শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
ঢাকা সময়: ০২:৩০
ব্রেকিং নিউজ

ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মাসে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির প্রত্যাশা সওজের

ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মাসে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির প্রত্যাশা সওজের

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : পরিবেশবান্ধব ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তরসহ এই জাতীয় সংস্থাগুলো মাসে ১০০ কিলোমিটার অতি টেকসই সড়ক নির্মাণ করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং কর্মকর্তাগণ প্রত্যাশা করছেন। এর ফলে নির্মাণ ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে। তারা বলেছে, ‘এক্রিলিক পলিমার’ একটি ন্যানোপ্রযুক্তি, যা রাস্তা নির্মাণ খরচ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কমাবে এবং অবকাঠামোর স্থায়িত্বের কারণে এর নুন্যতম রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের প্রয়োজন হবে।আলাপকালে, সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রাব্বি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে এটি বিশেষ করে রাস্তা নির্মাণের জন্য একটি বিস্ময়কর প্রযুক্তি হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে। ন্যানোপ্রযুক্তির পণ্য এক্রিলিক পলিমারের মাধ্যমে একমাসে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন। ‘এক্রিলিক পলিমার একটি পানিরোধী পণ্য যা প্রায় অবিনশ্বর এবং এর মাধ্যমে নির্মিত রাস্তার ভার বহন ক্ষমতা বাড়াবে অনেক বেশি। এটি আমাদের রাস্তাগুলোর স্থায়ীত্ব অন্তত ৫০ বছর বাড়িয়ে দেবে এবং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নূন্যতম পর্যায়ে নিয়ে আসবে,’  রাব্বি বলেন। রাব্বি তাঁর নেতৃত্বে ২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত মোট দশ মাসের প্রযুক্তির কার্যকারিতা ও সম্ভব্যতা নিয়ে বিস্তৃত গবেষণার উপর ভিত্তি করে এই মন্তব্য করেন।বেশকিছু অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের হাতের নাগালে চলে এসেছে এবং এটি কমখরচে এবং দ্রুততম সময়ে বাঁধ নির্মাণেও ব্যবহার করা যেতে পারে।   
 
সওজের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান বলেছেন, আমরা গবেষণার ফলাফল দাপ্তরিক ভাবে গ্রহণ করেছি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুনঃপরীক্ষার মাধ্যমে আমরা এক্রোলিক পলিমারের কার্যকারিতা যাচাই করবো। এরপর আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের সঙ্গে সভার আয়োজন করবো এবং সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণে যাব। রাব্বির গবেষণায় সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তাঁরা ২২ জেলার মাটি সংগ্রহ করেন এবং কে৩১ এক্রিলিক পলিমারের সঙ্গে বিভিন্ন অনুপাতে মিশ্রিত করে কক্্রবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী এলাকায় পরীক্ষা করেন। ‘আমরা ঐ এলাকায় এক্রিলিক পলিমার ব্যবহার করে সরজমিনে একটি পরীক্ষা করি। যেখানে এই প্রযুক্তির উচ্চ কার্যকারিতা প্রতিয়মান হয়,’ গবেষক দলের একজন সদস্য আবুল হোসেন উল্লেখ করেন। হোসেন, যিনি মাতারবাড়ী কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণ অংশের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত দলনেতা হিসেবে কর্মরত, বলেন তাঁরা ব্যয় নীরিক্ষাও করেছেন এবং তাঁরা দেখেছেন এটি অত্যন্ত বেশি ব্যয়সাশ্রয়ী । তিনি বলেন, এই ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সওজ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর অন্তত ২০ শতাংশ খরচ কমাতে সক্ষম হবে। রাব্বি বলেন এটি অত্যন্ত সস্তা, টেকসই এবং সহজ রাস্তা নির্মাণ পদ্ধতি এবং এক্রিলিক পলিমার মিশ্রণের জন্য বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উপযুক্ত। তিনি বলেন, এটি টেকশই ও সাশ্রয়ী নির্মাণ প্রযুক্তি এবং তিনি আরও উল্লেখ করেন তাঁর দলের সদস্যরা এটিকে ‘বাংলাদেশ সড়ক প্রযুক্তি’ নামে নামকরণের প্রস্তাব করেছেন।
 
এই প্রযুক্তির ব্যবহারের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়শিয়া এবং মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং ভারত ও ভুটানও সড়ক নির্মাণে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা শুরু করেছে। গবেষক দলের একজন সদস্য বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী সফলভাবে কাশ্মিরের রুক্ষ অঞ্চল লাদাখে কে৩১ এপিএস ব্রান্ডের এক্রিলিক পলিমার ব্যবহার করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী প্রথম এই পণ্য তৈরি করেন তাদের দেশের মিলিটারি এবং বিমানবাহিনীসহ অন্যত্র ব্যবহারের জন্য। গবেষক দলের অন্যান্য সদস্য হলেন মাতারবাড়ী প্রকল্পের সওজ অংশের ব্যবস্থাপক মো. শাহরিয়ার রুমি, উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. ইউনুস আলী, জয়েন্টবেঞ্চার মীর আক্তার-ডব্লিউএমসিজি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প ব্যবস্থাপক আবু সাদাত সাইম এবং বাংলাদেশের কে৩১ এক্সক্লুসিভ চ্যানেল পার্টনার ওয়ালীউল ইসলাম।প্রযুক্তি কৌশলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাব্বি বলেন, সনাতন নিয়মে ইট ও পাথর চিপ রাস্তার ভিত্তি এবং উপ-ভিত্তি তৈরিতে প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয় কিন্তু এক্রিলিক পলিমার ব্যবহারের কারণে এই প্রধান উপাদানের প্রয়োজন হবে না।“কোন ইট ও পাথরের প্রয়োজন হবে না। যার মানে এই নতুন প্রযুক্তি বাংলাদেশের ইট পুড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে বাংলাদেশের বায়ুর মান বাড়াবে,” তিনি উল্লেখ করেন।তিনি বলেন, নতুন কৌশলের অধীনে বালি এবং মাটির সাথে এক্রিলিক পলিমারের একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া রাস্তার ভিত্তি তৈরি করবে এবং এই পদ্ধতিতে উপাদানগুলির বন্ধন খুব দ্রুত হয়ে যায়।
 
"রাসায়নিক বিক্রিয়াটি একটি ন্যানো-পলিমারাইজড গ্রিড তৈরি করে যা একটি বিশেষ স্তর তৈরি করে এবং এই স্তরটির স্থিতিস্থাপক বৈশিষ্ট্যগুলি ক্ষয়রোধ করে, যা বিদ্যমান রাস্তাগুলোর একটি স্বাভাবিক সমস্যা," বলেন রাব্বি। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, মাটি এবং বালির সাথে মিশ্রিত করে এক্রিলিক পলিমার রাস্তার ভিত্তি (বেস এবং সাব-বেস) তৈরি করতে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়, যা প্রথাগত সড়ক অবকাঠামোর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, পাশাপাশি, রাস্তার কার্পেটিংকে শক্তিশালী করে।
 রাব্বি বলেন, এক্রিলিক পলিমার ব্যবহার দেশে সড়ক নির্মাণের জন্য আমদানি করা পাথরের চাহিদা ব্যাপকভাবে হ্রাস করবে এবং প্রায় ৭০ শতাংশ এই পদ্ধতির অধীনে রাস্তা নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণ দেশে পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, রাস্তার উপরিভাগের স্তর তৈরিতে ব্যাপকভাবে পাওয়া প্লাাস্টিকের পানির বোতল, পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিটুমিনের মিশ্রণে যা ১৬০ থেকে ১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মেশানো যেতে পারে।
"এটি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে," বলেন তিনি ।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK