উত্তরণবার্তা ডেস্ক : কম বুঝলে যতটা সমস্যা-বেশি বুঝলে আরও। নোমান হোসেন ইদানীং প্রগলভ হয়ে উঠেছেন। বাচালতার বায়ু কেন অনুপ্রবেশ করল, বুঝতে পারছি না। অন্যরা বিব্রত হলেও তার হেলদোল নেই। গতকাল নানির কাছে বেড়াতে এসেছেন তার সাবেকি আমলের বান্ধবী। কী একটা কথার সূত্রে তিনি বললেন, ‘কী বলব, আমার বাবুটা না...।’
মামা কথাটা ফ্লোরে পড়তে দিলেন না। বললেন, ‘আজকালকার বাবুদের কথা বলে লাভ কী! এরা সুযোগ পেলেই অকাণ্ড ঘটায়। ছোট্ট বাবুরা একেকটা বজ্জাত!’
নানির প্রতিক্রিয়া বোঝা না গেলেও মুরব্বির বিস্ফোরিত চোখ দেখে বোঝা গেল বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে নেননি। কথা থামলে তিনি বললেন, ‘এবার কথাটা শেষ করি?’
মামা বললেন, ‘অবশ্যই বলবেন। কেউ এখন অন্যের বাসায় চা-পান খেতে আসে না। কথা বলতে আসে, শুনতে চায়। আমি অবশ্য গান শুনতে যাই!’
‘আমার বয়স কি মা হওয়ার! বড় ছেলে বাবুর বয়স বিয়াল্লিশ। সে টেলিভিশনে অভিনয়ের সুযোগ খুঁজছে- এটা বলতে গিয়ে...।’
মামা বিজ্ঞজনোচিত ভাব নিয়ে বললেন, ‘অভিনয় করা ভালো। বাবুও সুন্দর নাম!’
নানির মুখ হাঁ হলো এবার। মাছির গুঞ্জন বাড়লে সম্বিত ফিরল, ‘আর তুই কী বলেছিস? আক্কেল-বুদ্ধির মাথা খেয়েছিস!’
‘বুদ্ধির দোকানে এখনই যাচ্ছি, মা।’
বেরিয়ে এসে মামা বললেন, ‘কী বেয়াক্কেল দেখেছিস, ছেলের নাম রাখে বাবু!’
সমর্থন জানিয়ে বলি, ‘মনে হয় উনার মেয়ে নাই!’
গলির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিকশা। রিকশাওয়ালার সামনে যাত্রী। তাদের অতিক্রমের সময় শুনতে পেলাম রিকশাচালক বলছেন, ‘এইবার যামু না। সময়ে কুলাইব না।’
আর যায় কোথায়! মামা বলে উঠলেন, ‘যাবে না মানে? সবসময় নেতিবাচক কথা বলতে বলতে তোমরা হ্যাঁ বলা ভুলে গেছ। অবশই তুমি যাবে। যাত্রী যেখানে যেতে চান, সেখানেই পৌঁছে দেবে।’
থতমত খেয়ে চালক বললেন, ‘আপনে কই যাইবেন?’
‘আমি কোথাও যাব না। তুমি এই ভদ্রলোককে পৌঁছে দিয়ে এসো।’
এবার হাসলেন তিনি, যাকে ধারণা করা হয়েছে যাত্রী। বললেন, ‘আমি কই যামু মামা, ওই যে আমার রিকশা!’
পেছনের চালকশূন্য রিকশার দিকে তাকিয়ে টনক নড়ল মামার। বললেন, ‘তাহলে অন্যের রিকশায় যেতে চাইলেন কেন!’
‘আরে মামা, আমগো বাড়ি এক এলাকায়। ওয় বাড়ি যাইব কি না জিগাইলাম। গেলে টাকা পাডাইতাম বউয়ের লাইগা।’
‘আরেকজনকে অনুরোধ করতে হবে কেন? বিকাশে পাঠান, নগদে দেন!’ ঠাটবাঁট বজায় রেখে আগে বাড়লেন মামা। নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছালে বললাম, ‘কথার বাজার এখন মন্দা। সব জায়গায় মুখ না দেওয়াই ভালো।’
‘তুই আমাকে জ্ঞান দিবি না। আমি ইতর প্রাণীর মতো কোথাও মুখ দিই না, পরামর্শ দিই!’
আমি পালটা কিছু বলতে যাব, পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া দুজন মানুষের উচ্চস্বরে থেমে গেলাম। একজন অন্যজনকে বলছেন, ‘সর্দি-জ্বরে এতটাই কাহিল অবস্থা...।’
মামা থামিয়ে দিলেন দুজনকেই, ‘ভাই শোনেন। জ্বর কোনো রোগ না, রোগের উপসর্গ মাত্র। সর্দি হচ্ছে রোগ নামের কলঙ্ক। ওষুধ খেলে জ্বর সারে এক সপ্তাহে, না খেলে সাতদিনে। সর্দি সারানোর জন্য সরিষার তেল, কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে খাবেন।’
পালটা প্রশ্ন এলো, ‘কাকে দিলেন ওষুধটা?’
দুজনের মুখ চেয়ে মামা বললেন, ‘আপনাদের মধ্যে যার সর্দি-জ্বর হয়েছে তাকে!’
‘আমরা নিজেদের কথা বলিনি। ছয় মাস আগে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলাম। বিয়ের আগের দিন সে সর্দি-জ্বরে পড়লে বিয়েটা পেছাতে হলো। আর আপনি কী বললেন!’
‘স্যরি। অচেনা মানুষের কথায় হাত গলানো আমার উচিত হয়নি!’
এবার আমার পালা, ‘একটু আগে আমি...!’
‘তুইও সর্দি-জ্বরের দাওয়াই দিয়েছিস নাকি?’
‘আমি ডাক্তার নাকি। বলেছি, বেশি কথা ভালো না!’
মাথার ওপরে বিজ্ঞাপন-টেলিভিশনে মডেলকন্যা বলে উঠলেন, ‘মতিন সাবান রূপে আনে মাধুর্য...!’
মামা বললেন, ‘ভুয়া তথ্য। আমিও ক্রিমটা মেখেছি। ত্বক একটুও ফর্সা হয়নি!’
উত্তরণবার্তা/এআর