগাদের। আর সেখানেই ম্যাচের গতিপথ ঠিক হয়ে যায়। ইনিংসের শেষ দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে বাংলাদেশের হারের ব্যবধান কমিয়েছেন ইয়াসির। শেষ তিন ওভারে ৫টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি। শেষ ওভারে ৪২ রানের দরকারে ২০ রান তুলেন ইয়াসির। ২১ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় দলের সর্বোচ্চ অনবদ্য ৪২ রান করেন ইয়াসির। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৬ রান করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ওয়াসিম ২৪ রানে ৩টি ও নাওয়াজ ২৫ রানে ২টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন রিজওয়ান।
আগামী ৯ অক্টোবর টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।


উত্তরণবার্তা/ডেল

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK